পুরনো দিনে ফিরে গেলেন ক্রিকেট কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকার। ছোটবেলার কোচ রমাকান্ত আচরেকারের প্রশংসা করে তাঁকে 'অলরাউন্ডার' বলে অভিহিত করলেন মাস্টার ব্লাস্টার। এবং কোচিংয়ের জন্য 'ওয়ান স্টপ শপ' বলেও ডাকলেন তাঁকে। আসলে আচরেকার তাঁর সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন বলে দাবি তেন্ডুলকারের। সচিন বলেন যে আচরেকারের কোচিং কেবল মাঠে ক্রিকেট শেখানো নয়, সামগ্রিক বিকাশের দিকেও নিয়ে গিয়েছিল।
সম্প্রতি, মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে আচরেকারের জন্য একটি স্মারক উন্মোচন করার সময় সচিন তাঁর কোচ সম্পর্কে নিজের এমনই চিন্তাধারা শেয়ার করে নেন। এদিন, আচরেকারের স্মৃতিসৌধ উন্মোচন করে সচিনের দাবি, যিনি অন্যদের ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করার জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন, তার জন্য স্মৃতিসৌধটি পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করবে।
আচরেকারের সঙ্গে কোচিংয়ের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, তাঁর ট্রেনিং প্রাপ্ত খেলোয়াড়রা ম্যাচের সময় কখনই নার্ভাস বোধ করেননি। একই সময়ে তেন্ডুলকারের ভাই অজিত খেলতেন, কিন্তু আচরেকারের ছাত্র ছিলেন না। লক্ষ্য করতেন যে যারা স্যারের কোচিং পাননি, তারা ম্যাচের সময় সর্বদা টেনশনে থাকেন।
তেন্ডুলকার মারাঠি ভাষায় আরও বলেন, 'পরে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে স্যার আমাদের অনেক অনুশীলন ম্যাচ খেলতে বাধ্য করেছেন, যা আমাদের পারফরম্যান্সের মেজাজ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। আমিও আলাদা নই।' তাঁর দাবি, ক্রিকেট সবসময় স্যারের নির্দেশনায় খেলা হতো। তিনি আমাদের নেটও আনতে বলতেন। জিতুর বাবা স্যারকে ক্লাবের যন্ত্রপাতি রাখার জন্য একটা রুম দিয়েছিলেন, স্যার সেটা আমাকে ব্যবহারও করতে বলেছিলেন, তাই আমি সেখানে খেলতাম।
আচরণ শিখিয়েছেন আচরেকার
তেন্ডুলকারদের জিনিসের প্রশংসা করতে শিখিয়েছেন আচরেকার। খেলোয়াড়দের যে বন্ধন এবং বোঝাপড়া ছিল তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তেন্ডুলকারের তাই আরও দাবি, একজন বুদ্ধিমান খেলোয়াড় এই সব বোঝেন, যেমন উইকেটের যত্ন কীভাবে নিতে হয়, এবং আমরা এই কাজগুলো করে শিখেছি।
স্যার আচরেকারের শেখানোর পদ্ধতির কথা স্মরণ করে তেন্ডুলকার বলেন, স্যার ১৯৭০ এবং ৮০ এর দশকে বেসিক কোচিং করাতেন। খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাঁদের সরঞ্জামের প্রতি সম্মান তৈরির দিকে মনোনিবেশ করতেন। এ প্রসঙ্গে সচিন সবসময় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্যারের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দাবি রাখেন। সচিনের কথায়, 'আমি সবসময় খেলোয়াড়দের বলি, আপনি ব্যাটের কারণে মাঠে আছেন। তাই সম্মান করুন।'
সচিন আরও বলেন, স্যার তাঁর চোখ দিয়ে অনেক যোগাযোগ করতেন। আমরা তাঁর শরীরের ভাষা দিয়ে বলতে পারতাম তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। স্যার কখনই আমার সরাসরি প্রশংসা করেননি, কিন্তু ম্যাচের পরে, তিনি মাঝে মাঝে আমাকে বড়া পাও কেনার জন্য টাকা দিতেন। এভাবেই আমি জানতাম যে আমি অবশ্যই ভালো কিছু করেছি। সবসময় তাঁর কাছ থেকে অনেক স্নেহ পেয়েছি।
বাড়িতে সচিনদের ডেকে খাওয়াতেন আচরেকার
আর পাঁচটা খেলোয়াড়দের সঙ্গে সচিনকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতেন আচরেকার এবং তাঁর স্ত্রী। সচিনের কথায়, 'আমাদের প্রিয় ডায়েট ছিল লেবু এবং পেঁয়াজের, মটন কারি, পাও।'
সবশেষে তেন্ডুলকার বলেন, স্যার একটি জেনারেল স্টোরের মতো ছিলেন, যখন যা প্রয়োজন তাঁর কাছে সবকিছু ছিল এবং তিনি খুব যত্নশীলও ছিলেন। এমনকি যখন আমাদের ডাক্তারের কাছে যেতে হত, তখনও তিনি পরিস্থিতি সামলে নিতেন। তিনি সত্যিই একজন অলরাউন্ডার ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ক্রিকেট কোচ রমাকান্ত আচরেকার, অনেক ভারতীয় খেলোয়াড়কে ট্রেনিং দিয়েছিলেন। ১৯৯০ সালে, আচরেকারকে মর্যাদাপূর্ণ দ্রোণাচার্য পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল এবং ২০১০ সালে, তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রমাকান্ত আচরেকার।