প্রথম দিনেই রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দ্বিতীয় দিনে সেই প্রশ্নের ঝাঁঝ আরও বাড়ল। অ্যাডিলেড টেস্টে রোহিতের অধিনায়কত্ব নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন তোলা হল। যেভাবে বোলারদের ব্যবহার করেছেন বা ট্র্যাভিস হেডের বিরুদ্ধে যেরকমভাবে কৌশল সাজিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এমনকী প্রাক্তন নির্বাচক যতীন পরাঞ্জপে বলেন, ‘এই টেস্ট ম্যাচে ভারতীয় অধিনায়ককে কিছুটা ছন্দহীন মনে হচ্ছে। দলের ওকে নিজের সেরা জায়গায় চায়।’ আরও চাঁচাছোলা ভাষায় এক নেটিজেন বলেন, 'ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত রোহিত শর্মার। আমি এই কাজটার যোগ্য নন বলে স্বীকার করে নেওয়ায় কোনও লজ্জার ব্যাপার নেই। ভয়ংকর বাজে অধিনায়কত্ব রোহিতের।'
হেডের বিরুদ্ধে বারবার একই ভুল রোহিতের
আর রোহিতের অধিনায়কত্ব নিয়ে সবথেকে বেশি যেটা লেগেছে, সেটা হল হেডের বিরুদ্ধে তাঁর কৌশল। হেড যখন ইনিংস শুরু করেন, তখন শর্ট বলের বিরুদ্ধে যে নড়বড় করেন, সেটা সকলেই জানেন। অথচ হেডকে আজ কার্যত শর্ট বল করা হল না। হেড যখন ক্রিজে আসেন, তখন জসপ্রীত বুমরাহকে বেশি ব্যবহার করার সুযোগ ছিল না রোহিতের কাছে। কারণ ততক্ষণে নিজের ছোট স্পেল শেষ করে ফেলেছেন বুমরাহ। আর পুরো সিরিজের দিকে তাকিয়ে বুমরাহের উপরে বেশি চাপ দেওয়া যেত না।
আরও পড়ুন: IND vs AUS: হেডকে আউট করে সিরাজের আস্ফালন, অজি সমর্থকদের বিদ্রুপে অতিষ্ঠ ভারতীয় তারকা- ভিডিয়ো
সেই পরিস্থিতিতে রোহিত যখন হর্ষিত রানাকে আনলেন, তখন কার্যত কোনও শর্ট বল করতেই দেখা গেল না। হর্ষিত একেবারেই অনভিজ্ঞ বোলার। সেই পরিস্থিতিতে অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের আরও কিছুটা দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল। কিন্তু রোহিতকে দেখে মনে হচ্ছিল যে তিনি হেড এবং বাকি ব্যাটারদের ভুলের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁরা ভুল করলে উইকেট আসবে, সেই আশায় বসেছিলেন।
অশ্বিনকে বহু পরে আনলেন রোহিত
এমনকী রানা ঠিক ছন্দে নেই দেখেও রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে অনেক পরে আনেন রোহিত। অথচ গতবার অস্ট্রেলিয়ায় অশ্বিন যে দারুণ খেলেছিলেন, সেটার নেপথ্যে ছিল নিখুঁত পরিকল্পনা। অনেক ক্ষেত্রেই অশ্বিনকে নয়া বল দেওয়া হয়েছিল। আর তাতে সাফল্যও এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু রোহিত অশ্বিনকে টানা বল করতে দিলেন ৪৮ তম ওভার থেকে। সবমিলিয়ে বুমরাহ ছাড়া ভারতীয় বোলিং লাইন-আপকে যে নির্বিষ লেগেছে, সেটার পিছনে রোহিতের ক্যাপ্টেন্সিরও দোষ আছে বলে মনে করছেন অনেকে।
‘দিশাহীন অধিনায়কত্ব রোহিত শর্মার’
সেই পরিস্থিতিতে অনেকেই রোহিতকে সরিয়ে দিয়ে জসপ্রীত বুমরাহকে অধিনায়ক করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এক নেটিজেন বলেন, ‘টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মার মধ্যে বরাবরই এক স্ফুলিঙ্গের অভাব আছে। আমার কি মনে হয় না যে ভারতীয় টেস্ট দলের স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে জসপ্রীত বুমরাহের দায়িত্ব নেওয়া উচিত? অনেকে হয়ত বলবেন যে বুমরাহ সব ম্যাচে খেলবেন না। কিন্তু হ্যাঁ, উনি সব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলবেন। ওঁকে যখন বিশ্রাম দেওয়া হবে, তখন ঋষভ পন্তকে অধিনায়ক করা যেতে পারে।’
অপর একজন বলেন, ‘রোহিত শর্মার দিশাহীন অধিনায়কত্ব থেকে আমি বুঝতে পারছি যে সেনা সফরে ক্যাপ্টেন হিসেবে বিরাট কোহলি কত ভালো ছিলেন। নিজেদের সেরা টেস্ট ক্যাপ্টেনের সঙ্গে জঘন্যতম আচরণের জন্য বিসিসিআইয়ের এটা প্রাপ্য।’ অপর এক নেটিজেন বলেন, ‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ফাইনালের পরে আমরা কি কিছু শিখেছি? হেডকে সেই বল করা হচ্ছে, যে বলে উনি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে খেলেন।’
২০২৩ সাল থেকে হেডের পরিসংখ্যান
ভারতের বিরুদ্ধে: ১৯টি ইনিংসে ১,০০০-র বেশি রান করেছেন হেড। গড়ে ৬২-র মতো। চারটি অর্ধশতরান করেছেন। আর তিনটি শতরান করেছেন হেড। যে তালিকায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং অ্যাডিলেড টেস্টের শতরান রয়েছে।
অন্য দলের বিরুদ্ধে: ভারত ছাড়া অন্য দলের বিরুদ্ধে ৫৪টি ইনিংস খেলেছেন হেড। করেছেন মোট ১,৮৭৫ রান। গড় ৩৬.৮। করেছেন ১০টি অর্ধশতরান। আর তিনটি শতরান হাঁকিয়েছেন।