দশ মাসের হরমোন থেরাপির পরে জীবনে নয়া পথচলা শুরু করেছেন সঞ্জয় বাঙ্গারের সন্তান। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসির নিয়মের জেরে দেশের হয়ে তাঁর যে খেলার স্বপ্ন ছিল, সেটা কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে। কারণ রূপান্তরকামী খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে আইসিসি। যে নিয়ম নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ বাঙ্গারের সন্তান আনায়া। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে কেন রূপান্তরকারী মহিলাদের জন্য ক্রিকেটে ঠিকঠাক নিয়ম নেই? কেন তাঁকে ‘সিস্টেমের’ বলি হতে হবে? কেন ‘সিস্টেমের’ কারণে নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিতে হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আনায়া।
ক্রিকেট ‘ভালোবাসা, স্বপ্ন, আকাঙ্খা ও ভবিষ্যৎ’ হয়ে উঠেছিল
গত অগস্টে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্য়াকাউন্টের একটি পোস্টে আনায়া জানান, ছোট থেকেই তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ক্রিকেট। বাবা যখন খেলোয়াড় হিসেবে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতেন বা কোচ হিসেবে ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকতেন, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সেটা দেখতেন। বাবার মতোই দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যে ক্রিকেট তাঁর ‘ভালোবাসা, স্বপ্ন, আকাঙ্খা এবং ভবিষ্যৎ’ হয়ে উঠেছিল। দেশের হয়ে খেলার জন্য নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছিলেন বলেও জানান আনায়া।
কিন্তু সেই ভালোবাসার ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে যে কোনওদিন ভাবতে হবে, সেই ভয়টা জীবনে এক মুহূর্তের জন্যও আসেনি বলে জানান বাঙ্গারের সন্তান। কিন্তু আইসিসির নিয়মের কারণে এখন পরিস্থিতিটা সেরকমই হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আনায়া জানিয়েছেন, হরমোন থেরাপির পরে তাঁর শরীরে আমূল পরিবর্তন এসেছিল। যে ক্রিকেটকে এতটা ভালোবাসেন, সেটা ক্রমশ তাঁর নাগালের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করেন আনায়া।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা একেবারে কম, দাবি আনায়ার
তবে সবথেকে বেশি যে বিষয়টা কষ্ট দিচ্ছে আনায়াকে, সেটা হল নিয়মের গেরো। তিনি জানান, যদি প্রতিভা কম হত, খেলতে না পারতেন, তাহলে ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাওয়ার বিষয়টা মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু তাঁকে ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে ‘সিস্টেম’। তাঁর শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা একেবারে কম। একজন রূপান্তরকারী মহিলার দেহে যতটা কম টেস্টোস্টেরন থাকা যায়, ততটা কমই আছে। তারপরও পেশাদারি ক্রিকেটে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে।
‘রূপান্তরকারী মহিলাদেরও অধিকার আছে’
বাঙ্গারের সন্তান আনায়ার কথায়, ‘আমাদের এমন নীতি দরকার, যেটার কারণে আমাদের পরিচিতি এবং ভালোবাসার মধ্যে থেকে কোনও একটা বেছে না নিতে হয়। রূপান্তরকারী মহিলাদেরও লড়াই করা, খেলা এবং স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে।’