শুক্রবার আইপিএলের কোয়ালিফায়ার ২-তে রাজস্থানকে হারানোর প্রধান কাণ্ডারি বাংলার হয়ে রঞ্জি খেলা শাহবাজ আহমেদ। যেই সময় তাঁকে বোলিংয়ে আনা হয়েছিল, সেই সময় ম্যাচ সানরাইজার্সের হাতের মুঠোয় ছিল না। কিন্তু তাঁর চার ওভারের স্পেলই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়।ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে তাঁকে দলে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সানরাইজার্স কোচ ড্যানিয়েল ভেত্তোরি। শাহবাজের বাঁহাতি স্পিন বেশ ভালো লেগেছিল কিউয়িদের এই প্রাক্তন অধিনায়কের। প্যাট কামিন্স তাঁকে মোক্ষম সময় বল হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কঠিন পরিস্থিতিতে পরপর ব্রেক থ্রু দিয়ে ম্যাচের সেরা হন তিনি। বল করতে এসেই অনবদ্য ছন্দে থাকা যশস্বী জয়সওয়ালের উইকেট তুলে নেন শাহবাজ, এরপর হরিয়ানার এই ছেলে আরও দুটি উইকেট নিলেও HT বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে কিন্তু জানালেন ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট তাঁর নেওয়া প্রথম উইকেটটাই।
আরও পড়ুন-IPL 2024-চল বন্ধু…আরও একবার লড়াই হয়ে যাক...ম্যাচের আগে কে দিয়েছিলেন বিরাটকে এমন বার্তা?
কোয়ালিফায়ার ২-এর ম্যাচের সেরার পুরস্কার পাওয়া শাহবাজের সঙ্গে ফাইনালের আগে কথা বলল HT বাংলা, সেখানেই তিনি প্রশংসা করলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের।
প্রশ্ন- কোয়ালিফায়ারের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সেরা ক্রিকেটার হওয়ার অনুভূতি কেমন?
শাহবাজ আহমেদ- খুব ভালো লাগছে, সেমিফাইনালে দলের হয়ে পারফর্ম করে দলকে জেতাতে পেরে, তবে আসল মজা আসবে ফাইনাল জিতলে।
প্রশ্ন-চিপকের উইকেট কী টার্নার বলেই সুবিধা হয়েছে তোমার?
শাহবাজ আহমেদ- চিপকের উইকেট স্পিনারকে একটু সাহায্য করে। সত্যি একটু উইকেটে হেল্প পেয়েছি, সেই জন্য ব্যাটারদের ওপর চাপ তৈরি করতে পেরেছি, ওদেরও সমস্যা হয়েছিল পিচের টার্নের জন্য।
প্রশ্ন- বোলিংয়ে অভিশেক শর্মা কী আউট অব দ্য সিলেবাস এল?
শাহবাজ আহমেদ- আগেও ভালো বল করত, এবারে খুব বেশি বল করেনি। ঠিক সময় সুযোগ কাজে লাগিয়েছে, দরকারের সময় উইকেট এনেছে। আগেও যেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভালো বল করেছে তাই আউট অব দ্য সিলেবাস বলা যাবে না।
প্রশ্ন- গত ম্যাচে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করেছ, ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট কোনটা?
শাহবাজ আহমেদ- প্রথম ইনিংসের পর আমরা জানতাম ১০-১৫ রান কম হয়েছিল, পাওয়ারপ্লের পর সেট হয়ে যাওয়া যশস্বী জয়সওয়ালের উইকেটটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সঙ্গে রিয়াগ পরাগ রানের মধ্যে ছিল, দুজনের তাড়তাড়ি আউট হওয়াটাও ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট
প্রশ্ন- স্পিন আর ব্যাটিং বেশ ভালো ফাইনালের দুই দলের, কেমন ভাবে দেখছ?
শাহবাজ আহমেদ- ফাইনাল সব সময়ই ভালো হয়, দুটি দলই ফর্মে আছে, ভালো খেলছে প্রতিযোগিতায়। আশা করছি কাল জিতব।
প্রশ্ন- অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের থেকে কী শিখতে পেরেছ?
শাহবাজ আহমেদ- সবসময়ই খুব রিল্যাক্স থাকে। মাঠে আর মাঠের বাইরে এত ভালো পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, যেটা খুব ভালো। প্রত্যেক সিদ্ধান্তে একটা আত্মবিশ্বাস থাকে, সেটা বোলিং পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে হোক বা অন্য সিদ্ধান্ত। আর বোলারদেরও খুব পাশে দাঁড়ায়। কঠিন সময়ও বোলারদের খুব ব্যাক করে।
প্রশ্ন- এবারের আইপিএলে তোমার সেরা মূহূর্ত?
শাহবাজ আহমেদ- ২৮৭ রানের ইনিংসটা বেশ ভালো মূহূর্তে, রাজস্থানের বিরুদ্ধে এর আগে একটা ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আর কোয়ালিফায়ার ম্যাচও খুব ভালো মূহূর্ত। তাই একটা নয়, অনেকগুলো বিশেষ মূহূর্ত আছে।
আরও পড়ুন-‘একটা কথাও বলবে না’, বন্ধুকে নিয়ে লাগাতার অপমানের পাল্টা গাভাসকরকে তেড়ে উত্তর এবির
প্রশ্ন- বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে ফাইনাল খেলতে নামছ, বেঙ্গল প্লেয়ার অতটা সুযোগ পায় না, কতটা গর্বের?
শাহবাজ আহমেদ- বাংলার প্লেয়াররা খেলে না তেমন নয়, হয়ত সংখ্যায় কম রয়েছে। তবে আমরা রঞ্জি ট্রফিতে ব্যাক টু ব্যাক ফাইনাল খেলেছি। অবশ্যই ফাইনাল জিততে পারলে আমার রাজ্য সংস্থার জন্য গর্বের মূহূর্ত হবে।
প্রশ্ন- ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার রুল অনেকের পছন্দ নয়, তোমার কি মতামত?
শাহবাজ আহমেদ- দেখুন এনটারটেনমেন্ট হিসেবে দেখলে খুব ভালো, একজন ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া যায়, তবে ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে ব্যাটাররা বেশি সুবিধা পায়। বোলারদের সমস্যা হয় বোলিং করতে। ৮ নম্বর, ৯ নম্বর পর্যন্ত ব্যাটার খেলাতে পারে দলগুলি। ফলে ব্যাটাররা সুবিধা পায়, ওয়ার্ল্ড কাপে অবশ্য এই নিয়ম নেই ।
প্রশ্ন-এত রান উঠছে, উইকেট ফ্ল্যাট নাকি ব্য়াটাররা উন্নতি করেছে?
শাহবাজ আহমেদ- উইকেট এরকমই থাকে অন্যবার, ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের জন্য ব্যাটাররা আরও আগ্রাসী হয়ে গেছে। ব্যাটারদের মানসিকতাও এখন বদলেছে।
প্রশ্ন- ফাইনাল ম্যাচে আন্ডারডগ না ফেভারিট?
শাহবাজ আহমেদ- আমরা তৈরি আছি, আমি আশা করছি ফাইনাল জিতব, বাকি ম্যাচেই দেখা যাবে
প্রশ্ন- বিরাটের থেকে ব্যাট পেয়ে কেমন লেগেছিল?
শাহবাজ আহমেদ- আগেও বিরাটভাই ব্যাট দিয়েছিল, আমি ৪ বছর ওনার সঙ্গে খেলেছি, খুব ভালো লেগেছে। ওনাকে খুব সম্মান করি।
প্রশ্ন- দলের মধ্যে সব থেকে বেশি মোটিভেট করে কে?
শাহবাজ আহমেদ- ড্যানিয়েল ভেত্তোরি অনেক মোটিভেট করে, অধিনায়কও মোটিভেট করে। সঙ্গে মুরলিধরণ স্যারও আছে। তবে এবারের আইপিএলটা আমাদের ভালো গেছে, সেটাও একটা মোটিভেশন।
এবারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে ২০৭ রান করেছেন শাহবাজ, নিয়েছেন ৬ উইকেট। তবে আসল সময়ই জ্বলে উঠেছেন তিনি। অবশ্য সিএবি এবং বাংলা দলের কোচ - সতীর্থদের কাছে বিষয়টা উভয়সঙ্কটের মতো। কারণ একদিকে কলকাতার নাইট রাইডার্স, অন্যদিকে বাংলার হয়ে রঞ্জি খেলা শাহবাজ, কাকে তাঁরা সমর্থন করবেন সেই নিয়ে কিঞ্চিত চিন্তা থেকে যেতেই পারে। নাইট শিবির অবশ্য চাইবে শাহবাজের পাশাপাশি কামিন্স, হেড, ক্লাসেন, অভিষেকদের নীরব রেখেই কলকাতায় তৃতীয়বার ট্রফি আনতে।