প্রথমত, বরোদাকে দেড়শো রানের কমে বেঁধে রাখার সুযোগ পেয়েও তাদের লড়াইয়ের রসদ সংগ্রহ করে নিতে দেয় বাংলা। পরে অবিবেচকের মতো বড় শট খেলার চেষ্টায় একের পর এক ব্যাটারের উইকেট দিয়ে আসার মাশুল দিতে হয় বাংলাকে।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, রান তাড়া করতে নেমে শাহবাজ আহমেদ যখন একা টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাংলাকে, বাকিরা কেউই তাঁকে যথাযথ সঙ্গ দিতে পারেননি। যার ফলে বরোদার কাছে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে হারতে হয় বাংলাকে। টুর্নামেন্টে আগাগোড়া ভালো খেলা সত্ত্বেও শেষ আটের হার্ডলে আটকে যান সুদীপ ঘরামিরা।
চিন্নাস্বামীতে টস জিতে বরোদাকে শুরুতে ব্যাট করতে পাঠায় বাংলা। হার্দিক ও ক্রুণাল পান্ডিয়া ব্যাট হাতে সফল হননি। তা সত্ত্বেও বরোদা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ১৭২ রানের বড়সড় ইনিংস গড়ে তোলে। এক্ষেত্রে দুই ওপেনার ৯০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে বরোদাকে লড়াইয়ের রসদ এনে দেন।
ইনিংসের শুরুর দিকে ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি বাংলার বোলারদের। কেননা বাংলার ফিল্ডাররা একাধিক ক্যাচ মিস করেন। ব্যাটের কানায় লেগে চার-ছয় হয় বেশ কয়েকটি। বরোদা পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়েই ৫০ রান তুলে ফেলে। শেষমেশ দলগত ৯০ রানের মাথাতেই বরোদার দুই ওপেনার অভিমন্যুসিং রাজপুত ও শাশ্বত রাওয়াত আউট হয়ে বসেন।
২ বার জীবনদান পেয়ে অভিমন্যুসিং ৩৪ বলে ৩৭ রান করেন। তিনি ৫টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন। শাশ্বত ২৬ বলে ৪০ রান করে মাঠ ছাড়েন। তিনি ১টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন। বরোদা শক্ত ভিতে বসে পড়তেই হার্দিক পান্ডিয়া নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারের উপরের দিকে তুলে নিয়ে আসেন। দীর্ঘদিন পরে পান্ডিয়া ফের তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন। চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন ক্রুণাল পান্ডিয়া।
হার্দিক ১টি বাউন্ডারির সাহায্যে ১১ বলে ১০ রান করে কণিষ্ক শেঠের বলে ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়ের হাতে ধরা পড়েন। ক্রুণাল ১টি বাউন্ডারির সাহায্যে ১১ বলে ৭ রান করে প্রদীপ্ত প্রামানিকের বলে কণিষ্কের হাতে ধরা দেন। শিবালিক শর্মা ১৭ বলে ২৪ রান করেন। মারেন ১টি চার ও ২টি ছক্কা। ১১ বলে ১৭ রান করেন ভানু পানিয়া। তিনি ২টি ছক্কা মারেন। ৭ বলে ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন বিষ্ণু সোলাঙ্কি। তিনি ৩টি চার মারেন।
বাংলার হয়ে মহম্মদ শামি ৪ ওভারে ৪৩ রান খরচ করে ২টি উইকেট তুলে নেন। ৪ ওভারে ৩৯ রান খরচ করে ২টি উইকেট নেন কণিষ্ক শেঠ। ২ ওভারে ৬ রান খরচ করে ২টি উইকেট নেন প্রদীপ্ত প্রামানিক। ৪ ওভারে ২৪ রান খরচ করে ১টি উইকেট নেন সক্ষম চৌধুরী।
পালটা ব্যাট করতে নেম বাংলা ১৮ ওভারে ১৩১ রানে অল-আউট হয়ে যায়। ৪১ রানে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠে বরোদা। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় বাংলাকে।
বাংলার ইনিংসের শুরুটা মন্দ হয়নি। তারা ৩ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়ে ২৮ রান তুলে ফেলে। তবে চতুর্থ ওভারে লুকমান মেরিওয়ালার বলে বাংলার তিনজন ব্যাটার সাজঘরে ফেরেন। করণ লাল ১টি বাউন্ডারির সাহায্যে ১০ বলে ৬ রান করে বোল্ড হন। তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে বল গিয়ে লাগে স্টাম্পে। ২ বলে ২ রান করে এলবিডব্লিউ হন ক্যাপ্টেন সুদীপ ঘরামি। ২ বল খেলে খাতা খোলার আগেই কট অ্যান্ড বোল্ড হন ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়।
চতুর্থ ওভারে আউট হন অভিষেক পোড়েল। তিনি ৩টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ১৩ বলে ২২ রান করে মাঠ ছাড়েন। একসময় মাত্র ৮ বলের মধ্যে ৪টি উইকেট হারায় বাংলা। যদিও তার পরেও পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে ৪ উইকেটে ৫৫ রান সংগ্রহ করে নেয় বাংলা। তারা ১০০ রানের গণ্ডি টপকায় ১২.১ ওভারে। তবে ক্রমাগত উইকেট হারাতে থাকায় পার্টনারশিপ গড়া সম্ভব হয়নি বাংলার ব্যাটারদের পক্ষে।
শাহবাজ ৩৬ বলে ৫৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে আউট হন। তিনি ৩টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন। ১৮ বলে ২৯ রান করেন ঋত্বিক রায়চৌধুরী। তিনি ৩টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন। প্রদীপ্ত প্রামানিক ৩, সক্ষম ৭ ও কণিষ্ক শেষ ৫ রানের যোগদান রাখেন। খাতা খুলতে পারেননি মহম্মদ শামি ও সায়ন ঘোষ।
বরোদার হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া, লুকমান মেরিওয়ালা ও অতীত শেঠ। ১টি উইকেট নেন অভিমন্যুসিং রাজপুত। ম্যাচের সেরা হন লুকমান।