ভারতীয় ক্রিকেটে নির্বাচনে বদল আনছেন গৌতম গম্ভীর। ভারতীয় ক্রিকেটে খেলোয়াড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক নতুন ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশেষ করে গৌতম গম্ভীর ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর থেকেই এমনটা দেখা যাচ্ছে। একজন কোচের সবচেয়ে বড় প্রভাব দল নির্বাচনের সময় বোঝা যায়। কোন খেলোয়াড়রা স্কোয়াডে জায়গা পাবেন, কারা একাদশে সুযোগ পাবেন, সবটাই কোচের মতামতের উপর গুরুত্ব পায়।
‘কুলচা’ যুগ এবং ভারতের ভুল সিদ্ধান্ত
২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারের পর ভারতীয় দল তাদের স্পিন বিভাগে বড় পরিবর্তন আনে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার পরিবর্তে যুজবেন্দ্র চাহাল ও কুলদীপ যাদবকে আনা হয়, যা ভারতের ওয়ানডে ক্রিকেটকে নতুন দিক দেখায়। এই দুইজনের যুগলবন্দি এতটাই সফল ছিল যে, তারা ‘কুলচা’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
এই স্পিন জুটি ভারতকে ৬০ ওয়ানডের মধ্যে ৪৩টি ম্যাচে জয় এনে দেয়, কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরাজয়ের পর এক ধরণের আতঙ্ক থেকেই ভারত ‘কুলচা’ জুটিকে ভেঙে দেয়। এটি ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ভুল।
আরও পড়ুন… MI-এ অধিনায়ক হার্দিক, ভারতীয় দলে ভাইস ক্যাপ্টেনও নয়, জটিল সমীকরণ নিয়ে অকপট সূর্য
মিডল ওভার এবং ‘কুলচা’ ফ্যাক্টর
৫০ ওভারের ক্রিকেটে মিডল ওভারে ম্যাচের রঙ বদলে যায়। অনেক সময় এই পর্যায়টি খুব বেশি উত্তেজনাপূর্ণ হয় না, আর দুই দলই যেন আক্রমণ থেকে দূরে থাকে। হর্ষ ভোগলে একে ‘নন-অ্যাগ্রেশন প্যাক্ট’ বলেছেন, যেখানে দুই দলই খুব বেশি আক্রমণাত্মক হতে চায় না, অথচ এই সময়টাই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। এখানেই ‘কুলচা’ জুটির গুরুত্ব ছিল। তারা প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের শতরানের সম্ভাবনা নষ্ট করে দিতেন, ফলে ভারতের ডেথ ওভার বোলারদের জন্য কাজ সহজ হয়ে যেত।
বিশেষজ্ঞ স্পিনারের অভাব, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজে কেবল কুলদীপ যাদবই আছেন, যিনি প্রকৃত উইকেট-টেকার। অন্য স্পিনাররা মূলত ইকোনমি রেট ধরে রাখার জন্য দলে আছেন এবং তারা ব্যাটিংও করতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ায় ভারত বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে অলরাউন্ডারদের উপর বেশি জোর দিয়েছিল, যারা ব্যাট ও বল দুটোই পারেন, কিন্তু কোনওটিতেই শ্রেষ্ঠ নন। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে সাধারণ খেলোয়াড়রা পারফর্ম করতে পারেন না, বরং বিশেষজ্ঞদেরই প্রয়োজন হয়।
এখন ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট জাদেজা, অক্ষর ও ওয়াশিংটন সুন্দরকে তাদের স্পিন বিকল্প হিসেবে রেখেছে, এবং তাদের কাছ থেকে মূলত ইকোনমিক ওভারই চাইছে। কিন্তু বর্তমান ব্যাটিং-বান্ধব পিচে শুধু ইকোনমি ধরে রাখা কঠিন, বরং রান নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হচ্ছে উইকেট তোলা।
ভারতের দুর্বলতার দিক ও পেস বোলিং বিভাগ
শামি ও বুমরাহের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ভারতের একমাত্র সত্যিকারের উইকেট-টেকার কুলদীপ, যিনি নিজেও চোট থেকে ফিরছেন। ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিরুদ্ধে এটি ভারতের জন্য একটি বড় সমস্যা হতে পারে। তবে হর্ষিত রানার নির্বাচন ভালো সিদ্ধান্ত, কারণ তার পেস বেশি এবং তিনি পিচে বল হিট করতে পারেন। আকাশ দীপের তুলনায় তিনি বেশি কার্যকরী হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদি মহম্মদ শামি পুরোপুরি ফিট না থাকেন তাহলে হর্ষিত কাজে আসতে পারেন।
রোহিত, বিরাট ও রানের হিসাব
৫০ ওভারের ক্রিকেট ব্যাটারদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহজে রান তোলার একটি ভালো সুযোগ। বিশেষ করে শীর্ষ তিনে ব্যাট করা ব্যাটারদের জন্য। তাই আশা করা যায়, রোহিত ও বিরাট সিরিজ শেষে ভালো পরিমাণ রান পাবেন। তবে এটি কি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজের জন্য তাদের প্রস্তুত করবে? ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ইংল্যান্ডে সফল হতে চাইলে সেখানে লং-ফর্ম্যাট ম্যাচ খেলা দরকার, ৫০ ওভারের ক্রিকেট নয়।
আরও পড়ুন… ILT20 2025: শেফার্ড-পুরানের পাওয়ারের সামনে ফিকে রাসেলের লড়াই! নাইটদের হারাল ২৮ রানে হারাল MI
সকলেই আগ্রহ নিয়ে দেখবেন রোহিত শর্মার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ। তিনি কি বিশ্বকাপের মতো দ্রুত শুরু করবেন, নাকি ২০১৯ বিশ্বকাপের মতো ধীরে শুরু করে পরে গতি বাড়াবেন? যদি তিনি সফল হন, তাহলে ভারত হয়তো পর্যাপ্ত রান তুলতে পারবে যা তাদের বোলিং বিভাগের দুর্বলতা ঢেকে দেবে।
বিরাট কোহলি: ওয়ানডের রাজা
বিরাটের ক্ষেত্রে ৫০ ওভারের ফর্ম্যাট তার জন্য সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক। তিনি যেন ঘুমিয়েও সেঞ্চুরি করতে পারেন এই ফর্ম্যাটে। তিনি কিছুদিন বিশ্রাম নিতেই পারেন, ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে পরে ভাববেন।