আইপিএলে টানা দু ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ওপেনার সুনীল নারিন। গত কয়েক মরশুমে ওপেনিং-এ সুযোগ পাননি। বল হাতেও নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। বহু ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই বলছিলেন এবার হয়তো নাইট রাইডার্স থেকে বিদায় দেওয়া উচিত এই ক্রিকেটারকে।
শুরুর দিকে তার স্পিন বোলিং যতটা রহস্য ভরপুর ছিল,বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন ধার কমতে থাকে তার স্পিনে, এমনও দাবি করেছিলেন অনেকে। যদিও বল-ব্যাটেই সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন নারিন। আরসিবির বিপক্ষে দুরন্ত ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। আর দিল্লির বিরুদ্ধে ৮৫ রানের ইনিংস খেলে তিনি বুঝিয়ে দিলেন স্রেফ বোলার হিসেবে নয়,গৌতম গম্ভীর যেমন চাইছেন,একজন পারফেক্ট অলরাউন্ডার হিসেবেই খেলতে পারবেন তিনি। দিল্লির বিরুদ্ধে ২০০-র বেশি স্ট্রাইক রেটে ৮৫ রান করেন সুনীল নারিন।
২০১৮-১৯ সালের পর গৌতম গম্ভীরের দেখানো পথ থেকে সরে দাঁড়ায় কেকেআর । ২০১৮ সালে নারিনকে দিয়ে ওপেন করিয়ে সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন গম্ভীর। পরের বছরও দল ভরসা রেখেছিল ওপেনার নারিনের ওপর। সেই দুই মরশুমে ১৮৭ স্ট্রাইক রেটে নারিন করেছিলেন ৫৬৫ রান। কিন্তু এরপরই নারিনের দুর্বলতার জায়গাগুলো ধরে ফেলে বোলাররা। দেখা যায় শর্ট বলের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন বারবার। আইপিএলে ওপেনার হিসেবে ২৭ বার আউট হয়েছেন,যার মধ্যে ১১ বারই ব্যাক লেন্থ ডেলিভারিতে আউট হয়েছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার। এছাড়াও পাঁচবার শর্ট বলের ক্ষেত্রে নিজের উইকেট হারিয়েছেন।
গৌতম গম্ভীরের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই নবজন্ম হয় ওপেনার সুনীল নারিনের। আর সেটাও অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে। একেবারে আপগ্রেড ভার্সন যাকে বলে। প্রথমত স্পিনারদের ক্ষেত্রে ব্যাকফুটে খেলতে গেলে এলবিডব্লিউ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এবারের আইপিএলে তাই স্পিনারদের ফ্রন্ট ফুটে খেলার চেষ্টা করছেন নারীন। দিল্লির বিপক্ষে অক্ষর প্যাটেলকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনিএই পদ্ধতিতেই।
আইপিএল সংক্রান্ত যাবতীয় খবর, ছবি, ওয়েবস্টোরি, লাইভ স্কোর আপডেটে চোখ রাখতে ক্লিক করুন এখানে
দ্বিতীয়ত, শর্ট বলের ক্ষেত্রেও বাড়তি অনুশীলন করেছেন সুনীল নারিন। সেই কারণেই ২০১৮-১৯ সালে শর্ট বলে বারংবার আউট হওয়া সুনীল নারিন দিল্লির বিরুদ্ধে ইশান্ত শর্মাকে শর্ট বলে ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। আরসিবিও চেষ্টা করেছিল একই পথ অবলম্বন করতে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, শেষ দুই ম্যাচে ১৯টি ব্যাক লেন্থ এবং শর্ট ডেলিভারিতে ৩৭ রান করেছেন এই ক্যারিবিয়ান। আরসিবির বিপক্ষে আলজারি জোসেফ এবং যশ দয়ালকে স্কোয়ার লেগে একাধিক বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন শর্ট বলে।অর্থাৎ ২০২৪ আইপিএলে তিনি এসেছেন পুল শট রপ্ত করেই।
অধিকাংশ টেকনিক ঠিক করে ফেললেও কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে সুনীল নারিনের ব্যাটিংয়ে। যেমন বডি লেন্থ বোলিংএর ক্ষেত্রে তিনি সহজেই বাউন্ডারি মারতে পারছেন,কিন্তু বল বাইরের দিকে গেলে তার স্ট্রাইক রেট কিছুটা কমছে। এই পথ অবলম্বন করেই মিচেল মার্শসুনীল নারিনকে দিল্লির বিরুদ্ধে আটকে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নারিনের উইকেটটিও তুলে নেন তিনি।
অবশ্য সুনীল নারিনের সব থেকে বড় সুবিধা,যার জন্য গৌতম গম্ভীর তাকে নিশ্চিন্ত মনে ওপেনিং করাচ্ছেন সেটা হলো, খুব বেশি বল নষ্ট করার পক্ষপাতী নন তিনি। প্রথম ম্যাচে মাত্র ২ রানে আউট হলেও পরের দুই ম্যাচ মিলে নারিনের ঝুলিতে এসেছে ৬১ বলে ১৩২ রান। পরিসংখ্যান বলছে ২০টি ম্যাচে দশ রানের কমে আউট হয়েছেন নারিন। গড়ে প্রত্যেকটি ম্যাচে তিনি খেলেছেন মাত্র পাঁচটি বল অর্থাৎ সেক্ষেত্রেও তার স্ট্রাইক রেট ২০০-র কাছাকাছি।
নিজের দিনে নারিন বড় রান করে থাকেন কিন্তু খারাপ দিনে দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ফলে তিনি আউট হয়ে গেলেও তাতে দলের কোন প্রথম সারির ব্যাটারের ক্ষতি হয় না। বরং সুবিধাই হয় পাওয়ার প্লেতে নতুন বলে ব্যাটিং করার কাজটা নারিন নিজের কাঁধে তুলে নিলে। এটাই গৌতম গম্ভীরকে আইপিএলে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।
এছাড়াও নারিন যদি ক্লিক নাও করেন, অন্তত ২০ রানও যদি তিনি করে ফেলেন, সেটাও দলের বাকিদের যেমন আত্মবিশ্বাস দেয়, তেমনি প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর শুরুতে চাপ সৃষ্টি করে। এইসব কারণেই বিভিন্ন দলের ওপেনিং নিয়ে যখন মাথায় হাত কোচদের, তখন নারিনের সৌজন্যেই মুখের হাসি চওড়া হচ্ছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচের।