শুভব্রত মুখার্জি:- ৬ মাস আগেই তাঁর জীবনটা কার্যত ওলট পালট হয়ে গিয়েছিল। আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি বদল থেকে, অধিনায়কত্ব, খারাপ পারফরম্যান্সের জের থেকে ব্যক্তিগত জীবনের একাধিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েন ভারতীয় দলের এই মুহূর্তের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া।
গালিগালাজ থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কিছুই বাদ যায়নি। তবে এরপরেও তিনি জায়গা পেয়েছিলেন টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের সিনিয়র দলে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা তাঁর উপর আস্থা রেখেছিলেন। সেই আস্থার দাম দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যাট-বল হাতে দুরন্ত পারফরম্যান্স করে ভারতের বিশ্ব জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। ফাইনালেও ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে খেলা ঘুরিয়ে দেন তিনি।
ফাইনাল ম্যাচ শেষে তাঁকে কার্যত ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তাঁর কান্না থামার কোন লক্ষ্মণ ছিল না। এতদিনের যন্ত্রনা যেন বেরিয়ে আসছিল বাইরে। মাঠ এবং মাঠের বাইরের লড়াইয়ের যেন পরিসমাপ্তি ঘটল ভারতকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করার মধ্যে দিয়ে। এরপরেই হার্দিক তাঁর এবং তাঁর ভাই ক্রুণালের একটি ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেন। যেখানে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। এই ভিডিয়োর মধ্যে দিয়েই হার্দিকের আবেগঘন বার্তা বরোদার একটা ছেলে নিজের স্বপ্নকে নিয়ে বেঁচে রয়েছে।
হার্দিক পান্ডিয়া নিজের সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। যেখানে একদম কিশোর বয়সের হার্দিক থেকে আজকের হার্দিক পান্ডিয়া সকলেই ছিলেন। যেখানে হার্দিককে বলতে শোনা যায়, ‘হাম দোনো কা এক সপ্না থা। (আমাদের দুজনের অর্থাৎ হার্দিক এবং ক্রুনালের একটা স্বপ্ন ছিল)। বরোদা অর ইন্ডিয়াকে লিয়ে খেলে (বরোদা এবং ভারতের হয়ে খেলব)।’
ভিডিয়োতে কিশোর হার্দিককে এটা বলতে শোনা যায়। এই ভিডিয়োর ক্যাপশনে বিশ্বকাপজয়ী হার্দিক লেখেন, 'বরোদার একটা ছেলে তার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে রয়েছে। তার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তার চলার পথে যা যা এসেছে তার জন্য সে কৃতজ্ঞ। এর থেকে বেশি আর কিই বা আশা করতে পারি। আমার দেশের হয়ে খেলা আমার কাছে সবথেকে বড় গর্বের বিষয়। এর থেকে গর্বের বিষয় আর কিই বা হতে পারে!'
প্রসঙ্গত ফাইনালে বল হাতে বেশ ভালো পারফরমেন্স করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাত্র ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন তিন তিনটি উইকেট। যার মধ্যে রয়েছে ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই বল হাতে বেশ ভালো পারফরম্যান্স করেছেন হার্দিক।
আইপিএলে তাঁর ব্যাট বা বলে যে ছন্দহীনতা ধরা পড়েছিল তা যেন নিমেষে উধাও বিশ্বকাপে। সম্পূর্ণ এক আলাদা হার্দিক পান্ডিয়াকে লক্ষ্য করেছে ক্রিকেট বিশ্ব। আইপিএলে তাঁর অধিনায়কত্বে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের খারাপ পারফরম্যান্স এবং তাঁর ব্যক্তিগত খারাপ পারফরম্যান্সের পরে তার দিকে যেভাবে কটাক্ষ, সমালোচনার তির ধেয়ে এসেছিল সেই জায়গা থেকে ফিরে এসে ভারতের টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ে যেভাবে ভূমিকা পালন করলেন হার্দিক পান্ডিয়া, তা নিঃসন্দেহে কুর্নিশযোগ্য।