ভারতীয় দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। তাঁর জায়গাটাও নড়বড় করছিল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর পুরো পরিস্থিতি এখন বদলে গিয়েছে। যাইহোক গৌতম গম্ভীর সেই ক্রিকেটার, যিনি ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। আর এবার এই প্রাক্তন ক্রিকেটার সাদা বলের কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই বড় সাফল্য পেলেন। তাঁর কোচিংয়ে ভারত আইসিসি ওডিআই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে। তবে এই সাফল্যের রাস্তাটা মোটেও মসৃণ ছিল না।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে টিম ইন্ডিয়ার কোচের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছিল
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাঁর কোচিং নিয়ে সংশয়, অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে মনোমালিন্যের গুঞ্জন, দলে প্লেয়ার নেওয়া নিয়ে সমালোচনা- সব মিলিয়ে চাপে ছিলেন গম্ভীর। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ভারত যখন তাদের দল চূড়ান্ত করেছিল, তখন গম্ভীরের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর যাবতীয় জল্পনা, সমালোচনা সব থেমে গিয়েছে।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বরুণ চক্রবর্তী এবং হর্ষিত রানাকে দলে জায়গা দিতে গিয়ে যশস্বী জয়সওয়াল এবং মহম্মদ সিরাজের মতো প্রতিভাকে বাদ দিয়েছিলেন গম্ভীর। তিন জন ফাস্ট বোলার এবং পাঁচ জন স্পিনার দলে রেখে সকলকে হতবাক করেছিল ভারতীয় নির্বাচকেরা। আর এই পদক্ষেপের জন্য ভারতীয় প্রধান কোচের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছিল। তবু গম্ভীরের এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। প্রথম দু'টি ম্যাচে খেলেছিলেন হর্ষিত। তিনি খারাপ খেলেননি। তৃতীয় ম্যাচ থেকে বরুণ চক্রবর্তী খেলেন।আর বরুণ স্পিনের জাল বুনে বিপক্ষকে বিপাকে ফেলেছেন। ভারতের ট্রফি জয়ে বরুণের বড় ভূমিকা রয়েছে।
কোচ গৌতির ব্যর্থতা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর মেন ইন ব্লু-র আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিল। সেই সময়ে রাহুল দ্রাবিড় কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ালে কেকেআর-এর মেন্টর হিসেবে ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেন গম্ভীর। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডে সিরিজে ০-২ ব্যবধানে হেরে প্রধান কোচ হিসেবে তাঁর মেয়াদের শুরুতেই ধাক্কা খান গৌতি। এর পর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-৩-এ লজ্জাজনক ভাবে সিরিজে হার। এক দশকেরও বেশি সময় পরে ঘরের মাঠে ভারত প্রথম বার সিরিজে হেরে বসে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা স্পিনের বিরুদ্ধে হোঁচট খায়, গম্ভীরের টেকনিক এবং কোচিং কৌশলও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
আরও পড়ুন: আনফিট তকমাকে বুড়ো আঙুল,Champions Trophy-র ফাইনালে ম্যাচের সেরা হয়ে ইতিহাস অধিনায়ক রোহিতের
বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির সময় চাপ আরও বেড়ে যায়। যদিও ভারত প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে ০-১ এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর পর শেষ পর্যন্ত ১-৩ ব্যবধানে সিরিজ হারে। ১০ বছর পরে এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এটি ছিল ভারতের প্রথম পরাজয়। এর পরই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই গম্ভীরের কোচের জায়গা সুরক্ষিত করার শেষ সুযোগ হতে পারে। তবে গৌতি বাইরের চাপের মাঝেও অবিচল ছিলেন। এবং তাঁর সাহসী সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গম্ভীরের সাহসী সিদ্ধান্ত
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে গম্ভীরের শাপমুক্তির পর্ব শুরু হয়েছিল। এর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রাথমিক দলে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান যশস্বী জয়সওয়াল থাকলেও, তাঁকে বাদ দিয়ে পাঁচ নম্বর স্পিনার হিসেবে বরুণকে নিয়েছিলেন গম্ভীর। আর্শদীপ সিংয়ের পরিবর্তে হর্ষিতকে প্লেয়িং একাদশে রেখেছিলেন। অক্ষর প্যাটেলকে ৫ নম্বরে উঠিয়ে, ছয়ে পাঠিয়েছিলেন কেএল রাহুলকে। নিঃসন্দেহে এগুলি গম্ভীরের সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, রাহুলকে ছয়ে নামানোর পদক্ষেপটি ব্যর্থ হবে। তবে এই রদবদলে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং লাইনআপই শক্তিশালী হয়েছিল।
আরও পড়ুন: অতিমানব ফিলিপস, বাতাসে লাফিয়ে ০.৭৮ সেকেন্ড নিলেন শুভমনের উড়ন্ত ক্যাচ, হতচকিত ক্রিকেট বিশ্বও- ভিডিয়ো
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় দিয়ে ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভিযান শুরু করেছিল। তবে গম্ভীর এবং রোহিত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দাবার চাল পালটাতে দ্বিধা করেননি, চার স্পিনারকে নিয়ে একটি সাহসী লাইনআপ বেছে নিয়েছিলেন। এবং এটি ফলপ্রসূও হয়েছিল। এর পর টিম ম্যানেজমেন্ট নকআউট পর্বেও চার স্পিনার খেলানোর সিদ্ধান্তকেই ধরে রেখেছিল। এই একটি মাস্টারস্ট্রোক দুবাইয়ের পিচে সাফল্য এনে দেয় ভারতকে।
গৌতমের কোচিং ভবিষ্যতের উপর এখনও ঝুলছে খাঁড়া
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর গৌতম গম্ভীর নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিলেও, এখনও তাঁর কোচিং নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষত টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি চলাকালীন তাঁর কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যে কারণে এই গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ গৌতির নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ হবে। নতুন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রটি শক্তিশালী নোটে চালু করাটা গম্ভীরের কাছে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা করতে ব্যর্থ হলে বিসিসিআই প্রথম বারের মতো হয়তো স্প্লিট-কোচিং মডেল গ্রহণ করতে বাধ্য হতে পারে।