ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারের হতাশাজনক পারফর্ম্যান্সের পরে স্বাভাবিকভাবেই চূড়ান্ত সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে। তবে কে ভেবেছিল যে, মাস ঘুরতে না ঘুরতে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা সেই ক্যারিবিয়ান দলই ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে টি-২০ সিরিজে হারিয়ে দেবে!
বাস্তবিকই ছাই থেকে ফিনিক্সের মতো মাথা তুলে দাঁড়ায় ক্যারিবিয়ান দল। আন্ডারডগ হিসেবে মাঠে নেমে হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়াকে ৩-২ ব্যবধানে টি-২০ সিরিজে পরাজিত করেন রোভম্যান পাওয়েলরা।
এটা ঠিক যে, টেস্ট ও ওয়ান ডে সিরিজে ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে তেমন একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে টি-২০ সিরিজ জয়ের পরে ক্যারিবিয়ানদের সেই ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে যায়। ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ চলাকালীনও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের দুরবস্থা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়। ২ বারের ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও একজোড়া টি-২০ বিশ্বকাপজয়ী দলের করুণ অবস্থা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চা চালান বিশেষজ্ঞরাও।
ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের এমন পতনের কথা তুলে ধরে দাবি করা হতে থাকে যে, একাধিক দ্বীপরাষ্ট্রকে একজোট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল তৈরির কনসেপ্টটাই তুলে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অস্তিত্ব ভেঙে দিয়ে জামাইকা, বার্বাডোজ, অ্যান্টিগা, গায়ানা, ত্রিনিদাদ প্রভৃতি দেশগুলিকে আলাদা করে অ্যাসোসিয়েট দল হিসেবে ক্রিকেট খেলতে দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের দেশের গৌরবের কথা ভেবে লড়াইয়ে নামতে পারবে।
তবে ভারতের বিরুদ্ধে ক্যারিবিয়ানদের টি-২০ সিরিজ জয়ের পরে ইয়ান বিশপ অত্যন্ত নম্রভাবে সেই সব বিশেষজ্ঞদের মনে করিয়ে দিলেন যে, দুঃসময়ে পাশে থাকাই আসল কর্তব্য। পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় খুঁজে নিতে না বলে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তার চেষ্টা করাই উচিত।
বিশপ বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অবস্থা নিয়ে আমার বন্ধু ও সহকর্মীদের কিছু টুইট দেখেছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আমি তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, তোমার বন্ধু যখন আহত, তাকে পরিত্রাণ খুঁজে নিতে বলা উচিত নয়। বরং কীভাবে সাহায্য করা যায়, সেই রাস্তা খোঁজাই দরকার।’
উল্লেখ্য, বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে বিশপ আক্ষেপ করেছিলেন যে, একদা ক্রিকেট বিশ্বে ছড়ি ঘোরানো পুরনো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হয়তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে তিনি এটাও স্বীকার করে নেন যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য ক্রিকেটের উন্নতিতে যথাযথ নজর দেওয়া সম্ভব হয় না ক্রিকেট বোর্ডের।
সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর চলাকালীন ওখানকার পরিকাঠামো ও প্রাথমিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন-হার্দিক পান্ডিয়ারাও। অশ্বিনকে তো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের প্রতি সমব্যাথী শোনায়। কতটা প্রতিকূলতার মধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের লড়াই চালিয়ে যেতে হয়, সেই দিকটাই সামনে আনেন রবিচন্দ্রন। এবার বিশপের ইঙ্গিত এই যে, কঠিন সময়ে সমালোচনা না করে সাহায্য করার কথা ভাবা উচিত সকলের।