ভারতের জন্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এরকম বিপর্যয়ের মুখে পড়ল আফগানিস্তান? ঘুরিয়ে সেই প্রশ্নটা তুলে নিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন। দুর্দান্ত খেলে সেমিতে পৌঁছালেও শেষ চারের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে আফগানিস্তান। কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি। ভনের মতে, খেলোয়াড়দের দক্ষতার অভাবের কারণে সেই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি আফগানিস্তানকে। বরং এমনভাবে বিশ্বকাপের সূচি করা হয়েছে যে সুপার এইট স্তরের শেষ ম্যাচ খেলার পরে নয়া দেশে এসে মেরেকেটে ৪২ ঘণ্টার মধ্যে সেমিফাইনালে নামতে হয়েছে। নয়া মাঠে এসে অনুশীলনের সুযোগ পায়নি। মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায়নি পরিবেশের সঙ্গে। আর সেজন্যই আফগানদের শোচনীয় অবস্থা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভন।
বৃহস্পতিবার (ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার, স্থানীয় সময় অনুযায়ী বুধবার রাত) আফগানদের ব্যাটিংয়ে ধস নামার মধ্যেই ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, ‘সোমবার রাতে সেন্ট ভিনসেন্টে জিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট পায় আফগানিস্তান। মঙ্গলবার ত্রিনিদাদগামী বিমান চার ঘণ্টা লেট ছিল। তাই অনুশীলনের কোনও সময় পায়নি বা নয়া মাঠের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়টুকুই পায়নি। আমার মতে, এভারে খেলোয়াড়দের চরম অশ্রদ্ধা করা হল।’
ঠিক কতক্ষণ সময় পেয়েছিল আফগানিস্তান?
গত সোমবার (ইংরেজি মতে মঙ্গলবার এবং স্থানীয় সময় অনুযায়ী সেটা) গভীর রাত পেরিয়ে আফগানিস্তান ম্যাচ শেষ হয়েছিল। রাত ১ টা ১০ মিনিট নাগাদ ম্যাচের শেষ বলটা করেছিল আফগানিস্তান। তারপর সেলিব্রেশনে মেতে ওঠেন আফগান খেলোয়াড়রা। ম্যাচের পরে যেমন রীতিনীতি (পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, সাংবাদিক বৈঠকের মতো বিষয়) মেনে চলতে হয়, সেরকম করতে হয়। সবকিছু শেষ হতে আরও অনেকটা সময় লেগে যায়।
আরও পড়ুন: 'বিরাটের মতো লাফালাফি করে না', রোহিতের প্রশংসা করতে গিয়ে কোহলিকে ঠুকলেন কপিল দেব
সেখানে বুধবার (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) রাত ৮ টা ২০ মিনিট নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল শুরু হয় আফগানিস্তানের। অর্থাৎ মেরেকেটে ৪২ ঘণ্টার ব্যবধানে ম্যাচ খেলতে নামতে হয়েছে। আদতে সেই সময়টা আরও কম। কারণ তারও অনেক আগে মাঠে আসতে হয়েছে রশিদদের। ওয়ার্ম-আপ করতে হয়েছে। করা হয়েছে টস। আর এত তাড়াহুড়ো করে আফগানিস্তানকে সেমিফাইনালে খেলতে হওয়ার জন্য বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসিকে দুষেছেন ভন। ঘুরিয়ে বলতে চেয়েছেন যে ভারতের জন্যই আইসিসি এরকমভাবে ‘অশ্রদ্ধা’ করেছে রশিদদের।
কিন্তু এই সেমিফাইনালের সঙ্গে ভারতের কী সম্পর্ক?
আসলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগে থেকেই ঠিক হয়েছিল যে ভারত যদি সেমিফাইনালে ওঠে, তাহলে গায়ানায় খেলবেন রোহিত শর্মারা। যে ভারত প্রথম হয়ে উঠুক বা দ্বিতীয় হয়ে উঠুক। সেই নিয়মের কারণেই সুপার এইটের গ্রুপ ‘১’-তে প্রথম হয়ে উঠলেও দ্বিতীয় সেমিফাইনালে খেলছে ভারত। প্রতিপক্ষ হচ্ছে গ্রুপ ‘২’-র দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দল ইংল্যান্ড।
কিন্তু সাধারণত এরকমভাবে সেমিফাইনালের সূচি হয় না। প্রথম সেমিফাইনালে সাধারণত গ্রুপ ‘১’-র শীর্ষে থাকা দল এবং গ্রুপ ‘২’-র দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দলের মধ্যে ম্যাচ হয়। আর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গ্রুপ ‘২’-র শীর্ষে থাকা দলের বিরুদ্ধে নামে গ্রুপ ‘১’-র দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দল।
কিন্তু ভারত যেহেতু গায়ানায় খেলবে বলে আগে থেকেই ঠিক ছিল, তাই সাধারণত যে নিয়মটা মেনে চলতে হয়, সেটা ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। আগে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান ম্যাচ হয়েছে। তারপর হবে ভারত এবং ইংল্যান্ড। উল্লেখ্য, গ্রুপের শেষ ম্যাচ এবং সেমিফাইনালের মধ্যে ব্যবধান যে এরকম হবে এবং ত্রিনিদাদে প্রথম সেমিফাইনাল হবে, সেটা অনেক আগে থেকেই জানা ছিল সকলের।
শুধু সূচিকে কি আদৌও দোষ দেওয়া যায়?
তবে সেই সূচির অভিযোগ সত্ত্বেও এটা মানতেই হবে যে ত্রিনিদাদের পিচটাও খুব একটা সুবিধাজনক ছিল না। বাউন্সের হেরফের হচ্ছিল। যথেষ্ট মুভমেন্ট ছিল পিচে। বেশ কঠিন পিচ ছিল। আর সেই পিচে প্রথম ওভারেই রহমানউল্লাহ গুরবাজকে আউট করে দিয়ে আফগানিস্তানের কাজটা আরও কঠিন করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানরা ব্যাট হাতে যে রান তুলছিলেন, সেটার পিছনে ছিল ওপেনিং জুটি। মিডল অর্ডার বা লোয়ার-মিডল অর্ডার প্রতি ম্যাচেই ধসে পড়েছে। তাই যে ম্যাচে গুরবাজরা রান পাননি, সেই ম্যাচে বড়সড় ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে আফগানিস্তান। সুপার এইটে ভারতের বিরুদ্ধে ওপেনিং জুটিতে বড় রান ওঠেনি। সেই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরেছেন আফগানরা। আবার অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওপেনিং জুটিতে রান উঠেছে (দুটি ম্যাচেই ওপেনররা আউট হওয়ার পরে আফগানিস্তান ধসে যায়)। ওই দুটি ম্যাচেই জিতেছে আফগানিস্তান।