একজন প্রতিটি বলের আগে ‘ওম নমঃ শিবায়’ বলছিলেন। অপরজন টানা আড়াই দিন শুধুমাত্র ‘হনুমান চালিসা’ শুনে ব্যাট করে গিয়েছিলেন। নিজেদের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্তের সময় কীভাবে তাঁরা খেলেছিলেন, ওরকম দু্র্দান্ত খেলার জন্য কীভাবে সেই ‘জোনে’ পৌঁছেছিলেন, সেটা ফাঁস করলেন বিরাট কোহলি এবং গৌতম গম্ভীর। বিরাট প্রতিটি বলের আগে ‘ওম নমঃ শিবায়’ বলেছিলেন ২০১৪-১৫ সালের অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সময়। আর গম্ভীর আড়াই দিন ধরে শুধু ‘হনুমান চালিসা’ শুনে গিয়েছিলেন ২০০৯ সালের ঐতিহাসিক নেপিয়ার টেস্টে। যে অবিশ্বাস্য ইনিংসের জন্য ভারত নেপিয়ার টেস্ট ড্র রাখতে পেরেছিল।
বিরাটের ‘ওম নমঃ শিবায়’ মন্ত্র
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে গম্ভীর এবং বিরাটের বিশেষ সাক্ষাৎকারে ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় তুই (বিবাট) যে দুর্দান্ত সিরিজটা খেলেছিলিস, যেখানে তুই রানের পর রান করে গিয়েছিলিস, (সেই সিরিজের বিষয়ে) তুই আমায় জানিয়েছিলিস যে প্রতিটি বলের আগে তুই ওম নমঃ শিবায় বলেছিলিস। যা তোকে একটা জোনে নিয়ে গিয়েছিল।’
নেপিয়ারে শুধু ‘হনুমান চালিসা’ শুনেছিলেন গম্ভীর
২০০৯ সালে নেপিয়ারে নিজের ইনিংসের বিষয়ে গম্ভীর বলেন, ‘আমি যখন নেপিয়ারে খেলছিলাম, তখন আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঠিক একই হয়েছিল। যদি আমি পিছনে ফিরে তাকাই, তাহলে (নিজেকে প্রশ্ন করি যে) আমি কি আবার কখনও আড়াই দিন ধরে ব্যাট করতে পারতাম? আমার মনে হয় না, আমি আর কখনও পারতাম। ওই আড়াই দিনে আমি একমাত্র যে কাজটা করেছিলাম, সেটা হল হনুমান চালিসা শোনা। হনুমান চালিসা শুনেছিলাম শুধু। প্রতিটি বলের আগে ওই জোনে ঢোকার জন্য তুই ওম নমঃ শিবায় বলেছিলিস। আর হনুমান চালিসা শোনার ফলে আমি ওই জোনে ঢুকেছিলাম।’
'নেপিয়ারে ২ ঘণ্টা একটাও কথা বলিনি'
বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে গম্ভীর বলেন, 'নিজের কেরিয়ারে খুব অল্প সংখ্যক বারই ওই জোনে থাকতে পারা যায়। ওই জোনে থাকার বিষয়টা ঐশ্বরিক। যে মুহূর্তটা একমাত্র নিজের ভিতর থেকে অনুভব করা যায়। আমার মনে আছে, নেপিয়ারে পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনের পরে যখন আমরা হেঁটে ফিরছিলাম, সেইসময় (ভিভিএস) লক্ষ্মণ বলেছিল যে তুমি কি এটা জানো যে গত দু'ঘণ্টায় একটাও কথা বলোনি। ওভারের মাঝের সময়ও একটাও শব্দ বেরোয়নি তোমার মুখ থেকে। তখন আমি অনুভব করেছিলাম যে আমি একটাও কথা বলিনি। ওভারের মাঝের সময় আমি শুধুমাত্র মাথা নাড়িয়েছিলাম। ফিরে আসার পরে আমি হনুমান চালিসা চালিয়ে নিজের জোনে চলে যেতাম।'
আরও পড়ুন: Kohli-Gambhir: 'মাঠে আমার থেকে বেশি ঝগড়া করো তুমি', কোহলির তির তাঁর দিকেই ঘোরালেন গম্ভীর- ভিডিয়ো
গম্ভীর আরও বলেন, ‘আড়াই দিন থেকে আমি স্রেফ একটা জোনেই ছিলাম। তারপর থেকে জীবনে আমি কোনওদিন ওরকম জোনে যেতে পারিনি। তাই আমি অনুভব করতে পারি যে ওই জোনে থাকার অনুভূতিটা কতটা ভালো। আমি নিশ্চিত যে আমার থেকে অনেক বেশিবার তুই ওই জোনে গিয়েছিস। কেউ যদি নিজে ওই জোনে না যায়, তাহলে কেউ ওই জোনে থাকার অনুভূতিটা বুঝতে পারবে না।’
২০১৪-১৫ সালের অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বিরাট
বছরের মাঝামাঝি সময় ইংল্যান্ডে লাল বলে ভরাডুবির পরে একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন বিরাট। সেই অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ‘আগুন’-র জবাব পালটা ‘আগুন’ দিয়েই দিয়েছিলেন বিরাট। চারটি টেস্টে ৬৯২ রান করেছিলেন। গড় ছিল ৮৬.৫। চারটি শতরান করেছিলেন। একটি অর্ধ-শতরানও করেছিলেন বিরাট।
২০০৯ সালে নেপিয়ার টেস্টে গম্ভীরের ঐতিহাসিক ইনিংস
সেই সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারত জিতেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে নেপিয়ারে প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল। ফলো-অনের মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই অবস্থায় দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে ৬৪৩ মিনিটের ম্যারাথন ইনিংস খেলেছিলেন গম্ভীর। ৪৩৬ বলে ১৩৭ রান করেছিলেন। সেই ইনিংসের কারণে নেপিয়ার টেস্ট ড্র করতে পেরেছিল ভারত। আর প্রথমবার নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল।