ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিক অবশেষে আইপিএল থেকে অবসর নিলেন। ২০২৪ আইপিএলের এলিমিনেটরে রাজস্থান রয়্যালসের কাছে চার উইকেটে হেরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বিদায় নেয়। আর সেই ম্যাচটিই কার্তিকের জীবনের শেষ আইপিএল ম্যাচ হয়ে থেকে যায়। আগেই অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। এবার আরসিবি-র আইপিএল অভিযান শেষ হতেই, সরকারি ভাবে অবসর নিলেন কার্তিক।
ম্যাচের পরে আরসিবি খেলোয়াড়রা কার্তিককে গার্ড অফ অনার দেন। বেঙ্গালুরুর ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কার্তিককে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে। এই ভিডিয়োতে বিরাট কোহলিকে আবেগপ্রবণ হতে দেখা গিয়েছে, তেমনই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কার্তিকের স্ত্রী দীপিকা পাল্লিকাল।
কার্তিক নিয়ে আবোগ প্রবণ কোহলি
এই ভিডিয়োতে বিরাট কোহলি ২০০৯ সালে কার্তিকের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা মনে করে আবেগে ভেসেছেন। বলেছেন, ‘খুব ভুল না হলে, প্রথম বার আমার ডিকে-র সঙ্গে দেখা বয়েছিল ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলছিলাম। সেই প্রথম বার আমি দীনেশের সাথে চেঞ্জরুম শেয়ার করেছি এবং ওকে দেখে খুব মজার মানুষ বলে মনে হয়েছিল। মাঝে মাঝে অতিসক্রিয়। আবার কখনও কখনও কিছুটা বিভ্রান্তও। এক জায়গায় বসে থাকতে পারত না। সব সময় ঘুরে বেড়াত। ওর সম্পর্কে এটাই ছিল আমার প্রথম অভিজ্ঞতা।।’
আরও পড়ুন: আমারও বয়স হচ্ছে- IPL-এ নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বলতে গিয়ে কী ইঙ্গিত করলেন অশ্বিন?
সঙ্গে কোহলি বলেছেন, ‘ওর অসামান্য প্রতিভা। খুব ভালো একজন ব্যাটার। এবং প্রথম দিনের সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে এখনকার অভিজ্ঞতার তেমন পার্থক্য নেই। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর জ্ঞান বেড়েছে এবং আগের চেয়ে অনেক শান্তও হয়েছে।’
বিরাট কার্তিকের সততা এবং সাহসেরও প্রশংসা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি ২০২২ সালে বিরাট কোহলির খারাপ সময়ে কার্তিক যেভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সে কথাও জানাতে ভোলেননি।
কোহলি বলেছেন, ‘মাঠের বাইরে কার্তিকের সঙ্গে আমার সুখের এবং মজার বেশ কিছু স্মৃতি রয়েছে। শুধু ক্রিকেট নয়, অনেক ব্যাপারে ওর প্রচুর জ্ঞান রয়েছে। ওর সঙ্গে আলোচনা সব সময়ই বেশ উপভোগ্য। এমন কী ২০২২ সালের আইপিএলে ভালো খেলতে পারছিলাম না। আত্মবিশ্বাসও তলানিতে ঠেকেছিল। সে বার আমাকে নিয়ে দু'দিন আলাদা করে বসেছিল কার্তিক। ঠান্ডা মাথায় ভাবার পরামর্শ দিয়েছিল। সুন্দর করে আমার খামতির জায়গাগুলো ধরিয়ে দিয়েছিল। যেগুলো আমি বুঝতে পারছিলাম না।’
আরও পড়ুন: ভারতের পরবর্তী কোচ কি ফ্লেমিং? কার্যত উত্তর দিয়ে দিলেন CSK CEO
কোহলি যোগ করেছেন, ‘কার্তিকের মধ্যে সততা এবং সাহস আছে। যেটা আমার খুব ভালো লাগে। যে বিষয়টা বোঝে শুধু সেটা নিয়েই কথা বলে। এই জন্যই ওর সঙ্গ সব সময় দারুণ উপভোগ্য হয়। কখনও সমস্যা তৈরি হয় না। এক সঙ্গে চলতে অসুবিধা হয় না।’
কার্তিকই তাঁর লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা, দাবি স্ত্রী দীপিকার
কার্তিকের স্ত্রী দীপিকা পাল্লিকালও ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত শেয়ার করেছেন। দীপিকা নিজে একজন দেশের অন্যতম সেরা মহিলা স্কোয়াশ খেলোয়াড়। একটা সময়ে দেশের এক নম্বর মহিলা স্কোয়াশ খেলোয়াড়ও ছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, কার্তিকই তাঁর লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। কার্তিকের ক্রিকেট জীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন দীপিকা।
দীপিকাকে সেই ভিডিয়োতে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘২০১৩ সালে আমাদের আলাপ। তখনই মনে হয়েছিল, দু'জনে এক সঙ্গে জীবন কাটাতে পারি। আমাদের অনুমান পরে সঠিক প্রমাণ হয়েছিল। আমি ওর কাছ থেকেই অনেক কিছু শিখেছি। বিশেষ করে যখন ভালো খেলতে পারত না। দল থেকে বাদ পড়লে দু'তিন দিন হয়তো একটু হতাশ দেখাত। তার পরেই আবার উঠে দাঁড়াত। ফর্ম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করত। আমার তো মনে হয়, ওর মতো বার বার বাদ পড়লে, অনেকেই খেলা ছেড়ে দিত। আমি নিজেও হয়তো পারতাম না এ ভাবে প্রতি বার ফিরে আসতে। আমিও খেলি। দু'জনের খেলায় হয়তো কোনও মিল নেই। তবু বলছি, পারতাম না। একটা সময়ের পর হাল ছেড়ে দিতাম। মরণ-বাঁচন পরিস্থিতিতে কার্তিকের এই নাছোড় মানসিকতা সত্যিই শেখার মতো।’
আরও পড়ুন: ঠিক সময় সিদ্ধান্ত জানাবে ধোনি, আশা করি IPL 2025-এও ওকে পাব আমরা, আত্মবিশ্বাসী CSK CEO
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘১০ বছর আমরা এক সঙ্গে আছি। পরস্পরকে চিনি। সামনে থেকে দেখেছি, প্রতি দু'বছর অন্তর নিজেকে খেলোয়াড় হিসেবে বদলে ফেলার চেষ্টা করত। স্ত্রী হিসেবেও আমি ওর পরিবর্তনটা বুঝতে পারতাম। শেষ চার-পাঁচ বছর ক্রিকেটকে শুধু উপভোগ করতে চেয়েছে সব সময়ে। এই পরিবর্তনে অভিষেক নায়ারের (কলকাতা নাইট রাইডার্সের সহকারী কোচ) বড় ভূমিকা রয়েছে। নায়ারের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর থেকে কার্তিক শুধু ক্রিকেটার হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবেও অনেক পরিণত হয়েছে। নতুন ভাবে গড়ে উঠেছে।’
দীপিকা এখানে না থেমে বলেছেন, ‘ক্রিকেটার হিসেবে আজ ও যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, সেটা ওর কৃতিত্ব। জায়গাটা ওকে অর্জন করতে হয়েছে। যে কোনও খেলোয়াড়ের জন্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ। অবসর নেওয়া সহজ নয়। কারণ ছোট থেকে এক জন খেলোয়াড়ের সব কিছুই তার খেলার সঙ্গে যুক্ত। খেলা ছাড়া তার ভাবনায় কিছু থাকে না। সেটাই তার জীবন। এ ক্ষেত্রেও কার্তিক একটু ব্যতিক্রম। জীবনের এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে সহজে পা রাখতে পারে। মানিয়ে নিতে পারে। ক্রিকেটার হিসেবে যা করেছে, তাতে ও নিজে গর্বিত হতেই পারে। পরিবারের সবাইকে গর্বিত করেছে। আমি তো ভীষণ গর্বিত।’