NatWest Trophy 2002: সময়টা ছিল ১৩ জুলাই, ২০০২, তখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তার তরুণ দল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে জিতেছিল, বিখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট মাঠে তিন বল বাকি থাকতেই ৩২৬ রানের একটি বড় লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল সৌরভের ভারত। ৩২৫ রান তাড়া করতে গিয়ে বীরেন্দ্র সেহওয়াগ ৪৯ বলে ৪৫ রান করেছিলেন, যেখানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বীরু ১৪.৩ ওভারে ১০৬ রানের ওপেনিং জুটি গড়েছিলেন। এই সময়ে ৪৩ বলে ৬০ রান করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
কোন ভিডিয়ো ভাইরাল হচ্ছে?
বর্তমানে একটি ভিডিয়ো ইন্টারনেটে বেশ ভাইরাল হচ্ছে, যেখানে সৌরভকে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির কথা শেয়ার করতে দেখা যাচ্ছে। আসলে সম্প্রতি সৌরভের কন্যা সানার অফিসের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে প্রিন্স অফ ক্যালকাটা লর্ডসে এক অনুষ্ঠানে লিডারশিপ নিয়ে আলোচনাচক্রে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই উঠে আসে ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি ফাইনালের কথা। যেখানে তিনি বীরেন্দ্র সেহওয়াগের কথা বলেন। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে ৩২৫ রান তুলে ছিল। ইনিংসের বিরতিতে কিছুটা বিমর্ষ ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সেই সময় দলের অধিনায়কের পিছনে শিস দিচ্ছিলেন বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। সৌরভকে সেদিন বীরু বলেছিলেন, এই ম্যাচ আমরাই জিতব। সৌরভ আগেও জানিয়েছিলেন, সেহওয়াগ ব্যাট করতে নামা কিংবা ব্যাটিংয়ের সময়ও শিস দিচ্ছিলেন। সেহওয়াগ যতটা সহজে জেতানোর কথা বলেছিলেন, সৌরভের প্রথমে সেটা বিশ্বাস করেননি।
আরও পড়ুন… সঞ্জুর ব্যাট দিয়ে ‘ভিলেজ ক্রিকেট’ খেলছেন সাঙ্গাকারা! খবর পেয়ে মজার প্রতিক্রিয়া দিলেন RR ক্যাপ্টেন
রনি ইরানির ওভারে কী ঘটেছিল?
এদিনের আলোচনায় ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল ম্যাচে রনি ইরানির ওভারে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার গল্প তুলে ধরেন সৌরভ। সেই সময়ে ভারতের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। রনি ইরানিকে বল করতে আসতে দেখে সৌরভ যান সেহওয়াগের কাছে। ওভারে ৭-৮ রান যথেষ্ট হবে বলে উল্লেখ করে বীরুকে পরামর্শ দেন তিনি। এর পাশাপাশি বীরুকে সতর্ক ভাবে খেলতে বলেন তিনি। সৌরভের এই ভাবনা ছিল বোলিং চেঞ্জের ফলে যাতে ইংল্যান্ড উইকেট না ফেলতে পারে। সেহওয়াগ প্রথম বলে চার মারেন, এরপরও সৌরভ দুবার সেহওয়াগকে ধরে খেলতে বলেন। দ্বিতীয় বলে ফের বাউন্ডারি মারেন বীরু। সৌরভ গিয়ে বলেন, ৮ রান এসে গিয়েছে, সিঙ্গলস নিতে বলেন সেহওয়াগকে। বীরু সম্মতি দিলেও তৃতীয় বলে স্যুইপ করে চার মারেন। যদি সেটা মিস করতেন তাহলে LBW হতেন সেহওয়াগ। এরপর আর বীরুকে কিছু বলেননি সৌরভ। সেহওয়াগও অধিনায়কের দিকে তাকাননি। শেষ পর্যন্ত ভারত ম্য়াচটি জিতেছিল।
আরও পড়ুন… IND vs SL ODI: গম্ভীরের পরামর্শে ছুটি কমিয়ে দলে ফিরছেন ক্যাপ্টেন রোহিত! কী করবেন কোহলি-বুমরাহ?
সৌরভ কী শিক্ষা পেয়েছিলেন?
এই ম্যাচটি থেকে নেতৃত্বের একটি বড় শিক্ষা পেয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। লিডারশিপ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সৌরভ মেনে নিয়েছিলেন সে দিন তাঁর থেকেও বিশেষ কিছু ভেবেছিলেন বীরু। সেহওয়াগের এই ভাবনাটা অনেক উন্নত ছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন কোনও দলে বা টিমে তাঁর চেয়েও প্রতিভাবান কেউ থাকতেই পারেন, তিনি আরও ভালো কিছু পরিকল্পনা করতে পারেন। রাহুল দ্রাবিড়, হরভজন সিং, বীরেন্দ্র সেহওয়াগ যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতোই খেলবেন, সেটা হতে পারে না।
আরও পড়ুন… Hardik Pandya: ভুঁড়ি থেকে একেবারে সিক্স প্যাক! ছবি পোস্ট করে জীবনের কঠিন সময়টাকে মনে করলেন হার্দিক
এরপরে সৌরভ জানান, ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জয়ের পর তিনি একদিন প্রাতরাশ টেবিলে সেহওয়াগের সঙ্গে বসেছিলেন। সেখানেই তিনি বীরুর থেকে জানতে চেয়েছিলেন কেন তিনি সে দিন তাঁর পরামর্শ না শুনে ব্যাটিং করেছিলেন? বীরেন্দ্র সেহওয়াগ জানতে চান, সৌরভ কী তার উপর রেগে রয়েছেন। সৌরভ না বলার পর সেহওয়াগ বলেছিলেন, তাঁর ওই মুহূর্তে মনে হয়েছিল বোলারকে মাথার উপর চড়তে দেওয়া যাবে না। সেই কারণেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। সেই সময়ে সেটাই সেরা উপায় ছিল বলে বীরু মনে করেছিলেন। এই ঘটনা ও বীরুর এই কথা থেকে জীবনে বড় শিক্ষা পেয়েছিলেন সৌরভ। তিনি বুঝে ছিলেন, তিনিই যে সব সময় ঠিক হবেন সেটা নয়, অনেকেই তাঁর থেকে ভালো রয়েছে, তাদের ভাবনা আরও উন্নত হতেই পারে। তাই নিজের ভাবনাকে না চাপিয়ে সকলের ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়াটাই হল ক্যাপ্টেনের আসল কাজ।