আবেগতাড়িত হয়ে কাঁদতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। বরং কাঁদতে চাননি। কারণ তিনি চাননি যে তাঁর সেই কান্না দেখে কয়েকজন আরও আনন্দ পেয়ে থাক, যাঁরা তাঁর আরও পতন চাইছিলেন। তাই নিজেকে শক্ত রেখেছিলেন। আর ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়ে তিনি যখন শেষপর্যন্ত কাঁদলেন, তখন সেইসব নিন্দুকরা (সমালোচক নন, ক্ষতিকারক নিন্দুক) তাঁর সামনে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেই হয়তো সামনে বলেননি। কিন্তু ভারতের বিশ্বকাপের জয়ের পরে যে নিন্দুকরাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, তাঁরা আদতে হার্দিকের কাছেই মাথানত করেছেন। কারণ হার্দিক ওরকম অসম্ভব চাপের মধ্যে ভালো বোলিং না করলে এই বিশ্বকাপ জিতত না ভারত (জসপ্রীত বুমরাহ এবং আর্শদীপ সিংয়ের দারুণ বোলিংয়ের পরও)। যদিও বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই হার্দিক হয়ত বিষয়টা ভেবে দেখেননি। তিনি শুধু হেটার্সদের বার্তা দিয়ে দেশের কাছে প্রতিজ্ঞা করে গিয়েছেন, তাঁর খারাপ সময় দেখে যাঁরা আনন্দ করছিলেন, তাঁদের আর আনন্দ করার সুযোগ দেবেন না।
কেঁদে ফেলেন হার্দিক, রোহিত ও সতীর্থদের ভালোবাসায় কিছুটা সামলে নেন
আর সেই কথাগুলো যখন বলছিলেন, তখন হার্দিকের মধ্যে আবেগ কোনও বাঁধ মানছিল না। আইপিএলের সময় তাঁকে যে চূড়ান্ত অপমান সহ্য করতে হয়েছে, সেটা সব ঘুরেফিরে আসছিল। যিনি ২০ তম ওভারের শেষ বলটা করার পরেই নিজের চোখের জল সামলাতে পারেননি। একেবারে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন। পরে অধিনায়ক রোহিত শর্মা-সহ দলের অন্যান্য সতীর্থদের ভালোবাসায় মুখে হাসি ফোটে হার্দিকের। ক্যাপ্টেন রোহিত তো গালে চুমু খেয়ে নেন।
যদিও বিশ্বকাপের সরকারি সম্প্রচারকারী সংস্থা স্টার স্পোর্টসে কথা বলার সময় ফের গলা ধরে আসে হার্দিকের। থেমে-থেমে কথা বলতে থাকেন। ভারতের সহ-অধিনায়ক বলেন, ‘ওই সময়টায়....(পুরো কথাটা শেষ করতে পারেননি হার্দিক, গলা ধরে আসে, নিজেকে কোনওক্রমে সামলে নিয়ে ফের কথা বলার চেষ্টা করেন)। শেষ ছয় মাসে কী কী হয়েছে, সেটা ওই সময় আমার মনে পড়ছিল। পুরো বিষয়টা মনে পড়ছিল।’
হেটার্সদের বার্তা হার্দিকের
হার্দিক আরও বলেন, ‘আমি নিজেকে খুব কন্ট্রোল করেছিলাম। যখন আমার কাঁদতে ইচ্ছা করছিল, আমি তখন কাঁদিনি। কারণ লোকজনকে দেখাতে চাইনি। আমায় কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে দেখে যে সব লোকেরা আনন্দ পাচ্ছিলেন, তাঁদের আরও আনন্দ দিতে চাইনি আমি। আর আমি কখনও সেই আনন্দটা করতে দেব না।’
আর হার্দিকের সেই যে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটল, সেটায় কি সত্যিই অবাক হওয়ার কিছু আছে? একেবারেই নেই। কারণ একটা মানুষ যেখানে যাচ্ছিলেন, সেখানে বিদ্রূপের মুখে পড়তে হচ্ছিল। মুম্বইয়ের মাঠেও খেলার সময় বিদ্রূপের মুখে পড়তে হয়েছিল। রোহিতকে সরিয়ে হার্দিককে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক করায় তাঁকে ‘ভিলেন’ বানিয়ে দিয়েছিলেন কেউ-কেউ।
তাঁরা এটা কখনও বুঝতে চাননি যে হার্দিককে ক্যাপ্টেন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুম্বইয়ের ম্যানেজমেন্ট। হার্দিক হয়তো গুজরাট টাইটানস থেকে আসার সময় বলেছিলেন যে তাঁকে অধিনায়ক করা হোক। সে তো ওই নিন্দুকরাও যেখানে কাজ করেন, সেই অফিসে গিয়ে ‘প্রোমোশন’ চাইতে পারেন। কিন্তু ‘প্রোমোশন’ চেয়েছেন বলেই যে বস পদোন্নতি করিয়ে দেবেন, তেমনটা তো নয়। হার্দিকের ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঠিক সেরকমই হয়েছিল। অথচ তাঁকে ‘ভিলেন’ বানিয়ে দিয়েছিলেন নিন্দুকরা।
স্যালুট হার্দিক!
লাগাতার বিদ্রূপের প্রভাব যে হার্দিকের মনেও পড়েছিল, তা আইপিএলের সময় বোঝা গিয়েছিল। কোনওদিন প্রকাশ্যে বলেননি। কিন্তু তাঁর হাবভাব থেকে পরিষ্কার ছিল যে মারাত্মক হতাশায় ডুবে আছেন। সেই সময়টা কাটিয়ে যেভাবে হার্দিক কামব্যাক করেছেন, এবার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর হয়ে উঠেছেন, সেটা সম্ভবত তিনি বলেই পেরেছেন।