সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই শাকিব আল হাসানের নাম সবার আগে সামনে উঠে আসত। মাঝে মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে চর্চা হতো সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ধ্বজা বয়ে নিয়ে যান বর্তমান সময়ে। স্পিন বিভাগে শাকিবের পাশাপাশি নাম উঠে আসে মেহেদি হাসান মিরাজের। তবে ভারতের বিরুদ্ধে চেন্নাই টেস্টের শুরুতে চমক দিলেন এমন একজন, যাঁর প্রতিভা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে সম্প্রতি। তবে টিম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে এমন চমকপ্রদভাবে তিনি নিজের উপস্থিতি জানান দেবেন, এমনটাও আশা করা যায়নি।
গত পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশের বেনজির সাফল্যের পিছনে তাদের পেস বোলিং আক্রমণের বড়সড় ভূমিকা ছিল। সেই কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন নবাগত হাসান মাহমুদ। ২৪ বছরের তারকা পাকিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের সব থেকে সফল পেসার ছিলেন।
পেস বোলিং আত্মবিশ্বাস জোগাতেই ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্ত ভারতের বিরুদ্ধে চেন্নাই টেস্টে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পিছ পা হননি। তিনি টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার বদলে ভারতকে শুরুতে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান। ইঙ্গিতটা স্পষ্ট, চিপকের এই পিচে পেসারদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্তকে যথাযথ মর্যাদা দেন হাসান মাহমুদ। তিনি টেস্টের প্রথম ঘণ্টাতেই ভারতের প্রথম ৩টি উইকেট তুলে নেন। হাসান নিজের ৫ ওভারের মধ্যেই সাজঘরে ফেরান টিম ইন্ডিয়ার তিন মহাতারকা রোহিত শর্মা, শুভমন গিল ও বিরাট কোহলিকে। চেন্নাই টেস্টে শুরুতেই ভারতকে চাপে ফেলা বাংলাদেশের তরুণ পেসারকে চিনে নেওয়া যাক।
প্রথম ঘণ্টায় হাসানের তিন শিকার
প্রথমত, ৫.১ ওভারে হাসান মাহমুদের বলে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন রোহিত শর্মা। ১৯ বলে ৬ রান করেন তিনি। মারেন ১টি চার। ভারত দলগত ১৪ রানে ১ উইকেট হারায়।
দ্বিতীয়ত, ৭.৩ ওভারে হাসান মাহমুদের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাটের কানা লাগিয়ে বসেন শুভমন গিল। বল চলে যায় কিপার লিটন দাসের দস্তানায়। ৮ বল খেলেও খাতা খুলতে পারেননি গিল। ভারত ২৮ রানে ২ উইকেট হারায়।
তৃতীয়ত, ৯.২ ওভারে হাসানের বলে উইকেটকিপার লিটন দাসের দস্তানায় ধরা দেন বিরাট কোহলি। ৬ বলে ৬ রান করেন তিনি। ভারত দলগত ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারায়।
কে এই হাসান মাহমুদ
২৪ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অত্যন্ত ধারাবাহিক। সেই সুবাদেই গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নেমে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান হাসান। বাংলাদেশ সেই টেস্ট হেরে বসে। তবে হাসান প্রথম ইনিংসে ২টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি উইকেট দখল করেন।
পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২টি টেস্টে মাঠে নেমে সাকুল্যে ৮টি উইকেট নেন হাসান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১টি উইকেট নেন তিনি। হাসান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে কোনও উইকেট পাননি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫টি উইকেট সংগ্রহ করেন তিনি। সব মিলিয়ে ৩টি টেস্টে ১৪টি উইকেট নিয়ে ভারত সফরে আসেন হাসান। চেন্নাই টেস্টের শুরুতেই ভারতের তিন মহাতারকাকে ফিরিয়ে ফের চমক দেন হাসান।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, হাসানের গতিই এক্ষেত্রে তাঁর সব থেকে বড় শক্তি। ধারাবাহিকভাবে ১৪০ কিলোমিটারের আশেপাশে বল করে যান তিনি। হাসান বাংলাদেশের হয়ে ২২টি ওয়ান ডে ম্যাচে সাকুল্যে ৩০টি উইকেট নিয়েছেন। তিনি ১৮টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে মাঠে নেমে ১৮টি উইকেট সংগ্রহ করেছেন।