পুণেতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে হার ভারতের। দীর্ঘদিন পর ঘরের মাঠে সিরিজ হাতছাড়া করল রোহিতরা। মুম্বইয়ে ১ নভেম্বর থেকে শুরু হবে তৃতীয় টেস্ট। তবে কী ঘরের মাঠে এটাই শেষ টেস্ট ম্যাচ হতে চলেছে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের? তেমনটাই মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। মুম্বইয়ে কিউয়িদের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টের পর ভারতের আবার ঘরের মাঠে টেস্ট রয়েছে ২০২৫ সালের অক্টোবরে। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে তারা। বর্তমানে এই ৪ ক্রিকেটারের বয়স, ফিটনেস এবং ফর্ম বিবেচনার পর একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, সবাইকে সেই সময় দলে দেখা যাবে তো?
২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর থেকে ভারত ঘরের মাঠে ৫৫টি টেস্ট খেলছে। যার মধ্যে ৪২টি টেস্টে জয় পেয়েছে ভারত, মাত্র ৬টি ম্যাচে পরাজিত হয়েছে তারা। ৫৫টি টেস্টের মধ্যে ২২টি টেস্টে এই ৪ ক্রিকেটার একসঙ্গে খেলেছেন, যার মধ্যে ১৭টি টেস্টে জয় পেয়েছে, ২টি ড্র হয়েছে এবং ৩টিতে পরাজিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে এই ৩ টেস্টেই অধিনায়ক ছিলেন রোহিত শর্মা। শুধু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে ভারতের টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়নি, এর আগে বহু টেস্টে টপ অর্ডারের ব্যর্থতা চাপা পড়েছে অশ্বিন, জাদেজা, কুলদীপ এবং অক্ষরের ব্যাটিংয়ে। উদাহরণস্বরূপ: ২০২২ বেঙ্গালুরু বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০২১ কানপুর বনাম নিউজিল্যান্ড, ২০২২ চট্টগ্রাম এবং মিরপুর বনাম বাংলাদেশ , ২০২৩ দিল্লি বনাম অস্ট্রেলিয়া এবং ২০২৪ রাঁচি বনাম ইংল্যান্ড।
২০২১-এর পর থেকে এশিয়ায় স্পিনের বিরুদ্ধে অচল বিরাট কোহলি, তাঁর ব্যাটিং গড় মাত্র ২৮.৩। তিনি পুণেতে মিচেল স্যান্টনারের বলে যেভাবে দু’বার আউট হয়েছেন তাতে স্পষ্ট বিরাটের বলের লাইন বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। এই দশকের শুরু থেকে কোহলি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৩টি টেস্ট খেলেছেন, রান করেছেন ১৮৩৩, গড় ৩২.৭৩। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় ৫ বার তিনি ডাক হয়েছেন এবং ৮ বার সিঙ্গল ডিজিট স্কোর করেছেন। এই একই সময়কালে তাঁর একদা সতীর্থ রাহানে এবং পূজারার গড় ৩২.৭ এবং ৩২.৯ যথাক্রমে। যদিও বোর্ড এই দুই ক্রিকেটারের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। অন্যদিকে অধিনায়ক রোহিত শর্মারও এশিয়ায় স্পিনের বিরুদ্ধে ব্যাটিং গড় ভালো নয় (৩৬.২)।
ভারত ২০২২ সালে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে রোহিত একটি আক্রমণাত্মক অভিপ্রায়ের সঙ্গে ব্যাট করার উপর জোর দিয়েছিলেন, এরপর তিনি টেস্ট ফর্ম্যাটেও সেই একই মনোভাব বহন করেন। অ্যাডিলেডের পর রোহিত ৩২টি টেস্ট খেলেছেন। যার মধ্যে তিনি ৫০ বা তার বেশি বল মোকাবেলা করেছেন মাত্র ১২ বার। যখন অধিনায়ক এই ধরণের ব্যাট করেন, তখন প্রায়শই অন্যদেরও সেই পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হতে হয়।
বল হাতে নিউজিল্যান্ডের খুব একটা ভালো প্রদর্শন করতে পারেনি রবিচন্দ্রন অশ্বিন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর টেস্টটি তিনি ভুলে যেতে চাইবেন। কিউয়ি বোলারদের থেকে বেশি টার্ন পেয়েও বারবার লেন্থ মিস করায় রান দিয়ে ফেলেন তিনি। এখন প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা সহজেই অশ্বিনের বিরুদ্ধে রান করে নিতে পারছেন। এখনও পর্যন্ত ১০৪টি টেস্টে তাঁর ইকোনমি রেট ২.৮৩। কিন্তু এবছর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজে তাঁর ইকোনমি রেট ছিল ৩.৩১, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছিল ৪.১২ এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছিল ৩.৮৯। স্বভাবতই বোঝা যাচ্ছে এখন অশ্বিনের বিরুদ্ধে সহজেই রান করে ফেলছেন ব্যাটসম্যানরা।
অন্যদিকে রবীন্দ্র জাদেজার এই সিরিজের সেরা স্পেলটি পুণে টেস্টের তৃতীয় দিনে এসেছিল যেখানে তিনি ৭২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনিও ইদানীং নিয়মিত ইনজুরিতে ভুগছেন। ২০১৩ সাল থেকে ৫৫টি হোম টেস্টের মধ্যে ৪৭টিতে খেলেছেন এবং যেখানে ২০২১ সালের পর তার মধ্যে ৬টি মিস করেছেন। বর্তমানে রাজনীতি এবং ঘোড়দৌড়ের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কারণে কতদিন জাদেজাকে খেলতে দেখা যাবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।