চাপে পড়তেই আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল। একে অপরের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। মনসংযোগ হারাতে শুরু করেছিলেন ফিল্ডাররা। মাঠের মধ্যেই হতাশা প্রকাশ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন আফগানরা। এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। যিনি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১২৮ রানে অপরাজিত ২০১ রান করে কার্যত একাহাতে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, অস্ট্রেলিয়া যখন ব্যাট করছিল, তখন প্রথম ১৫-২০ ওভারে আফগানরা দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন। পরপর উইকেটও পড়েছিল। কিন্তু সেই ছন্দ ভেঙে যেতেই আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস কমতে শুরু করে দিয়েছিল। আর অস্ট্রেলিয়া যত লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তত আফগানদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছিল বলে দাবি করেন অজি তারকা।
ম্য়াক্সওয়েল সেই মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ‘ক্লাব প্রেইরি ফায়ার’-র পডকাস্টে। যে পডকাস্টে ছিলেন প্রাক্তন অজি ক্রিকেটার তথা সর্বকালের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার-ব্যাটার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন। সেই পডকাস্টে ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘আমার ব্যাট বল লেগেছিল (ক্রিজে নেমেই প্রথম বলেই হ্যাটট্রিক বাঁচানোর লড়াই)। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে বলটা উইকেটকিপারের কাছে পৌঁছায়নি। আমি ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকতে চাইছিলাম। আমায় দেখে যাতে দোষী না মনে হয়, সেই চেষ্টা করছিলাম।’
ম্যাক্সওয়েল আরও বলেন, ‘তবে ব্যাটারদের চারপাশে ওদের (আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের, যাঁরা মরিয়া হয়ে উইকেটের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন) দৌড়াদৌড়ি করতে দেখছিলাম। আমি আশা করেছিলাম যে আবেগে ভেসে গিয়ে ওরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেবে। শুরুতেই কয়েকটি ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) নষ্ট করবে। এলবিডব্লুর কয়েকটি সিদ্ধান্ত বিপক্ষে যাওয়ায় ওদের উপর কিছুটা প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। ওদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলতে শুরু করেছিলাম আমি।’
তারইমধ্যে দু'বার ম্যাক্সওয়েলের সহজ ক্যাচ ফস্কে ফেলেছিলেন আফগানিস্তান ক্রিকেটাররা। দু'বারই একেবারে লোপ্পা ক্যাচ ছিল। প্রথমবার যখন ক্যাচ পড়েছিল, তখন ২৪ রানে খেলছিলেন ম্যাক্সওয়েল। দ্বিতীয়বার যখন জীবনদান পেয়েছিলেন, তখন ৩৩ রানে ব্যাট করছিলেন অজি তারকা। পরবর্তীতে একটি ‘ক্লোজ’ রিভিউয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন। যে রিভিউ দেখে নিজেই ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা শুরু করে দিয়েছিলেন। আউট হননি দেখে ফিরে এসেছিলেন। আর তারপর যেভাবে ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে ছেলেখেলা করে বাউন্ডারি মারছিলেন ম্যাক্সওয়েল, তাতে আফগানদের হতাশা আরও বাড়তে শুরু করেছিল।
ওই পডকাস্টে অজি তারকা বলেন, ‘প্রথম ১৫-২০ ওভারে ওদের (আফগানিস্তানের খেলোয়াড়েদের) যে এনার্জি ছিল, সেটা অবিশ্বাস্য ছিল। আমরা অনেকবার ওদের এরকম এনার্জির সাক্ষী থেকেছি। (তবে) আমিও উপমহাদেশের দলের বিরুদ্ধে অনেক ম্যাচ খেলেছি। তাতে আমি একটা জিনিস দেখেছি যে যদি ম্যাচের কঠিন সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে পিচ একেবারে সোজা গিয়েছে বলে মনে হয়। রান তুললেই যে শুধুমাত্র বিপক্ষকে চাপে ফেলে দেওয়া যাবে, সেটা নয়। শুধুমাত্র ক্রিজে থেকে প্রতি ওভারে একটি বা দুটি শট মারলেই সেটা সম্ভব হবে।’
ম্য়াক্সওয়েল দাবি করেন, তিনি যে স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন, তা কাজে দিয়েছিল। একটা সময় ম্যাচে আফগানিস্তান ছড়ি ঘোরালেও পরবর্তীতে তাঁর হাতে ম্যাচের রাশ চলে এসেছিল। ক্রমশ চাপ বাড়ছিল আফগানদের উপর। যাঁরা সেই ম্যাচে জিতলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার আশা জিইয়ে রাখতে পারতেন। ওই পডকাস্টে ম্যাক্সওয়েল দাবি করেন, নিজেদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েছিল আফগানদের। একে অপরের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছিলেন। হাত তুলে অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন।
আরও পড়ুন: AFG vs AUS: ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় দ্বিশতরান, আফগানদের মুখের গ্রাস কেড়ে সেমিতে অজিরা