কেন ভারতের হয়ে খেলেননি, বিসিসিআইয়ের কথা অবজ্ঞা করেছেন, খোলাখুলি উত্তর দিলেন ইশান কিষান

একান্ত সাক্ষাৎকারে ইশান কিশান বলেছেন কেন তিনি বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তিনি যখন বিরতিতে ছিলেন তখন তার রাজ্যের হয়ে না খেলার কারণ কি ছিল? যখন কেউ তার বোঝার চেষ্টা করেনি তখন তিনি তার পরিবারের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছিলেন সেটা কেম ছিল তাও জানান ইশান।

ভারতীয় দলের তরুণ হাই-রেটেড উইকেটরক্ষক ইশান কিষান সর্বশেষ নভেম্বরে ভারতের হয়ে খেলেছিলেন, তারপর থেকে তাঁকে ভারতীয় দলে সেভাবে দেখ যায়নি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময়ে টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে বিরতির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি ফেব্রুয়ারিতে ডিওয়াই পাটিল টুর্নামেন্টে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলেন। এই সময়ে তিনি জাতীয় দায়িত্বে ছিলেন না এবং সেই কারণে বিসিসিআই তাঁকে ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণের কথা জানান, তবে সেখানে খেলেননি ইশান কিষান এরপরেই কেন্দ্রীয় চুক্তি হারান ভারতীয় দলের এই তরুণ ক্রিকেটার।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কিশান বলেছেন কেন তিনি বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তিনি যখন বিরতিতে ছিলেন তখন তার রাজ্যের হয়ে না খেলার কারণ কি ছিল? যখন কেউ তার বোঝার চেষ্টা করেনি তখন তিনি তার পরিবারের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছিলেন সেটা কেম ছিল তাও জানান ইশান। তাঁর সেই সময়ে মনের অবস্থা কেমন ছিল তাও জানান তিনি। এরপরে তিনি বলেন ভারতের সতীর্থদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে দেখে তাঁর কতটা আনন্দ হয়েছিল।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় কি ১৯ নভেম্বরের হৃদয়বিদারক নিরাময় করেছিল?

ইশান কিষান বলেন, ‘নভেম্বর ১৯... আমরা পুরো টুর্নামেন্টে এত ভালো ক্রিকেট খেলেছি। একটি খারাপ খেলা এবং আমরা ফাইনাল হেরেছিলাম (৫০ ওভারের বিশ্বকাপ)। এটা হৃদয়বিদারক ছিল. সেদিনের খেলা আমাদের মত হয়নি। এটা নিছক দুর্ভাগ্য ছিল। আমরা সারা বছর সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম। কিন্তু এটাই তো ক্রিকেট।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদিও আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের অংশ ছিলাম না, আমি অতীতে সেই ড্রেসিংরুমের অংশ ছিলাম। আমি জানি এই দলটির বিশ্বকাপ জয়ের খিদেটা কতটা ছিল। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে, যখন আপনি একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবকিছু দিয়ে দেন এবং তারপরও আপনি জিততে পারেন না, তখন আপনার মাথা নীচু করা এবং স্ক্র্যাচ থেকে কাজ শুরু করা ছাড়া আপনার আর কোনও বিকল্প থাকে না। এটি খেলাটিকে সুন্দর করে তোলে কারণ এটি আপনাকে মুক্তির সুযোগ দেয়। খেলোয়াড়দের কাপ তুলে নেওয়া এবং ভারতে ফিরে আসার পর তারা যে অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন তা আমার জন্য খুবই উষ্ণ অনুভূতি ছিল। আমি আবেগটা বুঝতে পারি।’

ভ্রমণের ক্লান্তির কারণে আপনি ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছেন। আপনার এখন কেমন লাগছে?

ইশান বলেন, ‘আমি মনের একটি চমৎকার ফ্রেমে আছি. আমি আইপিএল খেলেছি। আমি মুম্বই যাচ্ছি, যেখানে আমি আসন্ন মরশুমের জন্য প্রস্তুতি চালিয়ে যাব।’

ইশান কিষানের পরবর্তী লক্ষ্য কী?

ইশান কিষান বলেন, ‘নিজেকে ফিট রাখা এবং আসন্ন টুর্নামেন্টের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা ভাবছি না। আমি বর্তমানের মধ্যে থাকতে চাই। এই মুহূর্তে, আমি কেবলমাত্র ছয় মাস আগে যা ছিলাম তার থেকে কীভাবে আরও ভালো এবং আলাদা খেলোয়াড় হওয়া যায় তার দিকে মনোনিবেশ করছি। আমি কয়েকটি উদ্ভাবনী শট এবং আমার উইকেট কিপিং নিয়ে কাজ করব। অতীতে কী ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা না ভাবাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘরোয়া মরশুম শুরু হওয়ার অপেক্ষায় আছি। আমি ঝাড়খণ্ডের জন্য ভালো করতে চাই তারপর দেখা যাক।’

গত ছয় মাসে আপনার জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী ছিল?

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুই না। এমন কোনও শিক্ষা নেই। এটি একটি লিখিত নিয়ম যে বিরতির পরে আপনার প্রত্যাবর্তন করতে হয়, আপনাকে আপনার ফিটনেস প্রমাণের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে। আমি শুধু মাথা নীচু করে আমার খেলায় কাজ চালিয়ে যেতে চাই।’

আপনি কি তিনটি ফর্ম্যাটেই খেলতে চান?

এর উত্তরে ইশান বলেন, ‘আমি নিজেকে তিন ফর্ম্যাটেই খেলতে দেখি। আমি টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে এবং টেস্টেও ভালো করেছি। আমি তিনটি ফর্ম্যাটেরই অংশ হতে চাই।’

এই গত কয়েক মাস কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

ইশান কিষান বলেন, ‘এটা হতাশাজনক ছিল। আজ আমি বলতে চাই না যে সবকিছু ঠিক ছিল। এটা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। আপনি অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে যান। এই সব আমার মনের মধ্যে চলছিল, কী হবে, কেন ঘটবে, কেন আমার সঙ্গে (কী হয়েছে, কেন আমার মত প্রশ্ন)। আমি যখন পারফর্ম করছিলাম তখন এই সব ঘটনা ঘটেছিল।’

কেন আপনি একটি বিরতি নিয়েছিলেন?

তিনি আরও বলেন, ‘আমি রান করছিলাম এবং তারপর আমি নিজেকে বেঞ্চে খুঁজে পেলাম। দলগত খেলায় এই জিনিসগুলো ঘটে। কিন্তু আমি ভ্রমণ ক্লান্তি অনুভব করেছিলাম। এর মানে কিছু ভুল ছিল, আমি ভালো বা ঠিক বোধ করছিলাম না এবং তাই আমি বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যাইহোক, দুঃখের বিষয়, আমার পরিবার এবং কয়েকজন কাছের মানুষ ছাড়া কেউ তা বুঝতে পারেনি।’

আপনার সিদ্ধান্তে আপনার পরিবার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

ইশান জানান, ‘একজন ক্রীড়াবিদ বাইরের লোকেরা যা বলছে তা মোকাবেলা করতে পারে। যে বিষয়টি আপনাকে চাপ দেয় তা হল আপনার বাবা-মা কীভাবে এটি নিচ্ছেন। কীভাবে তারা এটা মোকাবেলা করেন. আপনি যখন জানতে পারেন যে তারা সমানভাবে প্রভাবিত, এটি আপনাকে আঘাত করে, এবং আপনাকে ভিতর থেকে হত্যা করে। তবে সেই সময়ে, আমার পরিবারের সদস্যর থেকে আমি খুব সমর্থন পেয়েছিলেন। তারা আমাকে এবং আমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে আমি ভালো বোধ করছি না। তারা আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছে। তারা কখনই এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি কিন্তু তারা আমার চারপাশে ঘিরে ছিলেন এবং তাঁরা আমাকে কখনও একা ছেড়ে যাননি।’

আপনি কেন রঞ্জি ট্রফিতে ঝাড়খণ্ডের হয়ে খেলেননি?

বড় যুক্তি দিয়ে ইশান বলেন, ‘আমি একটি বিরতি নিয়েছিলাম এবং আমি মনে করি এটি স্বাভাবিক ছিল। একটা নিয়ম আছে, কামব্যাক করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করতেই হবে। এখন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলাটা আমার কাছে অন্যরকম ছিল কারণ এটার কোনও মানে ছিল না। আমি খেলার মত ফ্রেমে ছিলাম না এবং সে কারণেই আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। এটার কোনও মানে হয় না যে আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়ে তারপরে গিয়ে ঘরোয়া ম্যাচ খেলবেন। তারপর আপনি আন্তর্জাতিকভাবে খেলেছেন (তাহলে আমি ভারতের হয়ে খেলা চালিয়ে যেতে পারতাম)।’

ঋষভ ফিরেছেন, ধ্রুব জুরেল টেস্টে ভালো করছেন এবং সঞ্জু স্যামসনও রয়েছেন। জাতীয় দলে ফিরে আসা আপনার জন্য কতটা কঠিন হবে?

ইশান বলেন, ‘ঋষভকে অ্যাকশনে ফিরতে দেখে বেশ ভালো লাগছে। যতদূর প্রতিযোগিতা যায়, আপনি চ্যালেঞ্জ পছন্দ করেন এবং আপনি যখন সমস্ত মানসম্পন্ন ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, এটি আপনার খেলাকে উন্নত করে। এবং তারপর যখন আপনি এটি তৈরি করেন তখন মনে হয় আপনি এটি অর্জন করেছেন। আমি জানি এটা সহজ হবে না। কিন্তু আমি মনে করি প্রতিযোগিতা আপনাকে তৃপ্তির অনুভূতি দেয়। আমি এটা উপভোগ করি। আমি এটা নিয়ে কোনও চাপ নিই না।’