ফেসবুক লাইভে নিজের ক্ষোভ বিক্ষোভের ইঙ্গিত দিলেও ঝেড়ে কাশলেন না রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যের অর্থ ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব দিলেন শ্রোতাদের ওপরেই। শনিবার দুপুরে রাজীব কী বলেন তা নিয়ে উৎসাহ ছিল চরমে। দলীয় নেতৃত্বের একাংশের সমালোচনা করলেও মনে করিয়েছেন দলনেত্রীর আদর্শ অনুসরণ করে চলেছেন তিনি।
এদিন বেলা ৩টে থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক লাইভ দেখেছেন প্রায় ৬৭,০০০ মানুষ। একসঙ্গে লাইভ দেখেছেন প্রায় ১৩,০০০ মানুষ। প্রায় ৯ হাজার কমেন্ট ও ২৮ হাজার কমেন্ট পড়েছে সেখানে।
এদিনের ফেসবুক লাইভে মূলত তিনটি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন রাজীববাবু। যুব সমাজ দিশাহীন হয়ে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সঙ্গে বলেন, যুবকদের রাজ্য ছাড়া রুখতে শিল্প স্থাপন করতে হবে। ভাল কাজ করতে গিয়ে দলের নেতৃত্বের একাংশের বাধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেকথা জানানোয় তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যুব সমাজকে পথ দেখাতে হবে। কেন যুব সমাজ পিছিয়ে পড়বে? যুব সমাজ কেন লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কেন দিকভ্রষ্ট হবে? যখনই দেখি যুব সমাজ লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে, আমি চেষ্টা করি যুব সমাজকে দিশা দেখাতে। যুব সমাজ এমন একজনকে চাইছে যে তাদের পথ দেখাতে পারবে। খুব খারাপ লাগে যখন দেখি যুব ভাই-বোনেরা চাকরি চেয়ে চেয়ে পাচ্ছেন না। সবাইকে হয়তো চাকরি দেওয়া যায় না। কিন্তু যদি তাদের লক্ষ্য দেখানো যায় তাহলে অনেক কাজই সফল হয়’।
রাজীবের আক্ষেপ, ‘যখন দেখি যুবকরা চাকরি পাচ্ছে না। বাইরের রাজ্যে বা বিদেশে চলে যাচ্ছে, যখন দেখি এখানে পড়াশুনোর সুযোগ পাচ্ছে না বলে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে তখন আমারও হৃদয় অত্যন্ত উদ্বেলিত হয়। মনে হয়, এদের জন্য কিছু চিন্তাভাবনা করা উচিত। আমাদের রাজ্যে যে সম্পদ ও মেধা রয়েছে তা অন্য অনেক রাজ্যে নেই। বাংলার বুকে যদি শিল্প করা যায়, যদি আইটি সেক্টরের জন্য ভাল কিছু চিন্তা ভাবনা করা যায় যেখানে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তোমরা নিজেরাই করে নিতে পারবে। সবাইকে সরকারি চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যদি কাজের পরিবেশ তৈরি করা যায় তাহলে বহু বেকার যুবক যুবতীর স্বপ্ন সফল হবে। তাদের কান্না বন্ধ হবে। অনেক বাবামায়ের দুঃখ ঘুঁচবে’।
বনমন্ত্রীর দাবি, ‘আমি রাজনীতি করি মানুষের স্বার্থে। মানুষের জন্য যখন কাজ করেছি তখন ভাল লেগেছে। যখন পারিনি প্রতিবন্ধকতা এসেছে তখন মন খারাপ হয়েছে’।
দলের কর্মীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে বলে রাজীববাবুর দাবি, ‘আমার কর্মীদের কষ্ট – হতাশা আমি বুঝি। এই কর্মীদের কথা চিন্তা করেই তাদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করি। সেই কর্মীদের এক এক সময় আমরা ভুল বোঝাই। আমাদের কর্মীদের সাথে অবিচার করি। কর্মীদের যেন আমরা শ্রমিক মনে না করি। তারা শুধু একটু সম্মান চায়। আমি যখন যেখানে গিয়েছি কর্মীদের সম্মান দিয়েছি। কারও সঙ্গে কখনও দুর্ব্যবহার করিনি। আমার দলনেত্রীও সেই কথা বলেন। কিন্তু কোথাও কর্মীরা সম্মান না পেলে যদি কোনও কথা বলি সেটা কি অন্যায়? যখন কাজ করতে গিয়ে বাধা পাই, কিছু কথা বলি সেটা কি কোনও অন্যায়? নিশ্চিতভাবে অন্যায় নয়’।
দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধেও সুর চড়ান রাজীব। কারও নাম না করলেও বলেন, ‘আমি যখন একটা দিশা দেখানোর চেষ্টা করছি তখন কতিপয় নেতা সেটার অপব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। সেটাই আমার কাছে দুঃখ লাগে। মানুষকে কোনওদিন ঠকাবো না। দলনেত্রীর আদর্শকে সামনে রেখে মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমি মুখ খুললে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমার কাজে যারা বাধা দিচ্ছে সেটাকে নিয়ে তো কেউ বলছে না? তহলে আমাকে যেটুকু বলা হবে আমি সেটুকুই করবো? আমার নিজের কোনও স্বাধীনতা থাকবে না? আমার পদের কোনও মোহ নেই। মানুষের জন্য কাজ করতে যেটা ঠিক মনে হবে আমি সেটাকেই প্রাধাণ্য দিয়েছি’।
তিনি ভোটের আগে দর কষাকষি করছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার জবাবে রাজীব বলেন, ‘আমি ভোটের আগে মুখ খুলেছি এমন নয়। সিস্টেমে কোথাও কোনও সমস্যা রয়েছে বলে মনে হলে দলীয় ভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় সমস্যার কথা জানিয়েছি। যখন যেখানে যে ফোরামে জানানোর দরকার জানিয়েছি। এমন নয় যে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আজকে বলছে’।
তবে তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা কী তা নির্দিষ্ট করে জানাননি রাজীব। তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে তা বুঝে নিতে অনুরোধ করেন তিনি।