একদিকে টলিউড অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ আর অন্যদিকে ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা তথাগত রায়। অসমবয়সী এবং ভিন্ন ঘরানার এই দুই জনপ্রিয় ব্যক্তির মধ্যে শুক্রবার টুইটে লাগল যুদ্ধ। এর আগেও বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন বিজেপি–র বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায়। এবার রীতিমতো সায়নী ঘোষের ‘টাইপ’ নিয়ে কথা বলে বিতর্ক শুরু করলেন তিনি। তবে শেষ করলেন নিজেই। বললেন, ‘আর পারছি না। ক্ষ্যামা দে, মা লক্ষ্মী!’
সম্প্রতি এক বাংলা খবরের চ্যানেলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাসভায় অংশ নেন সায়নী। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘জয় শ্রীরাম স্লোগানটি আজ রণধ্বনিতে পরিণত হয়েছে। যা অত্যন্ত ভুল। আর এটি বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যেও পড়ে না। ঈশ্বরের নাম ভালবেসে বলা উচিত।’ আর তাঁর এই মন্তব্যের জেরেই রাজ্য বিজেপি যুব মোর্চার আইটি সেলের প্রাক্তন প্রধান অভিজিৎ বসাকের রোষের মুখে পড়েন তিনি। টুইটে অভিজিৎ সায়নীকে উদ্দেশ্য করে ও তথাগত রায়কে ট্যাগ করে লেখেন, ‘স্টুডিওতে বসে রাজনৈতিক লেকচার দিচ্ছে এবং ১৯৪৭–এর দেশভাগ ও সেই সময় ঘটে যাওয়া একাধিক জেনোসাইডকে অস্বীকার করেছে।’
এর পরই আসরে নামেন তথাগত রায়। তিনি লেখেন, ‘এই টাইপটাকে দেখেই কথায় বলে মূর্খের অশেষ দোষ। পশ্চিমবঙ্গে বাম ও সেকুলারপন্থীরা এদের শিখিয়েছে— ছিঃ এসব বলতে নেই। করুক না ওরা কিছু হিন্দু খুন ও মেয়েদের ধর্ষণ! হোক না সোয়া কোটি হিন্দু গৃহহীন পথের ভিখারি, ওরাও তো মানুষ।’ এভাবেই দেশভাগ ও তার নেপথ্যে থাকা ‘মুসলিম’দের প্রতি বিষোদগার করেন তথাগত।
চুপ করে বসে থাকেননি সায়নী। পাল্টা টুইটে তিনি তথাগতকে আক্রমণ করে বলেন, ‘আরে টাইপ গোছের কথা বলে নিজের মানসিক ও সামাজাকি সংকীর্ণতার পরিচয় দিলেন। আপনার মতো ‘জিনিস’ সত্যি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাম্য নয়!’ সায়নী ইংরেজি হরফে তবে বাংলায় তথাগত রায়কে উত্তর দিয়েছিলেন। কিন্তু তা পছন্দ হয়নি বিজেপি নেতার। তিনি পাল্টা কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘এসব কী আবোল–তাবোল লিখেছে? তাও আবার রোমান হরফে!’ যদিও সায়নী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সত্যি বললেই আবোল–তাবোল মনে হয়। আমার যা হরফে ইচ্ছে তাতেই লিখব। এটাই আমার পছন্দ। আপনি পারলে এভাবেই পড়ার চেষ্টা করুন।’
এর পরও খান দুয়েক টুইটে চলতে থাকে তর্ক। শেষে ‘আর পারছি না। ক্ষ্যামা দে, মা লক্ষ্মী’ বলে পাততাড়ি গুটিয়ে ময়দান ছাড়েন তথাগত রায়। আর শেষ জবাবে সায়নী বিজেপি–র প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে লেখেন, ‘যারা দেশভাগের সময় কত হিন্দু মরেছিল, তাই এখন মুসলমান মারব বলে জাস্টিফাই করছেন, এই মুহূর্তে দেশের মানুষকে কত যত্নে রেখেছেন তা ক্ষুধা সূচক দেখলে বোঝা যায়।’ সায়নীর অভিযোগ, ‘হিন্দুত্ব করতে গিয়ে হিন্দুদেরই ভুলে গেছেন। গান্ধী কলোনিকে গডসে কলোনি আপনারাই বানাবেন, আমি নিশ্চিত।’
যদিও প্রথমে এই কাদা ছোড়াছুড়িতে অংশ নিতে চাননি অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। এ ব্যাপারে তিনি আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, ‘আমি তথাগত রায়কে আগে থেকে চিনতাম না। কোনও পূর্বপরিচয় ছিল না। কিন্তু হঠাৎ আমায় ট্যাগ করে আমার ‘টাইপ’ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। এর উত্তর দেওয়াটা জরুরি। আমি ওঁর হাঁটুর বয়সি। কোন স্তরে নামতে চাইছেন তাঁরা, এটা স্পষ্ট হয়ে গেল আমার কাছে।’ সায়নী–তথাগত টুইট–যুদ্ধ থামালেও চুপ করে বসে নেই নেট–নাগরিকরা। কেউ সায়নী, কেউ তথাগতর পক্ষ নিয়ে তাঁরা এখনও মত্ত কাদা ছুড়তে!