বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রটি বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। এই কেন্দ্রে মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র হল, রঘুনাথপুর, শালতোর, ছাতনা, রাণীবাঁধ, রায়পুর, তালডাংরা এবং বাঁকুড়া। এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে রঘুনাথপুর এবং শালতোর তপশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত এবং রাণীবাঁধ ও রায়পুর কেন্দ্র দুটি তপশিলি উপজাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই কেন্দ্রের মোট ভোটদাতা ছিল ১৫ লক্ষ ৩ হাজার ৮১২। সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির ডঃ সুভাষ সরকার এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি প্রার্থী। সামনে তৃণমূলের বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী। বাঁকুড়ায় ধারে ও ভারে বিজেপি কিছুটা এগিয়ে থাকলেও তৃণমূল কোনও কসুর রাখছে না লড়াইয়ে।
১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস জগন্নাথ কোলে। ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পশুপতি মণ্ডল এই কেন্দ্রে জয়যুক্ত হন। ১৯৬২ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রটি জাতীয় কংগ্রেসের দখলই থাকে। ১৯৬৭ লোকসভায় বাঁকুড়া কেন্দ্রটিতে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া অর্থাৎ সিপিআই-এর জেএম বিশ্বাস জয়ী হন ২৯ হাজার ৭৭০ ভোটে। ১৯৭১ এর লোকসভা নির্বাচনে ফের এই কেন্দ্রটি থেকে জাতীয় কংগ্রেসের শংকর নারায়ণ সিংহদেও ২৫ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় লোক দলের পক্ষ থেকে বিজয় মণ্ডল এই কেন্দ্রে ৮০ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হয়।
বাসুদেব আচারিয়ার গড়
১৯৮০ সালে সিপিআইএম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়া ৪৩ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন এই কেন্দ্র থেকে। ১৯৮০ থেকে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত দীর্ঘ তিন দশক ধরে এই কেন্দ্রে বাসুদেব আচারিয়া সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাসুদেব আচারিয়া অভিনেত্রী মুনমুন সেনের কাছে ৯৮ হাজার ৫০০ ভোটে পরাজিত হন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করে ভারতীয় জনতা পার্টির ডাঃ সুভাষ সরকার ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ভোটে জয়যুক্ত হন। শেষ কতগুলি লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া কেন্দ্রের ভোটদানের হার ছিল গড়ে ৮০ শতাংশ।
এবার কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে প্রার্থী তালড্যাংরার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী। সুভাষবাবু ভোটে নজর কাড়ার জন্য অভিনব কায়দায় রাস্তায় স্নান করিয়ে দিয়েছেন লোকজনকে। এই নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি তৃণমূল। তাঁকে দিয়ে বাথরুম সাফ করতে বলিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুভাষবাবুর বিরুদ্ধে স্থানীয় স্তরে কিছুটা অসন্তোষ ছিল। মূলত তাঁকে অনেক সময় পাওয়া যায় না, এটাই ছিল কর্মীদের একাংশের কথা। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, প্রচারকে সুসংহত করতে পেরেছেন তিনি। অন্যদিকে তৃণমূলও ফ্রন্টফুটে থেকে প্রচার করেছে। তরুণ নীলাঞ্জন দাসগুপ্তকে টিকিট দিয়েছে সিপিআইএম। তিনি বিশেষ দাগ কাটতে পারেননি। ষষ্ঠ দফায় ২৫ মে এখানে ভোটগ্রহণ করা হবে।
আমরা ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে বাঁকুড়া কেন্দ্রটির রাজনৈতিক চালচিত্র বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব। রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টির বিবেকানন্দ বাউরী পাঁচ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হয়। শালতোর কেন্দ্রটিতে চন্দনা বাউরী ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে ৪১৪৫টি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ছাতনা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ৭ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন। রাণীবাঁধ, রায়পুর, তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়ী হন। অন্যদিকে, বাঁকুড়া কেন্দ্রটিতে নীলাদ্রিশেখর দানা ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে ১৪৬৮ ভোটে জয়ী হন তৃণমূল কংগ্রেসকে হারিয়ে। সার্বিক ভাবে বাঁকুড়া সংসদীয় ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টির জোর টক্কর হবে। ফলাফলের জন্য তারপর শুধু অপেক্ষা।