বারাসত লোকসভা কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা কেন্দ্র। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত এই লোকসভা কেন্দ্রটি ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই কেন্দ্রটিতে তফশিলি জাতি বা উপজাতিদের জন্য কোনও সংরক্ষণ নেই। এই কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদার। ২০১৯ সালের তথ্য বলছে এই কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনের মোট ভোটদাতা ছিলেন ১৫ লক্ষ ১২ হাজার ৭৯২ জন। ঐতিহাসিকভাবে এই কেন্দ্রটিতে সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক সর্বাপেক্ষা বেশি সফল দল হলেও বর্তমানে এই কেন্দ্রটি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অধীনে। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে এই বারাসত লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলি হল হাবরা, অশোকনগর, রাজারহাট-নিউটাউন, বিধাননগর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত এবং দেগঙ্গা। বারাসতে তৃণমূলের প্রার্থী হলেন কাকলি ঘোষদস্তিদার। বিজেপির প্রার্থী হলেন স্বপন মজুমদার। বামপ্রার্থী হলেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঐতিহাসিকভাবে লোকসভা নির্বাচনে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল। ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাসত কেন্দ্রটি থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অরুণচন্দ্র গুহ জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালের নির্বাচনে ফের অরুণচন্দ্র গুহ জয়ী হয়েছিলেন ৪৬ হাজার ৮০০ ভোটের মার্জিনে। ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাসত কেন্দ্রটি থেকে প্রথম ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে আরএম সেন জয়ী হয়েছিলেন ৩২ হাজার ৫০০-এর কিছু বেশি ভোটে। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাসত কেন্দ্রটি থেকে নরেন্দ্রনাথ সেন জয়ী হন। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের অন্যতম সহযোগী দল ফরওয়ার্ড ব্লকের চিত্ত বসু এই কেন্দ্র থেকে ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন৷ ১৯৮০ সালের নির্বাচনে চিত্ত বসু ৯৩ হাজার ৯০০-এর বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন এই কেন্দ্র থেকে। ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের কাছ থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল জাতীয় কংগ্রেস। কংগ্রেস প্রার্থী তরুণকান্তি ঘোষ এই কেন্দ্র থেকে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে ফের চিত্ত বসু ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৯১, ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে আরও দু’বার চিত্ত বসু ফরওয়ার্ড ব্লক-এর পক্ষ থেকে এই কেন্দ্র থেকে জয়যুক্ত হয়েছিলেন। তবে ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রথমবারের জন্য আত্মপ্রকাশ করেই রাজ্য জুড়ে সাতটি আসনে জয়লাভ করেছিল। তার মধ্যে একটি ছিল বারাসত কেন্দ্র। ডঃ রঞ্জন কুমার পাঁজা ৬৬ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন এই কেন্দ্র থেকে। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনের ডঃ পাঁজা জয়ী হয়েছিলেন। ২০০৪ সালের লোকসভায় ফের এই আসনটি ফরওয়ার্ড ব্লক, তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। সুব্রত বসু এই কেন্দ্র থেকে ১২ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাসত কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদার জয়ী হয়েছিলেন এই কেন্দ্র থেকে। ২০১৪ সালের লোকসভায় ফের আরেকবার ডঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন ১ লক্ষ ৭৩ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনেও কাকলি ঘোষ দস্তিদার এই কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনে ভোটের হার ৮৩.৯ শতাংশ থাকলেও, ২০১৯ সালের লোকসভায় তা নেমে দাঁড়িয়েছিল ৭৫ শতাংশ।
এবার আমরা দেখে নেব, ২০২১ বিধানসভা ভোটের নিরিখে এই কেন্দ্রে কোন রাজনৈতিক দল এগিয়েছিল। ২০২১ সালে রাজ্যজুড়ে ৮৪.৭ শতাংশ মানুষ ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হাবরা বিধানসভা কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জয়ী হয়েছিলেন ২৮ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। অশোকনগর কেন্দ্র থেকে নারায়ণ গোস্বামী তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ২৩ হাজার ৫০০টির বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন। রাজারহাট-নিউটাউন কেন্দ্রটি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের তাপস চট্টোপাধ্যায় ৫৬ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হন। মধ্যমগ্রাম কেন্দ্রে রথীন ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৪৮ হাজারের কিছু বেশি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। দেগঙ্গা আসনটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী রহিমা মণ্ডল ৩২ হাজার ৫০০টির বেশি ভোটে জয়ী হন। সামগ্রিকভাবে এই লোকসভা কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের হার অনেকটাই বেশি অন্যান্য বিরোধী দলের তুলনায়।