ঘাসফুল ঝড়ে যখন খড়কুটোর মতো উড়ে গেল বিরোধীরা তখন বাংলার মাটিতে এক চিলতে হলেও লাল আবির দেখা গেল। আর তাতেই কমরেডদের জুটল রক্তিম অভিনন্দন। দীর্ঘ হারের পর ঈশান কোণে লাল নিশান তাদের অক্সিজেন জুগিয়েছে। সাফল্য সামান্য মিললেও তা বাকিদের থেকে নিঃসন্দেহে ভাল। তাহেরপুর পুরসভার জয় সেই সাক্ষ্যই বহন করছে।
এখন তাহেরপুরে কেন বামেরা সাফল্য পেল? এই প্রশ্ন এখন রাজ্য–রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে একটিও আসন না পাওয়া সিপিআইএম এই পুরসভার ক্ষমতা ধরে রাখল। নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভার মোট ১৩টি ওয়ার্ড আছে। তার মধ্যে ৮টিতে জয় পেয়েছে সিপিআইএম। বাকি ৫টিতে জয়ী হয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। এখানে সিপিআইএমের সাফল্য আসার প্রথম কারণটি হল, নতুন প্রজন্মের উপর তারা ভরসা রেখেছিল।
এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এই পুরসভা এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ করেছে তারা। আর সংগঠনকে মজবুত করে জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছিল। তাদের একটা বক্তব্য ছিল, কোনও দলবদলুকে তারা প্রার্থী করেনি। যা বিদ্যুৎ গতিতে কাজ করেছিল। ফলে দেখা যাচ্ছে এখানে বিজেপি কোনও আসন পায়নি। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের আসন গতবারের থেকে কমেছে।
উল্লেখ্য, গত পুরসভা নির্বাচনেও এই পুরসভা বামেদের দখলে ছিল। তখন ৭টি ওয়ার্ড পেয়েছিল বামেরা। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ৬টি আসন। সুতরাং সিপিআইএমের একটি আসন বেড়েছে তাহেরপুরে। তৃণমূল কংগ্রেসের কমেছে একটি আসন। এটা বরাবর বামেদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বলেই পরিচিত। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এখানের ১২টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। ভোট শতাংশের বিচারে দুইয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, বামেরা ছিল তৃতীয় স্থানে। সেখানে নিজেদের গড় ধরে রাখা নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য।
এই পুরসভায় বামেদের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতি নেই। প্রচারে দুই দল নিজের নিজের কাজের ফিরিস্তিই দিয়েছিল। এখানে নাগরিক পরিষেবায় ১০০ শতাংশ কাজ করেছে সিপিআইএম। আর সেটাই প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল। আর সেই ফসল এখন ঘরে তুলল তারা। এখানে এখন তারাই পুরবোর্ড গঠন করবে। যেখানে বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস।
এবারের পুরসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর পুরসভায় ১টি ওয়ার্ড পেয়েছে বামেরা। রাজপুর–সোনারপুরেও একটি ওয়ার্ড পেয়েছে সিপিআইএম। গারুলিয়াতে ফরওয়ার্ড ব্লক একটি আসন পেয়েছে। গোবরডাঙা পুরসভাতেও একটি ওয়ার্ড পেয়েছে সিপিআইএম। অশোকনগরে দুটি ওয়ার্ড পেয়েছে সিপিআইএম। বীরভূমেও একটি ওয়ার্ড পেয়েছে সিপিআইএম। উত্তরপাড়ায় একটি ওয়ার্ড পেয়েছে সিপিআইএম। যা অক্সিজেন জুগিয়েছে বামেদের।