পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে হিংসায় ছিন্নভিন্ন হয়েছে ভাঙড়। সেই ভাঙড়েই গিয়ে পৌঁছলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গতকালই রাজ্যের রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে কড়া বিবৃতি প্রকাশ করেছিল রাজভবন। জানা গিয়েছিল, নিদের পূর্ব নির্ধারিত সব কর্মসূচি বাতিল করে ভাঙড়ে যাবেন রাজ্যপাল। সেই মতো বেলা গড়াতেই হিংসা কবলিত এলাকায় গিয়ে পা রাখলেন সিভি আনন্দ বোস। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললেন রাজ্যপাল। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হিংসার বিবরণ শোনেন তিনি।
আজ প্রথমেই ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারে যান রাজ্যপাল। এই এলাকাতেই মনোনয়ন ঘিরে তুমুল অশান্তি ছড়িয়েছিল। গতকাল দুই আইএসএফ কর্মী খুন হন এখানে। সেই বিজয়গঞ্জ বাজারে পৌঁছে এলাকা পরিদর্শন করেন রাজ্যপাল। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে চান যে গতকাল বোমা ছোড়া হয়েছিল কি না। এদিকে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। উল্লেখ্য, বিগত তিনদিন ধরেই ভাঙড় কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পর্ণিত হয়েছিল। বিরোধীরা ইউক্রেনের সঙ্গে ভাঙড়ের তুলনা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশকে সেখানে অসহায় অবস্থায় দেখা যায়। এই আবহে এখনও সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে। এরই মধ্যে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং নিরাপত্তা চান।
এর আগে গতকালই রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, কোনও অবস্থাতেই এই হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। বোস জানান, ভোটের আগেই হিংসার ঘটনায় রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দেখে তিনি হতবাক। হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, 'আমি পদক্ষেপ করলে তা অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ হবে।' পরে রাতে বিবৃতি জারি করে রাজ্যপাল বলেন, 'গণতন্ত্রে জনগণই সব। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে হিংসার কোনও স্থান নেই। ভোটের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে নির্বাচনে জয় নির্ধারণ করা হয়, মৃতের সংখ্যায় না। তবে এখানে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভও আক্রান্ত। এর অর্থ গণতন্ত্র আক্রমণের মুখে, এর মানে সংবিধান, নতুন প্রজন্ম আক্রমণের মুখে। শয়তানের এই খেলা এবার শেষ হওয়া উচিত, শেষ হবে। পশ্চিমবঙ্গে শেষের শুরু হবে।'
এদিকে হিংসার প্রেক্ষিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এই আবহে রাতেই স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। এদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়েও রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। এই নিয়ে তৃণমূলের কুণাল ঘোষ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলেও পঞ্চায়েত ভোটে জিতবে তৃণমূল কংগ্রেস’। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলে পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুমিছিল অন্তত থামবে।