পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ থেকে মনোনয়ন পর্ব শেষ পর্যন্ত বাংলায় হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বোমা–গুলির শব্দে গ্রামবাংলার মানুষ আতঙ্কিত। এমনকী বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তার মধ্যেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ভাঙড়, ক্যানিং ছুটে গিয়েছেন। আর সেখান থেকে রাজভবনে ফিরেই ‘পিস রুম’ বা শান্তি কক্ষ খোলেন তিনি। বড়লাটের এই উদ্যোগে এখন রাজভবনে নালিশের পাহাড় জমেছে বলে সূত্রের খবর। আজ, সোমবার থেকে তা চালু হয়েছে। এমনকী বিজেপির সাংসদ রাজু বিস্তা নিরাপত্তা নিয়ে রাজভবনে ইমেল করে সাহায্য চেয়েছেন। আর আজ ‘পিস রুমে’ গিয়ে সব খতিয়ে দেখে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণই হবে।’
এদিকে এই শান্তি কক্ষে ঘনঘন বাজছে ফোন। ফোন তুলতেই শুনতে হচ্ছে নালিশ। আর একই সঙ্গে ঢুকছে প্রচুর ই–মেল। এখনও পর্যন্ত অভিযোগ ৩০০ পার করে গিয়েছে বলে দাবি রাজভবন সূত্রে। একদিনেই যদি প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ে তাহলে বাকি দিনগুলিকে কী হবে? উঠছে প্রশ্ন। সকাল থেকেই এখানে তুমুল ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। ফোন, ই–মেল যে ঝড় তুলেছে তা সামলাতে গিয়ে দিন থেকে রাত হয়ে যাচ্ছে। রাজভবনের ‘শান্তি কক্ষ’–এর ফোন নম্বর – ০৩৩ ২২০০–১৪৬১। এই অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে বলে খবর।
অন্যদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে হোক চায় না রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তাই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছে। এখন যে অভিযোগ বেশি জমা পড়ছে সেগুলি হল—মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার নিয়ে চাপ, প্রার্থী প্রত্যাহার নিয়ে চাপ, বাড়িতে এসে হামলা, রাতে রাস্তায় ঘিরে ধরে মারধর, বাড়িতে হুমকি চিঠি, আত্মীয়দের হুমকি– সহ আরও অনেক কিছু। এই সব অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট থানায় এবং জেলাশাসকের কাছে পদক্ষেপ করার কথা বলা হচ্ছে। সেই কাজ কতদূর হচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঠিক কী বলছেন দিলীপ ঘোষ? এই নিয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘রাশি রাশি ফোন আসছে শান্তি কক্ষে। গোলমাল হলে ফোন করে মানুষ জানাচ্ছেন। বহু প্রার্থী ঘরছাড়া, গ্রাম ছাড়া। অনেককে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এক প্রার্থীর আত্মীয়কে খুন করা হয়েছে। তাই তাঁরা ভাবছেন, সেন্ট্রাল ফোর্স এলে হয়তো এই ভয় কাটবে। রাজ্য সরকার চাইছে না বাহিনী আসুক। তাই এই কোর্ট, এই বেঞ্চ করে সময় কাটিয়ে দিতে চাইছে। যদি বাহিনী এসে হিংসা নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে বিরোধীরা উৎসাহে যেমন মনোনয়ন দিয়েছেন তেমনভাবেই জিতে বেরিয়ে যাবেন। তাই তারা জান-প্রাণ লাগিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী আটকাতে চাইছেন।