সাগরদিঘি উপনির্বাচনের দিন তাৎপর্যপূর্ণ একটি কথা বলেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয়-সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই দিনই তিনি জানিয়েছিলেন, সেখানে জেতার সম্ভাবনা কম। তাঁর কথায়, '২ নম্বরে ছিলাম, দু'নম্বরে থাকার সম্ভাবনা।' তাঁর কাছে তখন প্রশ্ন ছিল তাহলে জিতবে কে? তিনি বলেছিলেন, ' অনেক পার্টি আছে, দেখি কে জেতে!'
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিকর্টবর্তী তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বাইশ হাজার ন'শ ভোটে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। তিন নম্বরে স্থানে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহা। অর্থাৎ দিলীপ ঘোষের কথা মতো, জয় তো আসেই নি উল্টে তিন নম্বর নেমে গিয়েছে বিজেপি। শুধু তাই নয় গতবারের প্রার্থী মাফুজা খাতুনের প্রাপ্ত ভোটের তুলনামূলক ভাবে অনেক কম ভোট পেয়েছে বিজেপি।
ঘটনার পূর্বাপর ব্যাখ্যা করে মনে হতেই পারে আসলে নিজেরা জিততে পারবে না জেনে তৃণমূলকে হারাতে কিছুটা হালকা চালে খেলেছে বিজেপি। ভোটের দিনে কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি প্রার্থীকে। তা দেখে তৃণমূল বলেছিল বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করেছে কংগ্রেস। সাগরদিঘিতে হাতের জয়ে সেই তত্ত্বকেই আগামী দিনে বড় করে সামনে আনবে শাসকদল।
সাগরদিঘিতে জয় যে আসবে না সেটা বোধহয় দলের নিজস্ব নেটওয়ার্ক দিয়ে বুঝে নিয়েছিল বিজেপি। তাই ভোটের প্রচারে সেভাবে ছিল না কোনও চমক-ধমক। তৃণমূল যেভাবে তারকা তালিকা তৈরি করে প্রচার করেছে। তাঁর সিকি ভাগও দেখা যায়নি বিজেপির তরফে। ২০১১ এবং ২০১৬ সালের বিধান নির্বাচনে পাঁচ নম্বরে ছিল বিজেপি। ২০২১ সালে দু'নম্বরে উঠে আসে তারা। উল্লেখেযোগ্য ভাবে সেবার ওই আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেয় গেরুয়া শিবির। সে বার এক ধাক্কায় ২০ শতাংশ ভোট বাড়ে বিজেপি।
তবে এবার তা করেনি তারা। পরিসংখ্যান বলেছে সাগরদিঘি বিধানসভায় ৬৫ শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু। হিন্দু ভোটার ৩২ শতাংশ। সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটে পেতেই সেবার সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। জয় না পেলেও এক লাফে পাঁচ থেকে দুনম্বরে চলে এসেছিল বিজেপি। যদিও সেবার আরও অনেক কিছু ফ্যাক্টর ছিল। কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস বলছেন, এনআরসির একটা বড় ‘ফ্যাক্টার’ ছিল। বিভাজনের অঙ্কটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তবে পরিসংখ্যান বলছে, সাগরদিঘিতে এখন পর্যন্ত যতগুলি বিধানসভা ভোটে হয়েছে তাতে কোন কালেই সংখ্যালঘু প্রার্থী জেতেনি। এমনটা খুব জোর গলায় বলা যাবে না যে বিজেপি সংখ্যালঘু প্রার্থী দিলে তিনি জয় আনতে পারতেন। এছাড়া এবার ভোট পরিযায়ী শ্রমিকরাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টার ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলির হিসাব অনুযায়ী সাগরদিঘি বিধানসভার ৩০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র পাঁচ হাজার ফিরতে পেরেছেন। স্বাভাবকি ভাবে ভোটের পরিমাণ কমেছে সব রাজনৈতিক দলেরই।
ত্রিপুরায় জয় নিয়ে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে আবীর খেলা হলেও সেই আবীরের একটা অংশ ছিলে সাগারদিঘির জন্য। কেন তাঁর কারণও জানিয়েছেন বিজেপি নেতা রুদ্রনীল। তিনি বলেন, ‘তিনি বলেন যে ভাবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আধিকারী ভোট লুটের চেষ্টা রুখে দিয়েছেন তাকে ধন্যবাদ জানাব। এতে মানুষের সুবিধা হয়েছে। অধীর চৌধুরী তো বলেই দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার ফলেই সুষ্ঠু ভাবে ভোট করা হয়েছে।’ অর্থাৎ জয় বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী হলেও এই জয়ে যে তাঁদের অনেকটাই ভূমিকা আছে বলেন জানিয়েছেন বিজেপি নেতা।
তবে বিজেপির এই অন্যের জয়ে আপন আনন্দ গোছের ব্যাপার যতই থাকুন না কেন তাদের মনে রাখতে হবে ২০২১ থেকে এখন পর্যন্ত যে কটি পুরসভা ও বিধানসভা উপনির্বাচন হয়েছে তাতে কিন্তু প্রায় বেশির ভাগ আসনে পদ্মের অবস্থান তিন নম্বরে। তাই শুধু হালকা চালের তত্ত্বে একে আটকে রাখা যাবে না। ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন, তার আগে সহজে মাঠ ছেড়ে দেওয়া দল বিজেপি নয়। তবে কী গেরুয়া শিবিরের সাংগঠনিক দুর্বলতা আবার প্রকট হল এই হারে? (বাংলার ২৪টি লোকসভা আসনে দুর্বল বিজেপি, শক্তিশালী করতে আসছেন ৬জন মন্ত্রী)