ব্যারাকপুরে এবার ত্রিমুখী লড়াই। লোকসভায় সম্মুখ সমরে পার্থ,অর্জুন এবং দেবদূত। এটা লোকসভা নির্বাচন না পৌরাণিক যুদ্ধক্ষেত্র তা বলা যাবে না। বিগত কয়েক বছরে বারবারই সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি এই ব্যারাকপুরকে কেন্দ্র করে। কখনও অশান্তির জন্য অর্জুন সিংয়ের ঘাড়ে দোষ ঠেলেছে তৃণমূল কংগ্রস, তো আবার কখনও জামাই আদর করেই তাঁকে দলে নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু দুবছর কাটার আগেই মধুচন্দ্রিমা পর্বে ইতি ঘটেছে। আরও একবার দল পরিবর্তন করে অর্জুন সিং এখন বিজেপির প্রার্থী। তৃণমূলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি টক্কর হবে তা বলাই বাহুল্য, কিন্তু এখানে বড় ফ্যাক্টর বামের ভোট। ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন বামেদের প্রার্থী অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। HT বাংলায় জানালেন, তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।
আরও পড়ুন-জুতো ছিঁড়ল মমতার, মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেফটিপিন লাগালেন নিজেই, পরে পা মেলালেন নৃত্যে
এর আগে টালিগঞ্জ থেকেও লড়েছিলেন, সেবারও ছিল সেয়ানে সেয়ানে লড়াই বাবুল সুপ্রিয় এবং অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে, এবার অবশ্য লড়াই আরও কঠিন। কারণ বিধানসভায় যখন লড়েছিলেন দেবদূত তখন রাজ্যে তাঁদের বিধায়ক ছিল দুই অঙ্কে। কিন্তু এখন যখন তিনি লড়তে যাচ্ছেন, তখন লোকসভা এবং বিধায়সভায় বামেদের থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে তাঁদের আসন সংখ্যা নামিয়ে এনেছেন শূন্যতে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের আস্থা অর্জন করে ঘুরে দাঁড়াতে বামেদের অন্যতম ভরসাই দেবদূত ঘোষ। কারণ মহম্মদ সেলিমের মুর্শিদাবাদ আসনের পর বামেদের অন্যতম সম্ভাবনাময় কেন্দ্র তড়িৎ বরণ তোপদারের এক সময়ের গড় ব্যারাকপুরই। HT বাংলায় দেবদূত ঘোষ জানালেন ব্যারাকপুর কেন্দ্রে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং লক্ষ্যের কথা।
প্রশ্ন- ব্যারাকপুর এবারে হাইভোল্টেজ কেন্দ্র,সবার চোখ এদিকে। নিজেকে কীভাবে দেখছেন?
দেবদূত ঘোষ- অনেকে এটা বলছে যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। শুরুর দিকে সিপিআইএমকে এখানে লড়াইয়ের মধ্যেই রাখা হচ্ছিল না। ব্যারাকপুরের মাটি মহম্মদ ইসমাইল, গোপাল বসুর মাটি। এখানে মানুষই সিদ্ধান্ত নেয়। এখন দুষ্কৃতিরা টাকার জন্য রাজনীতি করছে। চপ শিল্পের লোকজন, জমি হাঙররা এখানে রাজনীতি করছে, কিন্তু মানুষ এটা পছন্দ করে না। শিক্ষিতদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, কিন্তু মানুষের যা প্রয়োজন, তাঁর জন্য বামেরা লড়ছে, সেই জন্য খুব ভলো সাড়া পাচ্ছি।
প্রশ্ন- ব্যারাকপুরে তো ভোটের আগে পরে গন্ডগোল হতে দেখা গেছে অতীতে, আপনাদের লোক কই?
দেবদূত ঘোষ- আইনের শাসন নেই সেরকম। নির্বাচন কমিশনের আওতায় ভোট হচ্ছে, তাও অশান্তি হলে কিছু করার নেই। তবে মানুষ শান্তি চায়, যেটা বামেরা দিতে চায়। গোপল বসু বা লক্ষ্মী সেহগাল, তাঁরা বন্দুক ধরতে জানতেন না, তেমন নয়। কিন্তু মানব সমাজ তো গুলি বন্দুক বা পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের সংস্কৃতি দিয়ে চলে না। যেভাবে চাল চুরি, ত্রিপল চুরি, চাকরি চুরি হয়েছে, আমরা তা রুখতে চাই, সেই কারণেই বামেরা লড়ছে।
আরও পড়ুন-ভোটের সাতকাহন- ‘অর্জুন সুবিধা করতে পারবে না,ভোট মেশিনারি আমরাও বুঝি’-পার্থ ভোমিক
প্রশ্ন- তড়িৎ বরণ তোপদার কোনও টিপস দিয়েছেন?
দেবদূত ঘোষ- তড়িৎদা আমার সঙ্গেই আছেন। এখন হাটতে পারেননা, বলেছেন আশীর্বাদ আছে। এখানে লড়াই তৃণমূলের আর তাঁর দোসর বিজেপির সঙ্গে। তড়িৎদা বলেছেন, যে কোনও দরকারে যেতে। আমি ওনার বাড়িতেও গেছিলাম।
প্রশ্ন- অভিনয় আর রাজনীতি একসঙ্গে চালাচ্ছেন?
দেবদূত ঘোষ- আমি দু নৌকায় পা দিয়ে চলিনা। দেশকে ভালো রাখতে হবে, সেই কারণে ভোটে লড়ছি। আমি এই লড়াইয়ে পিছিয়ে গেলে দেশের মানুষ ভালো থাকবে না, তাই ভোটের জন্য ছবি শ্যুট থেকে পুরোপুরি ছুটি নিয়ে নিয়েছি।
প্রশ্ন- পরিবারের সকলে, বিশেষ করে মেয়ে আর স্ত্রী কি বলছে?
দেবদূত ঘোষ- রাজনীতিতে ত্যাগমূলক কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে আমি তো পেশাগত কারণে রাজনীতিতে আসিনি, তাই পরিবার আমায় খুব সমর্থন করে। আমার মেয়ে খুবই আমায় সাপোর্ট করে, মোটিভেট করে। খবরের কাগজে ভালো লেখা বেরোলেই আমায় সঙ্গে সঙ্গে ফরওয়ার্ড করে। আমি খুব ভাগ্যবান শ্যুটিং আর রাজনীতি দুই জগতেই আমি পরিবারের খুব সমর্থন পেয়েছি, কারণ দুটোই খুব অনিশ্চয়তার জীবন।
পরিসংখ্যান বলছে ২০১৯ সালে বিজেপির অর্জুন সিং এই কেন্দ্রে জিতেছিলেন ১৪ হাজার ভোটে, আরও মজাদার তথ্য বলছে ২০১৪ সালে বামেরা যে ভোট পেয়েছিল তাঁর থেকে প্রায় ১.৫লক্ষ ভোট কম পেয়েছিল তাঁরা ২০১৯ সালে। অন্যদিকে বিজেপি ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিল। অথচ তৃণমূলের ভোট কমেছিল মাত্র ২১ হাজার। ফলে আরও একবার বামের ভোট যদি রামে না যায়, সেক্ষেত্রে যে ব্যারাকপুরের মাটিতে তৃণমূল এবং বামেদের ফলাফল ভালো হতে পারে বলে মত রাজনৈতিকমহলের।