২০০০ সালে বিহার রাজ্যের দক্ষিণ বিহার অংশটি পৃথক হয়ে গিয়ে ঝাড়খণ্ড রাজ্যটি গঠিত হয়। এই রাজ্যটি গঠিত হওয়ার পর এখনো পর্যন্ত চারবার লোকসভা নির্বাচন সংঘটিত হয়েছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন অর্থাৎ ২০২৪ সালের নির্বাচনটি ঝাড়খণ্ডে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশানুসারে চারটি ধাপে সম্পন্ন করা হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হয়ে যাওয়ার পর মে মাসের ২৫ তারিখ তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তৃতীয় ধাপে এই রাজ্যের মোট ৪ টি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের ভোটগ্রহণ হবে। কেন্দ্রগুলি হলো গিরিডি, ধানবাদ, রাঁচি, জামশেদপুর।
এবার এই কেন্দ্রটিতে বিজেপির প্রার্থী দুলু মাহাতো, অন্যদিকে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী শ্রীমতী অনুপমা সিং একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন। অনুপমার স্বামী বিধায়ক, তিনিই মূলত এই আসনে প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। অন্যদিকে দুলুকে প্রার্থী করা নিয়ে বিজেপির মধ্যে অসন্তোষ ছিল। তিনবারের বিধায়ক দুলুকে কেন প্রার্থী করা হল, সেই নিয়ে অনেক জল্পনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আছে। যদিও সেসবকে আমল দিতে রাজি নয় বিজেপি। পশুপতি নাথ সিংকে প্রার্থী না করায় উচ্চজাতের মানুষের অসন্তোষ তাদের বিরুদ্ধে আসতে পারে, এমনটাও আশঙ্কা দলীয় কর্মীদের।
ধানবাদ লোকসভা কেন্দ্রটি ছয়টি বিধানসভা নিয়ে গঠিত। সেগুলি হলো বোকারো, চন্দনকিয়ারী, সিন্দ্রি, নিরসা, ধানবাদ, ঝারিয়া। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ধানবাদ লোকসভা কেন্দ্রটিতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী চন্দ্রশেখর দুবে ৩৭.৮% ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২৫.১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির রিতা বর্মা এবং ১৫.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন মার্ক্সিস্ট কোঅর্ডিনেশনের এ.কে রায়। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পূর্বের নির্বাচিত সাংসদ চন্দ্রশেখর দুবে ২৪.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। প্রথম স্থানে ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির পশুপতিনাথ সিংহ। তিনি ৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে ৫৮০৪৭ টি ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বিজেপির পশুপতিনাথ সিংহ পুনরায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারে তার ভোট শতাংশ বেড়ে হয়েছিল ৪৭.৫ আর উল্টোদিকে কংগ্রেস প্রার্থী অজয় কুমার দুবে ভোট পেয়েছিলেন ২১.৯ শতাংশ। ২০১৯ সালের শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী পশুপতিনাথ সিংহ বিপুল ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮ লক্ষ ২৭ হাজার ২৩৪ এবং দ্বিতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেস প্রার্থী কীর্তি আজাদ পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৪০ টি ভোট। এবারে এই কেন্দ্রে বিজেপির ভোট শতাংশ আগেরবারের থেকে ১৮.৫ শতাংশ বেড়ে হয় ৬৬ শতাংশ।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ধানবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা গুলির শেষ বিধানসভা ভোটের ফলাফল। ২০২০ সালের শেষ বিধানসভা ভোটে এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছয়টি বিধানসভার মধ্যে একটি বাদে বাকিগুলিতে জিতেছিল বিজেপির প্রার্থীরা। একমাত্র ঝারিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছিল কংগ্রেসের প্রার্থী। বোকারো, চন্দনকিয়ারী, সিন্দ্রি, নিরসা, ধানবাদ এই কেন্দ্রগুলিতে জয়লাভ করেছিল বিজেপি প্রার্থীরা। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচনে মোট ৮১ টি আসনের মধ্যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ৩০ টি আসন পেয়ে প্রথম স্থানে ছিল, ২৫ টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি এবং কংগ্রেস ছিল তৃতীয় স্থানে ১৬ টি আসন পেয়ে। কংগ্রেস এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জোট বেঁধে রাজ্য সরকার গঠন করেছিল।