এবার রাজ্যজুড়ে লোকসভার ময়দানে নেমেছিলেন, দীপ্সিতা, সৃজনের মত সিপিআইএমের ছাত্র-যুব স্টকের নেতৃত্ব। আপাততভাবে সোশাল মিডিয়া কিংবা বাস্তবে কিছু পকেটে জনসমর্থনও মিলেছিল ভালোই। কিন্তু আবারও হেরে গেলেন সকলেই। সত্যিই কি জয়ের কোনও সম্ভাবনা ছিল? নাকি শুধুই অনুমান, ‘হাইপ’? বাস্তবের ফলাফল বলছে, রাজ্যজুড়েই বামের ভোট শেয়ার ৫ শতাংশের কিছু বেশি। ভোট মিটতেই ফেসবুকে ‘জয়ী দীপ্সিতা’ পোস্টে অন্য এক বার্তা দিতে চাইছিলেন শ্রীরামপুর লোকসভার সিপিআইএম কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু সেই তিনেই শেষ করলেন দীপ্সিতা।
গতকাল শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা চলছে শ্রীরামপুর কলেজে। ইভিএম মেশিন খোলার পর থেকেই র্যাপিড ফায়ার রাউণ্ডের ঢঙে তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কবীর শংকর বোস ও দীপ্সিতা ধরের থেকে অনেকটাই এগিয়ে যান। দশ-বারো রাউন্ড গণনা শেষে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী কবীর শংকরের সঙ্গে ব্যবধান এসে দাঁড়ায় প্রায় লক্ষাধিক ভোটের। প্রসঙ্গত কল্যাণ পেয়েছেন ৬ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮০০ভোট, সেখানে দীপ্সিতা পেয়েছেন ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮০০ ভোট। হুগলী জেলার শ্রীরামপুর লোকসভা বিস্তীর্ণ শিল্পাঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। ঐতিহাসিক ভাবেই বামপন্থি রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র গঙ্গা পাড়েই এই জনপদ। শাসক বামফ্রন্টের নেতৃত্বে জোর করে জমি অধিগ্রহণ ও পালাবদলের শুরু হয়েছিল এই জেলার সিঙ্গুর থেকেই। আবার, কোন্নগর-উত্তরপাড়া সহ এই লোকসভা কেন্দ্রের বেশ কিছু পকেটে হারানো জনসমর্থন ফিরে পেয়েছে সিপিআইএম। ২০১৯ সালে ১ লক্ষ ৫২ হাজার ২৮১ ভোট পেয়েছিলেন সিপিআইএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর, সেখানে এখানে দীপ্সিতা পেয়েছেন ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮০০ ভোট।
গতকাল ভোটগণনা কেন্দ্রে বসেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দীপ্সিতা বলেন, 'দুর্নীতি ইসুতে ভোট হয়নি। বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে তৃণমূলকে মানুষ বেছে নিয়েছে। আমরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিরোধী নয়। আমরা ভাণ্ডার দিয়ে চাকরি বিক্রি করার বিরুদ্ধে। আমরা আবার মানুষের কাছে যাব।' এই আত্মবিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরী সেকোনও রাজনৈতিক দলের জন্যই, আর যদি তারা বামপন্থী বলে দাবি কবে, তবে সে ক্ষেত্রে তো বটেই। এখন দেখার কথায় আর বাস্তবের প্রয়োগের মেলবন্ধন ঘটাতে পারেন কিনা দীপ্সিতারা।
নেতৃত্ব যখন বলছেন তারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিরোধী নয়, তখন সংগঠক-কর্মী-সমর্থকরা অন্য সুরে কথা বলছেন কেন সেসব প্রশ্নও থাকবে। এছাড়া আজকের বাংলা তথা দেশের রাজনীতির সাপেক্ষে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি, ডানপন্থী রাজনীতির আধিপত্যের সময়ে সিপিআইএম দল কিভাবে রাজনীতি নির্মাণ করবেন, তা বড় প্রশ্ন। লোকসভা-বিধানসভাতে যাওয়াকেই মূল লক্ষ্য স্থির করলে তফাৎ থাকে না ডানে আর বামে। ২ লক্ষ ৩৭ হাজারের বেশি, ১৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে অঞ্চলে পড়ে থেকেও লড়াই গড়ে তোলা যায়, বামপন্থী রাজনীতিক ন্যূনতম দিকগুলি না বুঝলে ভোট কিংবা আন্দোলন, শূন্য হাতেই ফিরতে হবে।