পাঁচ রাজ্যের ফলাফলের পর এখন প্রশ্ন উঠছে, দেশের বিরোধী মুখ কে? কারণ এতদিন আলোচনা উঠে আসত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। কিন্তু এখন নয়াদিল্লির পর আরও একটি রাজ্য গেল আম আদমি পার্টির দখলে। কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে বিজেপিকে দুরমুশ করে পঞ্জাবে ক্ষমতায় এলো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। তাই জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। ঝাড়ু হাতে ঝেঁটিয়ে সবাইকে বিদায় করেছে খড়গপুর আইআইটি’র প্রাক্তন ছাত্রের দল।
দুটো রাজ্য যাঁর হাতে আছে তাঁকেই বিরোধী মুখ ধরা হবে এটাই দস্তুর। কারণ কংগ্রেসের হাল খারাপ। এই নির্বাচনেও সেটা স্পষ্ট। গোয়া রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস বিরাট কোনও সাফল্য পায়নি। সুতরাং গোয়া তৃণমূল কংগ্রেসের নয়। একটি আসনও তারা জিততে পারেনি। যা পেয়েছে সেটা জোট শরিক মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি। সুতরাং তৃণমূল কংগ্রেস বা তার সুপ্রিমোকে আর দেশের বিরোধী নেত্রী বলা হবে কিনা সেটা নিয়ে বিস্তর চর্চা শুরু হয়েছে।
এই নির্বাচনের আগে আপ সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দাবি ছিল, ‘মানুষের ভালবাসার কাছে সব ষড়যন্ত্র হার মানবে।’ ঠিক যেন সেটাই হল। এখানে কংগ্রেস, বিজেপি এবং অকালি দলের বিরুদ্ধে একা লড়াই করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন তিনি। প্রায় ৯০টি আসনে আম আদমি পার্টি নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। সেখানে কাছাকাছি কেউ আসতে পারেননি।
এখন প্রশ্ন, পঞ্জাবে কেন আম আদমি পার্টি জিতল? নয়াদিল্লিতে সামান্য ক্ষমতা দিয়েই মানুষের মন জয় করেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নয়াদিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ‘মহল্লা ক্লিনিক’ করেছিলেন তিনি। এছাড়া ফ্রি ওয়াইফাই জোন। মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, বিদ্যুতের মাসিক খরচে ছাড়, বিদ্যালয়গুলিতে বিনামূল্যে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। আর সেই ফর্মূলাই তিনি ব্যবহার করেছিলেন পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে।
জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে আম আদমি পার্টি এখন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল—কংগ্রেসের ছন্নছাড়া দশা, পঞ্জাবে কৃষকরা কংগ্রেসের নেতৃত্বকে বিশ্বাস করেনি, বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার জন্য। কেজরিওয়ালের প্রচারের মূল বিষয়ই ছিল বেকারত্ব, মাদক সমস্যা এবং দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়ার। তাই বিকল্প হিসাবে মানুষ আপকেই বেছে নিয়েছে। তাছাড়া ‘বিতর্কিত’ তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চলা কৃষক আন্দোলনের ‘আঁতুড়ঘর’ পঞ্জাবে বারবার ছুটে গিয়েছেন আপ নেতারা। আর নির্বাচনের ফলপ্রকাশের একদিন আগে কেজরিওয়ালের প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে তিন কোটি পঞ্জাববাসীর নাগরিক সুরক্ষার দায় নেবে আপ সরকার। যা অন্যান্যরা বলার সাহস দেখায়নি। তাই এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিপরীত মুখ তাঁকেই ভাবা হচ্ছে।