কৌশলের নিরিখে যে বরাবর বাকিদের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকেন, সেই প্রমাণ যেন আবারও দিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীরা যখন দেশের অভ্যন্তরেই জাতীয়তাবাদের ভাবাবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করল, তখন লোকসভা ভোটের প্রচারের অঙ্গ হিসেবে সোজা বিদেশে চলে গেলেন মোদী। তিনি দাবি করলেন, মাসকয়েক পরেই ভারতে লোকসভা নির্বাচন হলেও বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের প্রতিনিধিদের দু'হাত বাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করছে। অথচ সাধারণত কোনও দেশে যখন নির্বাচন এগিয়ে আসে, তখন কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নেয় অন্যান্য দেশ। নয়া সরকারের নীতি কীরকম হবে, কোন পথে এগোবে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা না থাকায় সেই পথে হাঁটা হয়। কিন্তু এবার সেটা হয়নি। কারণ আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জাপানের মতো দেশও জানে যে ভারতে ক্ষমতায় থাকবে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। তাই বিশ্বের কোনও দেশ ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেনি।
আরও পড়ুন: PM Modi at NDA meeting: 'নিউ ইন্ডিয়া….', ফুলফর্মের লড়াইয়ে ‘INDIA’-র পালটা NDA-র পুরো নাম তৈরি মোদীর
মঙ্গলবার এনডিএয়ের বৈঠকের শেষে মোদী বলেন, ‘সাধারণত যখন কোনও দেশে সাধারণ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসে, তখন সেটার প্রভাব সংশ্লিষ্ট দেশের বৈশ্বিক সম্পর্কের উপরও পড়ে। সকলের মনে হয় যে এটা নির্বাচনের বছর। এখন ঢিমেগতিতে যাওয়া যাক। নির্বাচন হয়ে যাক, নয়া সরকার আসুক, তারপর ভাবনাচিন্তা করা যাবে। সেটাই স্বাভাবিক। যে দেশে সামনেই নির্বাচন আছে, সেই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একশোবার ভাবনাচিন্তা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সবসময় নির্বাচনের ফলাফলের অপেক্ষায় থাকে। শেষ বছর হলে ভাবে যে একবার নির্বাচন হয়ে যাক, তারপর দেখা যাবে।’
মোদী বলেন, ‘যে সরকার বিদায়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, সেই সরকারের জন্য কোনও দেশ সময় বা শক্তি নষ্ট করতে চায় না। কিন্তু এবার ভারতের বিষয়টা কিছুটা আলাদা। সবাই জানে যে কয়েক মাস পরেই আমাদের এখানে নির্বাচন হবে। তারপরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দেশ, সেটা আমেরিকা হোক, ফ্রান্স হোক, অস্ট্রেলিয়া হোক, জাপান হোক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি হোক, ব্রিটেন হোক - সবাই এনডিএ সরকারের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। ভারতকে সম্মান প্রদান করছে বিশ্বের তাবড়-তাবড় দেশ। কত দেশ ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করছে। সেটার একটাই কারণ - ওরাও জানে যে এনডিএ সরকারের উপরই ভারতের মানুষের আস্থা আছে। এখানকার মানুষের জনমতও কী হবে, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশও জানে।’
প্রধানমন্ত্রীর সেই কৌশলে একেবারেই অবাক নয় রাজনৈতিক মহল। বরং ওই মহলের মতে, মোদী যে বিরোধীদের থেকে এককদম এগিয়ে থাকে, তা ফের প্রমাণিত হল। ২০১৪ সালে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে ক্ষমতায় এসেছিল মোদী সরকার, তখন ভার্চুয়াল দুনিয়ার সঙ্গে একেবারেই মানিয়ে নিতে পারেনি বিরোধী দলগুলি। পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে বিজেপি নিজেদের দিকে ভোট এনেছে। আর এখন যখন সেই একই কৌশল নিচ্ছে বিরোধীরা, তখন একধাপ এগিয়ে বিশ্বের মঞ্চে চলে গেলেন মোদী।