ভোট আসে যায়, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান পড়ে থাকে অবহেলায়। এটাই হয়তো চুম্বকে ঘাটালের কাহিনি। যদিও ক্ষমতায় এলে এবার দ্রুত এই মাস্টার প্ল্যান শেষ করার কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে এই নিয়ে নিজের জনসভায় রা কাটেননি অমিত শাহ। তবে এবারের ভোটে সেটা গৌণ। মূল বিষয়টি হল সিনেমা স্টার দেবের বিরুদ্ধে বিজেপি নামিয়েছে আরেক তারকা হিরণকে। প্রথম দিকে দুই পক্ষই বিশেষত দেব সৌজন্যের কথা বললেও যত প্রচার এগিয়েছে ধারালো হয়েছে আক্রমণ। দেবের বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগও। ২৫ মে ষষ্ঠ দফার ভোটে এখানে ভাগ্য নির্ধারিত হবে এই দুই তারকা প্রার্থীর। সিপিআইয়ের তপন গাঙ্গুলিও আছেন লড়াইয়ে, যদিও তিনি বিশেষ দাগ কাটতে পারেননি।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রটি পশ্চিম মেদিনীপুরের ছ’টি বিধানসভা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত। পাঁশকুড়া পূর্ব, সবং, পিংলা, ডেবরা, দাসপুর, ঘাটাল এবং কেশপুর এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তথ্য বলছে এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ছিল ১৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮৬১। বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে ঘাটাল এবং কেশপুর তপশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত। বর্তমান সময়ে ঘাটালের সাংসদ বিখ্যাত অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেব। ১৯৫১ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল, মধ্যবর্তী দীর্ঘ সময়কাল এই লোকসভা কেন্দ্রের অস্তিত্ব না থাকলেও ২০০৯ সালে ফের লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ঘাটাল। পূর্বতন পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্রটি অবলুপ্ত হয়ে নতুন ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র গঠিত হয়।
১৯৫১ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিআই-এর পক্ষ থেকে নিকুঞ্জবিহারী চৌধুরী এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নিকুঞ্জবিহারী মাইতি এই কেন্দ্রে জয়ী হন। ১৯৬২ এবং ১৯৬৭ সালে পরপর দু’বার জাতীয় কংগ্রেসের দখলে থাকে এই নির্বাচনী ক্ষেত্রটি। ১৯৭১ সালে জগদীশ ভট্টাচার্য সিপিআই-এর পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রটিতে জয়লাভ করেন। ফের ২০০৯ সালে লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় সিপিআই-এর বর্ষীয়ান নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত। তিনি ৫৩.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নূরে আলম চৌধুরীকে পরাজিত করেন। জয়ের মার্জিন ছিল ১৩ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটিতে সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে দু'লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে দীপক অধিকারী ওরফে সংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ফের এই কেন্দ্র থেকে দীপক অধিকারী জয় যুক্ত হন এক লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে। দ্বিতীয় হয়েছিলেন বিজেপির ভারতী ঘোষ, দলের ভোট বেড়েছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ। এবার কি অসাধ্যসাধন করতে পারবেন হিরণ। টার্গেটকি শক্ত কিন্তু যেভাবে মাটি আঁকড়ে লড়েছেন তিনি, অঘটনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা গুলিতে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঠিক কেমন হয়েছিল। পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ফিরোজা বিবি ৮ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হন। সবং লোকসভা কেন্দ্রটিতে মানস রঞ্জন ভূঁইয়া তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৯৮০০ ভোটে জয়ী হন। পিংলা বিধানসভা কেন্দ্রে অজয় মাইতি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৬৬০০ ভোটে জয়ী হয়েছিল। ডেবরা কেন্দ্রেও তৃণমূল কংগ্রেসের হুমায়ুন কবীর ১১ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে। দাসপুর ও কেশপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মমতা ভূঁইয়া এবং শিউলি সাহা জয়ী হন। অন্যদিকে ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে হারিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি’র শীতল কাপাট ৯৬৬ ভোটে জয়ী হন। ফলে ধারে ও ভারে তৃণমূল এগিয়ে অনেকটাই। চূড়ান্ত ফলাফল জানতে ৪ জুনের অপেক্ষা।