২০০০ সালের আগে ঝাড়খণ্ড বিহার রাজ্যের অন্তর্গত ছিল তখন এই অঞ্চলটি দক্ষিণ বিহার নামে পরিচিত ছিলো। ২০০০ সালের ১৫ ই নভেম্বর এটি ঝাড়খণ্ড নামে পৃথক রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই রাজ্যটি গঠিত হওয়ার পর দেশে মোট চার বার লোকসভা নির্বাচন এখনো পর্যন্ত হয়েছে। সেগুলি হলো যথাক্রমে ২০০৪, ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। রাজ্যের ১৪ টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটি হলো হাজারিবাগ। এই আসনটি তফসিলি জাতি বা উপজাতির সংরক্ষিত আসন নয়, এটি থেকে যে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশানুসারে রাজ্যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন চারটি ধাপে হবে। ১৩ই মে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের পর দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে মে মাসের ২০ তারিখ। ঐদিন হাজারিবাগ-সহ আরও দুইটি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ হবে। এবারের নির্বাচনে বিজেপির পক্ষ থেকে মনীশ জয়সওয়াল এবং জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী জয় প্রকাশ ভাই প্যাটেল নির্বাচনী ময়দানে মুখোমুখি লড়বেন।
১৯৯৮-এর পর প্রথমবার সিনহা পরিবারের কেউ এবার হাজারিবাগ থেকে ভোটের ময়দানে নেই। তাই অনেকটাই কমেছে আসনের জৌলুস। এখন আর ভিআইপি আসন নয় এটি। যদিও কেন সিনহারা কেউ টিকিট পেলেন না, সেই নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। বিজেপির মধ্যে ধীরে ধীরে জয়ন্ত সিনহার গুরুত্ব কমার নেপথ্যে যশবন্তের বিদ্রোহের কতটা ভূমিকা, সেই নিয়েও হয়েছে অনেক কথা। এর মধ্যে খবর এল যে জয়ন্তের ছেলে কংগ্রেস যোগ দিয়েছেন। পরিবার যদিও সেই কথা অস্বীকার করেছে। তবে সব মিলিয়ে দল যে খুব স্বস্তিতে আছে সেটা নয়। সেই কারণেই হাজারিবাগে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সহ একাধিক প্রভাবশালী নেতা এসে প্রচার করে গিয়েছেন।
হাজারিবাগ লোকসভা কেন্দ্রটি পাঁচটি বিধানসভা নিয়ে গঠিত। বিধানসভা গুলির নাম হল বাড়হী, বারকাগাঁও, রামগড়, মান্ডু, হাজিরীবাগ। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (সি.পি.আই) দলের প্রার্থী ভুবনেশ্বর প্রসাদ মেহতা ৫০.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে হাজারিবাগ কেন্দ্র থেকে ভোটে যেতেন। ৩৫.৫ শতাংস ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী যশবন্ত সিনহা। এর পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই যশবন্ত সিনহা বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী সৌরভ নারায়ণ সিং’কে ৪০ হাজার ১৬৪ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। এই নির্বাচনে বিজয় প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ৩১.৮ শতাংশ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিজেপি প্রার্থী কংগ্রেসের সৌরভ নারায়ন সিং’কে ভোটে পরাজিত করে এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিজেতা প্রার্থী জয়ন্ত সিনহা ভোট পেয়েছিলেন ৪২ শতাংশ এবং পরাজিত প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ২৫.৬ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট শতাংশ বেড়ে হয় ৬৭.৪ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত সিনহা ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫৮৪ ভোটের বিরাট ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থী গোপাল প্রসাদ সাউকে হারিয়ে পুনরায় এই আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কংগ্রেস প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ২৩.১ শতাংশ।
বিধানসভায় কী হয়েছে-
এক নজরে দেখে নেয়া যাক হাজারিবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা গুলির শেষ বিধানসভা ভোটের ফলাফল। ২০২০ সালের শেষ বিধানসভা ভোটে এই লোকসভা কেন্দ্রের পাঁচটি বিধানসভার মধ্যে দুটি আসন পেয়েছিল বিজেপি এবং তিনটি আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস প্রার্থীরা। হাজারিবাগ ও মান্ডু’তে ভোটে জিতে নির্বাচিত হয়েছিল বিজেপি প্রার্থীরা এবং বাড়হী, বারকাগাঁও, রামগড় কেন্দ্রগুলি পেয়েছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে মোট ৮১ টি আসনের মধ্যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ৩০ টি আসন পেয়ে প্রথম স্থানে ছিল, ২৫ টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি এবং কংগ্রেস ছিল তৃতীয় স্থানে ১৬ টি আসন পেয়ে। কংগ্রেস এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জোট বেঁধে রাজ্য সরকার গঠন করেছিল।
শেষ বিচারে এই আসনে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে কড়া লড়াই আছে। তবে বামেদের এখানে একটা নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ক আছে। সিপিআই প্রার্থী কতটা ভোট কাটতে পারেন, তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভোটের কতটা কংগ্রেস পেতে পারে, তার ওপরেই হয়তো নির্ভর করবে হাজারিবাগের ভাগ্য।