দেশের যে সব কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে সবার মধ্যেই আগ্রহ থাকে, তারমধ্যে অন্যতম হল হায়দরাবাদ। দেশের অন্যতম বৃহৎ শহরে দীর্ঘদিন ধরেই একচ্ছত্র আধিপত্য আসাদউদ্দিন ওয়েইসির। এক কথায় বলতে গেলে তিনি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুসলমান নেতাদের মধ্যে একজন ও মোদী বিরোধী হিসেবে পরিচিত। এবার সেই ওয়েইসির প্রভাব হ্রাস করতে শক্ত প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। চতুর্থ দফায় ১৩ মে হায়দরাবাদে ভোটগ্রহণ, যার দিকে নজর থাকবে সবার।
অসংরক্ষিত এই কেন্দ্রটিতে ১৯৫২ সাল থেকেই লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান মতে এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ১৯ লক্ষ ৫৭ হাজার ৯৩১ জন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) -এর পক্ষ থেকে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে আসর পুনর্বিন্যাসের পর হায়দ্রাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি হল মালাকপেট, কারওয়ান, গোশামহল, চারমিনার, চন্দ্রায়ণগুট্টা, ইয়াকুতপুরা, বাহাদুরপুরা।
লোকসভা নির্বাচনের ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে হায়দ্রাবাদ লোকসভা কেন্দ্রটিতে ১৯৫২ সালে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আহমদ মহিউদ্দিন জয়লাভ করেন। জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিনায়ক রাও ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন এই কেন্দ্র থেকে। ১৯৬২, ১৯৬৭ এবং ১৯৭১-এর নির্বাচনে হায়দ্রাবাদ কেন্দ্র থেকে গোপালিয়া সুব্বুকৃষ্ণ মেলকোট সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রথম দু’বার তিনি জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এবং শেষবার তেলেঙ্গানা প্রজা সমিতির পক্ষ থেকে জয়লাভ করেন। ১৯৭৭ এবং ১৯৮০ সালে কে এস নারায়ন এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। প্রথমবার জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এবং পরেরবার জাতীয় কংগ্রেস (ইন্দিরাপন্থী)-এর পক্ষ থেকে। ১৯৮৪ সালে প্রথমবারের জন্য এই কেন্দ্রে সুলতান সালাউদ্দিন ওয়েইসি জয়লাভ করেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে। এর পরবর্তীতে তিনি এআইএমআইএম-এর পক্ষ থেকে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত পরপর পাঁচটি লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
২০০৪ সালে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এআইএমআইএম-এর পক্ষ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনেও আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এই কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটের মার্জিনে জয় লাভ করেন। ২০১৪ সালে যেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, ওয়েইসি পেয়েছিলেন ৫৩ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে ২০১৯ সালে এই ভোটের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ শতাংশ। তেলাঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা গুলির মধ্যে কেবলমাত্র গোশামহল কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টির টি রাজা সিং জয় লাভ করেছিলেন। বাকি সাতটি কেন্দ্রেই এআইএমআইএমের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে এআইএমআইএম থেকে বিজয়ী সাংসদ এবং বিজেপির মাধবী লতা হায়দরাবাদ লোকসভায় একে অপরের সাথে লড়াই করছেন। অন্যদিকে বিআরএস এই কেন্দ্রে গাদ্দাম শ্রীনিবাস যাদবকে প্রার্থী করেছে। কংগ্রেসের প্রার্থী মহম্মদ সমীর। ওয়েইসিরা গত দশবার হায়দরাবাদ থেকে জিতেছেন। আসাদউদ্দিন নিজে জিতেছেন চারবার। ফলত তাঁকে হারানো যে খুবই কঠিন কাজ, তা বলাই বাহুল্য। তবে বিজেপির প্রার্থী মাধবী লতা ইতিমধ্যেই তাঁর গরমাগরম বক্তব্যের মাধ্যমে প্রভাব ফেলেছন। ওয়েইসিকে তিনি জিন্নাহর থেকেও খারাপ মানুষ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর হয়ে প্রচার করেছেন অমিত শাহ, সমর্থনে পোস্ট করেছেন মোদী। ধনী পরিবার থেকে আসা মাধবীলতা প্রচারে কোনও খামতি রাখেননি। তবে ভোটাররা কি তাঁর ওপর সদয় হবেন, না ফের ভরসা রাখবেন ওয়েইসির ওপর, জানা যাবে ৪ জুন।