তমলুকের মত হয়তো অতটা হাই-প্রোফাইল লড়াই নয়, কিন্তু অধিকারী গড়ের অন্তর্ভুক্ত কাথিঁর ওপরেও নজর থাকবে রাজ্যবাসীর। ধারে ও ভারে এখানে শিশির অধিকারীর ছেলে সৌমেন্দু অধিকারী এগিয়ে থাকলেও বিধায়ক উত্তম বারিককে দাঁড় করিয়ে নিশ্চিত ভাবেই ভালো ফাইট দিচ্ছে তৃণমূল। অন্যদিকে কংগ্রেসের হয়ে লড়াইয়ে আছেন উর্বশী ভট্টাচার্য। ২৫ জুন ষষ্ঠ দফায় এই আসনে ভোট।
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লোকসভা। বর্তমানে এই লোকসভা আসনটিতে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, রামনগর, এগরা ও মুখবেড়িয়া এই সাতটি কেন্দ্র নিয়ে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। এর মধ্যে খেজুরি আসনটি তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে ১৯৫২ সাল থেকে লোকসভা নির্বাচন পরিচালিত হতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে এই কেন্দ্রটি সিপিআইএমের শক্ত গড় ছিল, যা পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে যায়। ১৯৫২ ও ১৯৬২-তে বসন্ত কুমার দাস কংগ্রেসের হয়ে জিতেছিলেন। ১৯৫৭-তে প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির হয়ে জেতেন প্রমথ নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই একই পার্টির হয়ে ১৯৬৭ ও ৭১-এ জেতেন সমর গুহ। ১৯৭৭-এ ফের জেতেন তিনি, তবে এবার অন্য পার্টির হয়ে।
১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি কেন্দ্রটি তিনি ভারতীয় লোক দলের পক্ষ থেকে জাতীয় কংগ্রেসের সুধাংশু পাণ্ডাকে পরাজিত করেন। ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএম প্রার্থী সুধীরকুমার গিরি জয়ী হন। এর পরবর্তী নির্বাচনে ১৯৮৪ সালে সুধীরকুমার গিরিকে হারিয়ে এই আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন জাতীয় কংগ্রেসের ফুলরেণু গুহ। ১৯৮৯ সালে ফের এই কেন্দ্রটি সুধীরকুমার গিরির নেতৃত্বে সিপিআইএম ছিনিয়ে নেয়। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত পরপর চারটি লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের পক্ষ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সুধীরকুমার গিরি। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নীতীশ সেনগুপ্ত এই কেন্দ্রে জয়ী হন। ২০০৪ সালে ফের সিপিআইএম প্রার্থী প্রশান্ত প্রধান, নীতীশ সেনগুপ্তকে হারিয়ে এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেন। ২০০৯ সালে প্রশান্ত প্রধানকে হারিয়ে শিশির অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়ী হন ১ লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে।
২০১৪ সালের লোকসভায় কাঁথি থেকে শিশির অধিকারী ২ লক্ষ ২৯ হাজার ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ২০১৯ সালে কাঁথি কেন্দ্রটি তৃণমূল কংগ্রেসের শিশির অধিকারী দখলে যায়, এবার ভোটের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ১১ হাজার ৬০০। শিশির অধিকারী সাংসদ নির্বাচিত হলেও পরবর্তী সময়ে রাজ্য রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। ফলে ২০২৪ সালে এই কেন্দ্রটি ধরে রাখার তৃণমূলের পক্ষে যথেষ্টই চ্যালেঞ্জের। অন্যদিকে অধিকারী পরিবারের বিজেপি ঘনিষ্ঠতা কিছুটা এগিয়ে রাখবে বিজেপিকে। অমিত শাহর সভাতেও শিশিরবাবুকে দেখা গিয়েছে। ফলে তিনি এখন কোন দিকে আছেন, সেই নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে কোন দল কেমন ফলাফল করেছিল, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। ভগবানপুর কেন্দ্রটিতে ভারতীয় জনতা পার্টির রবীন্দ্রনাথ মাইতি ২৭ হাজার ৫০০ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। ভারতীয় জনতা পার্টির শান্তনু প্রামানিক ১৭ হাজার ৯০০টির বেশি ভোটে জয়ী হন। কাঁথি উত্তর এবং কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্রেও যথাক্রমে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে সুমিতা সিনহা এবং অরূপ কুমার দাস জয়ী হয় চার থেকে পাঁচ শতাংশ ভোটের মার্জিনে। রামনগর এবং এগরা কেন্দ্র দুটি তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে যায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ এবং বিজেপিতে যোগদানের ফলে আঞ্চলিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে ক্রম উত্থান ঘটে ভারতীয় জনতা পার্টির। এবার সেই ট্রেন্ড বদলায় কিনা, সেটাই দেখার।