সিপিআইএম আর সিপিআইএমএল। বেশ কাছাকাছি নাম। কিন্তু বহু সময়ে তাদের মধ্য়ে ছিল যোজন দূরত্ব। ক্ষমতায় থাকার সময় বার বার বার এই বিরোধ সামনে এসেছে। এমনকী একাধিক সিপিআইএমএল নেতৃত্ব অতীতে সরাসরি মুখ খুলতেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন সিপিএম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। কিন্তু নৈহাটির ভোট যেন সব কিছুকে ওলটপালট করে দিয়েছে। এখন একেবারে গলায় গলায় বন্ধু দুই দলের নেতারা। এবার নৈহাটির উপনির্বাচনে বামফ্রন্টের তরফে প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইএমএল লিবারেশনের দেবজ্যোতি মজুমদার। প্রাথমিকভাবে বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে সিপিআইএমএলকে দেখে হোঁচট খেয়েছিলেন অনেকেই। এবার প্রশ্ন কীভাবে সিপিআইএমএল নেতাকে প্রার্থী করল বামেরা? অন্দরের গল্পটা ঠিক কী?
এনিয়ে টিভি ৯-এর প্রতিবেদন অনুসারে সিপিআইএমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বক্তব্য মিলেছে।
এনিয়ে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ওই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'একুশের নির্বাচনে বামফ্রন্টের দখলে থাকা ২৪ আসনে ওদের সমর্থন করেছিলাম। আমি নিজে সায়নদীপের হয়ে প্রচারে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই প্রথম সিপিএম আমাদের সমর্থন করল। আমার মনে হয় সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।' এখানেই থেমে থাকেননি তিনি।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আমার মনে হয় এর নেপথ্যে আরজি কর আন্দোলনের একটা বড় ভূমিকা আছে। আমি তো এটাকে গণজাগরণ বলি। গোটা দেশ তথা রাজ্যের জন্য এটা অভূতপূর্ব আন্দোলন। আর সেই প্রেক্ষাপটে এবারের উপনির্বাচন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। যে সময়ে এই নির্বাচন হচ্ছে তা আসলে আন্দোলনচলাকালীন মানুষকে একটা আলাদা সুযোগ করে দিচ্ছে। মত প্রকাশের সুযোগ দিচ্ছে। এই আন্দোলন একইসঙ্গে মহিলাদের আন্দোলন, নিরাপত্তার আন্দোলন, ডাক্তারদের আন্দোলন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, রোগীদের আন্দোলন।
তিনি বলেন, অনেক সময় শাসকদল ভুলে যায় গণতন্ত্রটা পাঁচ বছরে একটা নির্বাচনের একটা ব্যাপার নয়। গণতন্ত্র একটা সর্বক্ষণের, প্রতিদিনের অধিকার রক্ষার ব্যাপার। একটা সরকার যখন জনগণকে পরোয়া করে না নেতারা যেটা মনে করছে সেটাই শেষ কথা সেই সময় কীভাবে শাসকের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হয় তা এই আন্দোলন দেখিয়েছে। ফলে আন্দোলনের বিরা সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে পশ্চিমবাংলায় বামপন্থীদের জীবন্ত একটা বড় ঐক্য দরকার। পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও ইস্যুই তো এখন এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। এই আন্দোলন রাজনীতির একটা নতুন ভাষা। নতুন অ্যাজেন্ডা গড়ে উঠেছে।
সেই সঙ্গেই বাম রাজনীতির কিছু আত্মসমালোচনাও করেছেন সিপিআইএমএল নেতা। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির উঠে আসা বামপন্থীদের দুর্বলতার কারণে। আর আমি যখন একথা বলছি তখন আমার দলকে তারমধ্যে ধরেই বলছি। তবে বাংলায় নির্বাচনী ময়দানে আমাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি কোনওকালেই থাকেনি।