আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল হুগলি জেলা এবং কিছু অংশ হাওড়া জেলার মধ্যে অবস্থিত। ২০০৯ সালের আগে এই কেন্দ্রটি অসংরক্ষিত থাকলেও বর্তমান সময়ে তফশিলি জাতিদের জন্য এই কেন্দ্রটি সংরক্ষিত। হরিপাল, তারকেশ্বর, পুরশুরা, আরামবাগ, গোঘাট, খানাকুল এবং চন্দ্রকোনা এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। এরমধ্যে আরামবাগ, গোঘাট এবং চন্দ্রকোনা এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তথ্য বলছে, এই কেন্দ্রের ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ। ১৯৬৭ সালে এই কেন্দ্রটিতে প্রথম লোকসভা নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ১৯৬৭ সালে এই কেন্দ্রটি থেকে জয়ী হন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অমিয়নাথ বসু। ১৯৭১ সালে সিপিআইএমের মনোরঞ্জন হাজরা এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ১৯৭৭ সালের কংগ্রেস বিরোধী ভোট একজোট হয়ে ভারতীয় লোক দল এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়। প্রফুল্লচন্দ্র সেন সাংসদ নির্বাচিত হন জাতীয় কংগ্রেসকে হারিয়ে।
১৯৮০ সালে বিজয়কৃষ্ণ মোদক সিপিআইএম-এর পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে সংসদ নির্বাচিত হন। এর পরবর্তী দীর্ঘ সময় জয়ের ধারা অব্যাহত রাখে সিপিআইএম। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত এই কেন্দ্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখে সাংসদ নির্বাচিত হন সিপিআইএম হুগলি জেলার নেতা অনিল বসু। ২০০৯ সালে সিপিআইএম-এর পক্ষ থেকে শক্তিমোহন মালিক জয়ী হন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সিপিআইএমের শক্তিমোহন মালিককে হারিয়ে। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের ভোটের শেয়ার ২৫ শতাংশ কমে যায় এবং বিজেপি ৬ শতাংশের বেশি ভোট বেশি পায়। ২০১৯ সালে অপরূপা পোদ্দার ফের এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন এবং দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। বিজেপি প্রার্থী ৪৪.৮ শতাংশ ভোট পায়, যেখানে তৃণমূলের ভোটের শেয়ার ছিল ৪৪.১৫ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভায় ১১৮২-এর কিছু বেশি ভোটে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল জয়ী হয়।
এবার যদিও অপরূপা পোদ্দার ওরফে আফরিন আলিকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় স্তরে অসন্তোষ ছিল, সেই জন্যই টিকিট জোটেনি। এমনকী তাঁকে তৃণমূলের প্রচার মঞ্চেও দেখা যায়নি। যার জন্য তিনি তোপ দেগেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এই আসনে এবার তৃণমূলের প্রার্থী মিতালী বাগ। অন্যদিকে বিজেপি দাঁড় করিয়েছে অরূপকান্তি দিগারকে। সিপিএম প্রার্থী বিপ্লব কুমার মৈত্র। আরামবাগ হুগলির এমন একটি আসন যেখানে তৃণমূলকে হারানোর বাস্তবসম্মত সুযোগ আছে বিজেপির। তবে সিপিএম যদি পুরনো ভোট কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে পারে, তাহলে লোকসভায় প্রবেশ করবেন মিতালী বাগ। পঞ্চম দফায় ২০ মে ভোট এই কেন্দ্রে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই নির্বাচনী ক্ষেত্রের ফলাফল কেমন হয়েছিল সেদিকের নজর রাখা যাক। ২০২১ সালের লোকসভা নির্বাচনে জোর টেক্কা দেয় বিজেপি। হরিপাল কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টির সমীরন মিত্রকে পরাজিত করেন করবী মান্না। তারকেশ্বর কেন্দ্রে স্বপন দাশগুপ্তকে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন রামেন্দু সিনহা রায়। পুরশুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির বিমান ঘোষ জয়ী হন তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদবকে হারিয়ে৷ আরামবাগ কেন্দ্রটিতে সুজাতা মণ্ডল পরাজিত হন বিজেপির মধুসূদন বাঘের কাছে। গোঘাট কেন্দ্রেও ভারতীয় জনতা পার্টির বিশ্বনাথ কোরক চার হাজারের কিছু বেশি ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাজিত করে। খানাকুল আসনটিতে সুশান্ত ঘোষ বিজেপির পক্ষ থেকে ১২ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন। চন্দ্রকোনা আসনটিতে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অরূপ ধর ১১ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন।
সবমিলিয়ে এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করা হচ্ছে। নিশ্চিত ভাবেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একটি বড় ফ্যাক্টর এখানে। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও তেমন লোক হয়নি বলে রিপোর্ট উঠে এসেছে। এখানে প্রচার করে গিয়েছেন মোদীও। তবে শেষ বিচারে বুথ ম্যানেজমেন্ট কেমন হয় ও বাম কোন পক্ষের ভোট নিজেদের দিকে টানতে পারে, তার ওপরেই নির্ভর করছে আরামবাগের ভবিষ্যত।
কংগ্রেসকে জোর টক্কর দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি।