পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ঘেঁষা লোকসভা কেন্দ্র বনগাঁ। ২০০৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রটি প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে কেন্দ্রটি তফশিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই লোকসভা কেন্দ্রটি অবস্থান করছে। কল্যাণী, হরিণঘাটা, বাগদা, বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, গাইঘাটা এবং স্বরূপনগর এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। এর মধ্যে প্রত্যেকটি বিধানসভা কেন্দ্রেই তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত। ২০১৯ সালের তথ্য বলছে, এই লোকসভা কেন্দ্রের মোট ভোটদাতা ছিল ১৫ লক্ষ ৪০ হাজার ৭১৩ জন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জিতে বর্তমানে এই কেন্দ্রের সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তিনি মোদী সরকারে প্রতিমন্ত্রীও বটে। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ র। এই কেন্দ্রে বড় সংখ্যায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাখির চোখ মতুয়া ভোট। বিতর্কিত সিএএ লাগু করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চাপানউতোর চলে আসছে। ঠাকুর বাড়ি বর্তমানে ধর্মীয় স্থানের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মানচিত্র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
এবারও বিজেপির প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। অন্যদিকে মতুয়া গড়ে জিততে তৃণমূল প্রার্থী করেছে অমতুয়া বিশ্বজিত দাসকে। তিনি আবার ২০২১ সালে বাগদা থেকে বিজেপি টিকিটে বিধানসভায় গিয়েছিলেন। তবে দ্রুত ফের ফুল পরিবর্তন করেন আদ্যন্ত কংগ্রেসি ঘরানার এই নেতা। পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে রাজনীতির পাদপ্রদীপের তলায় উঠে এসেছেন বিশ্বজিত। তবে এবারের লড়াই নিশ্চিত ভাবেই শক্ত, কারণ বিপক্ষে ঠাকুর বাড়ির সদস্য শান্তনু। তবে বিশ্বজিতও দীর্ঘদিন ধরে মতুয়া সংগঠনগুলির সঙ্গে যুক্ত। ফলে তাঁর আশা মমতাবালা ঠাকুর গোষ্ঠীর মানুষ তাঁকেই ভোট দেবেন। অন্যদিকে আছেন কংগ্রেসের প্রদীপ বিশ্বাস। আইএসএফ, এসইউসিআই ইত্যাদিও এখানে প্রার্থী দিয়েছে।
দেখে নেওয়া যাক গত কয়েকটি লোকসভা নির্বাচনের হিসাবে বনগাঁ লোকসভাতে কাদের পাল্লা কতটা ভারী ছিল। ২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে দেশজুড়ে ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সিপিআইএমের আসন এবং ভোটের হার ব্যাপক হারে কমে, তৃণমূল কংগ্রেসের আসন এবং ভোটের হার বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত এই আসনটিতে গোবিন্দচন্দ্র নস্কর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৯২,৮২৬ টি ভোটে জয়যুক্ত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও ১ লক্ষ ৪৬ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন তৃণমূলের কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। এরপর তাঁর মৃত্য়ুর পর উপনির্বাচন হলে জয়ী হন মমতাবালা ঠাকুর। তবে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের রাজ্য জুড়েই ব্যাপক হারে জনসমর্থন পায় বিজেপি। বনগাঁ কেন্দ্রে ঠাকুর পরিবারের সন্তান শান্তনু ঠাকুর বিজেপির পক্ষ থেকে জয়ী হন ১ লক্ষ ১১ হাজার ৫৯৪ ভোটে। তিনি হারান মমতা দেবীকে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কাদের পাল্লা ভারী থাকবে, সেদিকেই নজর এখন সকলের এবার।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলগুলিতে। কল্যাণী বিধানসভা কেন্দ্রতে ভারতীয় জনতা পার্টির অম্বিকা রায় ২২০৬ টি ভোটে জয়ী হন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে। হরিণঘাটা কেন্দ্রটিতেও অসীম কুমার সরকার ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে ১৫ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন। বাগদা, বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ গাইঘাটা এই প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হন। কেবলমাত্র স্বরূপনগর কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিনা মন্ডল ৩৪ হাজার ৮০০ ভোটে জয়ী হন। বিধানসভা এবং লোকসভা উভয় নির্বাচনের বিচারে এই আসনটিতে অনেকটাই এগিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি। তবে সিএএ চালু হলেও তার নিয়ম নিয়ে নানান জটিলতা রয়েছে। সেটাকে হাতিয়ার করেই লড়াইয়ে ফিরতে চাইছে তৃণমূল। তাদের কথায় বিজেপি সিএএ নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছে। মতুয়ারাও আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন বলে আশাবাদী তৃণমূল নেতৃত্ব। পঞ্চম দফায় ২০ মে ভোটদান এখানে। চার জুন সারা দেশের সঙ্গে এখানেও বোঝা যাবে জনমত কার দিকে গেল।