বর্ধমান পূর্ব লোকসভা অঞ্চলটি হুগলি ও দামোদর নদী উপত্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ শষ্যের ভান্ডার। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রটি পূর্ব বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। রায়না, জামালপুর, জামুরিয়া, মেমারি,পূর্বস্থলী দক্ষিণ, পূর্বস্থলী উত্তর ও কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। ২০১৯ সালের হিসাব বলছে মোট ভোটদাতা সংখ্যা ছিল ১৫ লক্ষ ৩২ হাজার ২৪৪ জন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সুনীল কুমার মণ্ডল এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন। যদিও তারপর শুভেন্দুর সঙ্গে তিনি বিজেপিতে গিয়েছিলেন ও পরে আবার ফিরেও আসেন। যদিও দলে সেভাবে আর কল্কে পাননি দুইবারের সাংসদ। তাই এবার চিকিৎসক প্রার্থী নিয়ে ময়দানে হাজির তৃণমূল। বিপক্ষে বিজেপির বিশিষ্ট কবিয়াল। কেন্দ্রটি বর্তমানে তফশিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।
তুলনামূলক ভাবে নতুন এই লোকসভা কেন্দ্রটিতে ২০০৯ সাল থেকে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। কাটোয়া ভেঙে এই কেন্দ্র তৈরি।পূর্ব বর্ধমান দীর্ঘদিন ধরেই সিপিআইএমের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। অনুপ কুমার সাহা ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের পক্ষ থেকে জয়ী হন। ২০১৪ এবং ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে সুনীল কুমার মণ্ডল জয়যুক্ত হন। ২০১৪ সালে সুনীল কুমার মণ্ডলের জয়ের মার্জিন ছিল ১ লক্ষ ১৪ হাজারের বেশি ভোট। এই নির্বাচনে ২ শতাংশ মানুষ ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে সিপিএমের ভোট শতাংশ অনেকটা কমে যায় এবং মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজেপি দ্বিতীয় স্থান দখল করে। সুনীল কুমার মণ্ডল ৮৯ হাজার ৩১১ ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন।
তবে এবার দুই প্রধান দলই নতুন মুখ নিয়ে লড়াইয়ে। তৃণমূলের ভরসা চিকিৎসক শর্মিলা সরকার, যিনি ক্যালকাটা মেডিক্যালে কর্মরত। বর্তমানে দমদমে থাকেন তিনি, মূলত অভিষেক ও আইপ্যাকের সুপারিশে তিনি টিকিট পেয়েছেন বলে সূত্রের খবর। তাঁর বিপক্ষে হরিণঘাটার বিধায়ক কবিয়াল অসীম সরকার। ছড়া কেটে কেটে নিজের বার্তা দিয়ে চলেছেন তিনি। জাহির করছেন তাঁর মতুয়া পরিচয়ও। অন্যদিকে আছেন প্রাথমিকের শিক্ষক নীরব খাঁ, সিপিএম প্রার্থী হিসেবে। শেষ বিচারে তিনি কতটা ভোট কাটতে পারবেন, সেটা হয়ত ঠিক করে দেয় জয়-পরাজয়ের সমীকরণ।
আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভাগুলির ২০২১ সালের নির্বাচনী ফলাফল। একদা লাল দুর্গ যে আজ সবুজ গড়, তা ফলাফল দেখলেই স্পষ্ট। রায়না বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী স্বপ্না ধর ১৮ হাজার ২০৫টি ভোটে জয়যুক্ত হন৷ জামালপুর কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের অলক কুমার মাঝি প্রায় ১৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে নিকট নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। জামুরিয়া কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের হরেরাম সিং প্রায় ৮ হাজার ভোটে জয়ী হন। মেমারি আসনটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মধুসূদন ভট্টাচার্য ২৩ হাজার ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে জয়ী হন। পূর্বস্থলী দক্ষিণ এবং পূর্বস্থলী উত্তর দুটি কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যথাক্রমে স্বপন দেবনাথ এবং তপন চ্যাটার্জী জয়ী হন। কাটোয়া কেন্দ্র থেকে জয়ী হন রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী। সাতটি বিধানসভা আসনেই একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখে তৃণমূল কংগ্রেস। তবুও মোদীর হাওয়া ও অসীমের ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মার ওপর ভরসা করে তৃণমূলের পালের হাওয়া কাড়ার বিষয়ে আশাবাদী বিজেপি। চতুর্থ দফায় ১৩ মে এখানে ভোটগ্রহণ।