প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পরে ১৮ ঘণ্টাও কাটল না। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়বেন না বলে জানিয়ে দিলেন ভোজপুরি গায়ক পবন সিং। যে গায়কের বিরুদ্ধে বাঙালি-বিরোধী মনোভাব পোষণের অভিযোগ উঠেছে। নারী বিদ্বেষের অভিযোগও উঠেছে ভোজপুরি গায়কের বিরুদ্ধে। আর সেইসব অভিযোগের মধ্যেই রবিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'এক্স'-এ ভোজপুরি গায়ক বলেন, ‘হৃদয় থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার উপর আস্থা দেখিয়ে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে আমায় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু কোনও কারণবশত আমি আসানসোল থেকে নির্বাচন লড়তে পারব না।’
আসানসোল থেকে কেন সরে দাঁড়িয়েছেন, সেই কারণটা পবন নিজে সরাসরি কিছু না জানালেও রাজনৈতিক মহলের মতে, 'বাঙালি-বিরোধী' এবং ‘নারী বিদ্বেষী’ মনোভাবের জন্য যেভাবে বিভিন্ন মহল থেকে আক্রমণ ধেয়ে আসছিল, সেই পরিস্থিতিতে ভোজপুরি গায়ক নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হলেন। যে সুরটা ধরা পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। ‘তৃণমূলের জয়’ হিসেবে না দেখিয়ে তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অদম্য মনোভাব ও শক্তির (প্রমাণ)।’ সঙ্গে ‘জনগর্জন’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন।
বাকি তৃণমূল নেতারাও একই পথে হেঁটেছেন। ডেরেক ও'ব্রায়ান বলেন, 'খেলা শুরু হওয়ার আগেই খেলা হয়ে গেল। এটাকেই খেলা বলে।' একইসুরে সাকেত গোখলে বলেছেন, 'নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগেই পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে একটি আসনে আত্মসমর্পণ করে নিল বিজেপি।' আবার সুস্মিতা দেব বলেছেন, ‘বাংলায় বিজেপির প্রথম আত্মঘাতী গোল।’
আর সেই ঘটনায় যে বিজেপির চূড়ান্ত মুখ পুড়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ওই মহলের বক্তব্য, একজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন না বলে ঘোষণা করে দেওয়ার বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক নয়। বিশেষত ওই প্রার্থী যে লড়াইয়ে উৎসাহী ছিলেন, তা তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট ছিল। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে আচমকা নাম তুলে নেওয়ার পিছনে যে কোনও বড় কোনও বিষয় আছে, তা স্পষ্ট। আর কারণটা যে কী, তা কার্যত স্পষ্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিশেষত বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর মতো ব্যক্তি পাশে দাঁড়ানোর পরও পবনের সেই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মালব্য। সেই মালব্যের ‘আশীর্বাদ’ থাকা পবন নির্বাচন থেকে নাম তুলে নেওয়ায় বিজেপিকে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়তে হল মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যে মালব্য আবার পবনের টুইটের রিটুইট করেছেন।