দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রটি বর্তমানে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনের সময়টি থেকেই এই কেন্দ্রটি অবস্থিত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তথ্য বলছে, এই কেন্দ্রে ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯১৪ জন ভোটদাতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এবারও তৃণমূলের প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জয় নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। নিছকই মার্জিনের খেলা। গতবার তিন লাখ কুড়ি হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এবার কি সেটা পাঁচ লাখ হতে পারে, সেটা নিয়েই প্রশ্ন তৃণমূলের মধ্যে। বিরোধীরা অবশ্য আশাবাদী, যে মার্জিন কমবে। তবে সেভাবে তেমন শক্ত প্রার্থী তো তারা দিতে পারেননি। সেটাই একটা বড় সমস্যা। বিজেপির হয়ে লড়াইয়ে আছেন অভিজিৎ দাস, যিনি অতীতেও এই আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। সিপিএম প্রার্থী প্রাতিকুর রহমান আছেন ভোটের মঞ্চে। পয়লা জুন সপ্তম দফায় এখানে ভোট হতে চলেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্র হল ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর, মহেশতলা, বজবজ এবং মেটিয়াবুরুজ। এর মধ্যে কেবলমাত্র বিষ্ণুপুর কেন্দ্রটি তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। ১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে সিপিআই-এর প্রার্থী কমল বসু জয়লাভ করেন। ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে কানসারি হালদার কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে জয়যুক্ত হন। ১৯৬২ সালের লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রটি থেকে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী সুধাংশু ভূষণ দাস জয়লাভ করেন। চতুর্থ লোকসভা নির্বাচনে ১৯৬৭ সালে সিপিআইএম দলের পক্ষ থেকে জ্যোতির্ময় বসু এই কেন্দ্রটি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। জ্যোতির্ময় বসু এরপর দীর্ঘ সময় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন।
১৯৮২ সালের উপনির্বাচনের ওই কেন্দ্রটি থেকে সিপিআইএমের প্রার্থী অমল দত্ত জয়লাভ করেন। ১৯৮৪, ১৯৮৯, ১৯৯১ সালে পরপর তিনবার এই কেন্দ্রটি থেকে সিপিআইএমের অমল দত্ত সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের একাদশ লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের পক্ষ থেকে শমীক লাহিড়ী এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন। ১৯৯৮ এর লোকসভা নির্বাচনে শমীক লাহিড়ী তৃণমূল কংগ্রেসের কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে পরাজিত করে জয়যুক্ত হন। ২০০৪ সালের তৃণমূল কংগ্রেসের হেভি ওয়েট প্রার্থী সৌগত রায়, শমীক লাহিড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও সফল হতে পারেননি। তবে ২০০৯ সালের রাজ্য রাজনীতির উথাল-পাথাল সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সৌমেন্দ্রনাথ মিত্র, শমীক লাহিড়ীকে পরাজিত করেন।
২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিষেক ব্যানার্জি এই কেন্দ্রে দাঁড়ান এবং সিপিআইএমের ডঃ আব্দুল হাসানাতকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন প্রথম বারের জন্য। ২০১৪ সালের ডায়মন্ড হারবার লোকসভা নির্বাচনে ডঃ আব্দুল হাসানাত ৪ লক্ষ ৩৭ হাজারের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিল। যেখানে অভিষেক ব্যানার্জি ৫ লক্ষ ৮ হাজার ভোট পান, ২ লক্ষ ভোট পেয়ে বিজেপির অভিজিৎ দাস এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল। এই কেন্দ্রে সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ২০১৯ সালে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেক ব্যানার্জি ৭ লক্ষ ৯১ হাজার ১২৭টি ভোট পেয়েছিলেন, যেখানে বিজেপির পক্ষ থেকে নীলাঞ্জন রায় ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ৫৩৩টি ভোট পান। অন্যদিকে, সিপিআইএম প্রার্থী ডাঃ হালিম মাত্র ৯৩ হাজার ৯৪১ টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
এবার দেখে নেওয়া যাক ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ভিত্তিতে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্র গুলির ফলাফল কেমন হয়েছিল। ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পান্নালাল হালদার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ১৬,৯৯৬ ভোটে পরাজিত করেন। ফলতা এবং সাতগাছিয়া কেন্দ্রে যথাক্রমে শংকর কুমার নস্কর এবং মোহন চন্দ্র নস্কর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়যুক্ত হন। তাদের জয়ের মার্জিন ছিল যথাক্রমে ৯.৭ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ। বিষ্ণপুর কেন্দ্রটি তো তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দিলীপ মণ্ডল ২৫ শতাংশ ভোটের মার্জিনে জয়যুক্ত হন। মহেশতলা কেন্দ্রটি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে দুলাল চন্দ্র দাস ২৬.৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। বজবজ এবং মেটিয়াবুরুজ কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যথাক্রমে অশোক কুমার দেব এবং আব্দুল মোল্লা বিধায়ক নির্বাচিত হন। আব্দুল মোল্লা রেকর্ড সংখ্যক ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৬০৪টি ভোটে জয়ী হন। সামগ্রীক ভাবে লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্রটিতে অ্যাডভান্টেজ অবস্থায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷