রাজ্যের প্রশাসনিক কাজ এখন হয় হাওড়ার নবান্ন থেকে। সেই হাওড়াতেই ভোট পঞ্চম দফায়। তৃণমূলের দখলে থাকা এই আসনে লড়াই ফুটবলার বনাম ডাক্তারবাবুর লড়াই। দুজনেই খ্যাতনামা মানুষ, প্রচারও করেছেন চুটিয়ে। লড়াইয়ে আছে সিপিআইএমও। বহু জাতি, ভাষা, বর্ণের মানুষের হাওড়ায় জিততে মরিয়া সব পক্ষই।
হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রটি অবস্থিত। বালি, হাওড়া উত্তর, হাওড়া মধ্য, হাওড়া দক্ষিণ, শিবপুর, ডোমজুড়, সাঁকরাইল এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। ১৯৭৭ সাল থেকে এই কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচন হয়ে আসছে। ১৯৭৭ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী’র প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় কংগ্রেসের নিত্যানন্দ দেকে পরাজিত করেন। ১৯৮০ সালের নির্বাচনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তবে এবার নিত্যানন্দ দে ইন্দিরা পন্থী কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে এই কেন্দ্রটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সিপিআইএমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। সমর মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ১৯৮৯ সাল এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরপর দুই বার সুশান্ত চক্রবর্তী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে পরাজিত করেন। ১৯৯৬ সালে ফের জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি প্রার্থী হয়ে সুশান্ত চক্রবর্তীকে পরাজিত করে জয়যুক্ত হন।
১৯৯৮ সালে প্রথমবারের জন্য সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এই কেন্দ্রে সফলতা লাভ করে। ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালের নির্বাচনে যদিও খেলা ঘুরিয়ে সিপিআইএমকে জেতান স্বদেশ চক্রবর্তী। ২০০৯ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৩.৮ শতাংশ ভোটের মার্জিনে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের উপনির্বাচনে প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জেতেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে ১ লক্ষ ৯৬ হাজার ৯৫৬ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন প্রসূন। ২০১৯ সালেও ফের একবার প্রসূন ব্যানার্জি এই কেন্দ্রটি থেকে জয়যুক্ত হলেও তার ভোটের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৩ হাজারের কাছাকাছি। শেষ কতগুলি লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোটদানের হার থেকেছে ৭০ থেকে ৭৪ শতাংশ।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে বালি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে রানা চ্যাটার্জি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে ৫ শতাংশ ভোটের মার্জিন জয়ী হন। হাওড়া উত্তর এবং হাওড়া মধ্য কেন্দ্রদুটিতে গৌতম চৌধুরী এবং অরূপ রায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। শিবপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী, বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ মনোজ তিওয়ারি ৩২ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে। হাওড়া দক্ষিণ, সাঁকরাইল ও ডোমজুড় কেন্দ্র থেকে যথাক্রমে নন্দিতা চৌধুরী, প্রিয়া পাল এবং কল্যাণ ঘোষ জয়যুক্ত হন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। এই কেন্দ্রগুলিতে বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। গত নির্বাচগুলিতে বিরোধীদের হারিয়ে এই অঞ্চলে একক আধিপত্য বিস্তার করে তৃণমূল কংগ্রেস।
শিবপুরে পরাজিত প্রার্থী রথীন চক্রবর্তীকে এবার হাওড়ায় টিকিট দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের হয়ে একদা হাওড়ার মেয়র ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রথীনবাবু। ভোলানাথ চক্রবর্তীর ছেলে রথীন চক্রবর্তী ঘরের ছেলে। সেই হোম অ্যাডভান্টেজ না থাকলেও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সংগঠনের জন্য নিশ্চিন্তে আছেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে কেন্দ্রে না উপস্থিত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে একদা গড় হাওড়ায় সিপিআইএম প্রার্থী এবার সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। ধারে ও ভারে তৃণমূল অনেকটা এগিয়ে থাকলেও প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ ও হিন্দিভাষীদের ভোট খেলা ঘোরাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পঞ্চম দফায় ২০ মে ভোট এখানে। ফলাফল জানা যাবে সেই ৪ জুন