এখন লোকসভা নির্বাচনের মরশুম চলছে। ষষ্ঠ দফার নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। এই আবহে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বাংলার নারীদের কতটা ক্ষমতায়ন করেছে? এই নিয়ে সমীক্ষা হয়। সেই সমীক্ষা করা হয়েছিল ৮৫.৬ শতাংশ মহিলার উপর। তাতে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ মহিলাই রাজ্য সরকারের এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে গার্হস্থ্য জীবনে ক্ষমতায়ন হয়েছে। সাংসারিক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। এই মহিলারা এমন কথা জানিয়েছেন প্রতীচী ট্রাস্টের সমীক্ষায়। যা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সংস্থা।
২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প নিয়ে আসে। তখন সাধারণ মহিলারা ৫০০ টাকা পেতেন এবং তফসিলি জাতি–উপজাতির মহিলারা ১০০০ টাকা করে পেতেন। সম্প্রতি তা বেড়ে গিয়েছে। এখন সাধারণ মহিলারা ১০০০ টাকা করে প্রত্যেক মাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে টাকা পাচ্ছেন। আর তফসিলি জাতি উপজাতির মহিলারা ১২০০ টাকা করে মাসে পাচ্ছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ঘোষণা করা হয় এবং তা মহিলারা পেতে শুরু করেছেন। যা বড় অংশের মহিলাদের কাজে লাগছে। এই টাকা একই বাড়ির একাধিক মহিলারাও পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভোটের ডিউটি পেয়ে ব্লেড দিয়ে হাত কাটার চেষ্টা মহিলা পুলিশের, ফেসবুক লাইভে আলোড়ন
এদিকে প্রতীচী ট্রাস্ট সমীক্ষা করে দুটি পদ্ধতিতে। এক, পরিমাণগত। দুই, গুণগত মানের নিরিখে। তাতে দেখা যাচ্ছে ৮৫.৬ শতাংশ মহিলা এক নম্বর পদ্ধতির মধ্যে পড়ছে। এদের মধ্যে দেড় হাজার মহিলার উপর সমীক্ষা করা হয়। আর দ্বিতীয় নম্বরে ১৮৯ জন মহিলার উপর সমীক্ষা করা হয়। রাজ্য সরকার মোটামুটি আড়াই কোটি মহিলাকে গোটা রাজ্যে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়ে থাকেন। মোট মহিলার সংখ্যা ৬১.১ শতাংশ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপর নির্ভর করে সাংসারিক উন্নতি ঘটিয়েছেন। আর ৬.৩ শতাংশ মহিলা ছোট ছোট ব্যবসা এবং বিনিয়োগ করছেন। এখানে তিনটি বিষয় উঠে এসেছে। এক, টাকা কেমন করে খরচ হবে তার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন (৮৫.৬) শতাংশ। দুই, স্বামীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন (১০.৮) শতাংশ। তিন, পরিবারে মান বেড়েছে (৬১.১) শতাংশ।
অন্যদিকে সমীক্ষায় উঠে এসেছে— লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের দৌলতে ৭৫.৯ শতাংশ মহিলা পরিবারের খরচ চালাতে এই টাকা খরচ করছেন। ৪১.৮ শতাংশ মহিলা সন্তানদের শিক্ষার জন্য খরচ করছেন এবং ৩৪ শতাংশ মহিলারা এই টাকা নিয়ে নিজেদের ওষুধ কিনছেন। এই বিষয়ে প্রতীচী ট্রাস্টের জাতীয় গবেষণা বিভাগের কো অর্ডিনেটর সাবির আহমেদ বলেন, ‘সরাসরি এই টাকা অ্যাকাউন্টে আসছে বলে সেই টাকা খরচের ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পাচ্ছে। অনেক খরচই দারিদ্রতার জন্য করা যেত না। এখন তা করা যাচ্ছে। তার মধ্যে ৩৫.৩ শতাংশ মহিলা আছেন যাঁরা এই টাকা সংসারে খরচ করেন না। নিজেদের প্রয়োজন মেটান।’ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সোশিওলজির সহকারি অধ্যাপিকা নন্দিনী ঘোষের বক্তব্য, ‘টাকার অঙ্ক কম না বেশি সেটা এখানে ফ্যাক্টর নয়। মহিলারা এই টাকা দিয়ে নিজের ইচ্ছা এবং স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করছেন।’