লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার মুখে প্রত্যেক নাগরিককে তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা ঝাঁপিয়ে পড়ে করছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে অশীতিপর বয়স্কদের জন্যও থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। আর সেটা হচ্ছে হোম ভোটিং। যার মাধ্যমে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন প্রবীণ নাগরিকরা। এবার দেখা গেল সেটা করার পরই মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুর এলাকায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মায়ের নামে ওই বৃদ্ধার নাম। আর ‘মেয়ে’ মমতাকে তিনি খুব ভালবাসতেন। শুক্রবার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটও দেন নিজের বাড়িতে বসেই। ভোট দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই ওই বৃদ্ধা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
এই ঘটনায় পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এলেও সান্ত্বনা বলতে ইচ্ছেপূরণ হয়েছে বৃদ্ধার। মৃতের নাম জগৎবল্লভপুরের নিমবালিয়া সিংহবাহিনী গ্রামের বাসিন্দা গায়ত্রী মুখোপাধ্যায় (৮৯)। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। প্রায়ই শ্বাসকষ্টে ভুগতেন। তারপরও তিনি স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে পারতেন। এবার লোকসভা নির্বাচনে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন বৃদ্ধা। এবারের লোকসভা নির্বাচন শুরু হতেই তিনি মেজো ছেলে স্বপন মুখোপাধ্যায়কে জানান, এবার তিনি ভোট দিতে চান। স্বপনবাবু প্রশাসনের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এই বছর নির্বাচন কমিশন প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বাড়িতে গিয়ে পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণ করছে। স্বপনবাবু জগৎবল্লভপুরের বিডিও অফিসে যোগাযোগ করেন। প্রশাসনও তাদের বাড়িতে গিয়ে গায়ত্রী দেবীর ভোটগ্রহণ করার ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন: সন্দেশখালির পর বিজেপির বড় পরিকল্পনা কী? আরামবাগে ফাঁস করে দিলেন মমতা
এদিকে শুক্রবার দুপুর ১টা ১০ মিনিট নাগাদ প্রশাসনিক অফিসাররা তাঁর বাড়িতে ভোট নিতে যান। তখন গায়ত্রী দেবী বিছানায় শুয়ে ছিলেন। তারপর ওই বৃদ্ধা অফিসারদের সামনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। বৃদ্ধার নাতনী সহযোগিতায় বুড়ো আঙুলে টিপ সই দিয়ে ভোট দেন। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিয়ে নাতনির হাতে জল খান। তারপর ১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। স্বপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুব ভালবাসতেন। বলতেন, মেয়েটা খুব ভাল। ওকেই আমার পছন্দ। তাই কোথায় ভোট দিতে চাও প্রশ্ন করতেই তিনি বলতেন, মমতার দলকে।’
অন্যদিকে গায়ত্রী দেবীর মৃত্যুতে পরিবারে উপর নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সবাই। কিন্তু মায়ের শেষ ইচ্ছাপূরণ করতে পেরে অনেকটাই স্বস্তিতে মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি এত ভালবাসা দেখে সকলেই আপ্লুত। বাংলার মানুষ এভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবাসেন। সাধারণ মানুষের এই ভালবাসাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বড় সম্পদ। যা তিনি অত্যন্ত যত্ন করে রাখেন। এই খবর মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পৌঁছেছে বলে সূত্রের খবর।