লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে এবার জুড়ে গেল শিক্ষাঙ্গন। কারণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানার খোলা নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর টানাপোড়েন। এই ব্যানার সেখানে লাগিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তা খোলা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রশ্ন, এই ক্যাম্পাসের বাকি রাজনৈতিক দলের ব্যানার–পোস্টার কেন সরানো হল না? যথেষ্ট যুক্তি আছে এই প্রশ্নে। শুধু বেছে বেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে টার্গেট করা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। আর সামনে নিয়ে আসা হয়েছে আরও তথ্য। সেই তথ্যে বলা হয়েছে, গত ২০ মে হাওড়ায় নির্বাচন ছিল। তার আগে শিবপুরের আইআইইএসটি ক্যাম্পাস বিজেপির পতাকায় মুড়ে ছিল। সেটা কেন নির্বাচন কমিশন দেখতে পেল না?
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এমন প্রশ্ন ও যুক্তিতে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিজেপির ওই ব্যানার–ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান এবং আঁকা ছিল হনুমানের ছবি। সেই অবস্থাতেই ওখানে ভোট হয়েছে। কেন তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নেয়নি? প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করার অভিযোগ নির্বাচন কমিশন স্বীকার করেনি। সম্প্রতি কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে একটি লম্বা ব্যানার লাগায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেখানে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকও ছিল। নীচে লেখা—‘দাদার গর্জন’। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা রনি ঘোষের অভিযোগ, ‘মঙ্গলবার এই ব্যানার দেখে নীচে নেমে আসেন উপাচার্য। আর তা সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন।’
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর গড়ে ভোটের দিন রাজ্য পুলিশ থাকছে নগণ্য, নির্বাচন কমিশনের তথ্যে গুঞ্জন
তখন উপাচার্যকে পাল্টা আমরা বলেছিলাম, বাকিদেরও পোস্টার ব্যানার সরাতে হবে। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। আর তারপরই সরিয়ে ফেলা হয় ওই ব্যানার। বুধবার নির্বাচন কমিশনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ইমেলে অভিযোগ জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বেছে বেছে শুধু তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ব্যানার–পোস্টার সরানো হয়েছে। বাকি দলের পোস্টার সরানো হয়নি। রাজ্যপাল নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আমি ভোট প্রচারের বাইরে রাখতে চাইছি। এটা পঠনপাঠনের জায়গা। কেউ আমাকে অন্য দলের এমন ব্যানার–পোস্টার দেখালে সেটাও সরানো হবে। এখানে পোলিং বুথ হয়। নির্বাচন কমিশনের অফিসাররাও ক্যাম্পাসে এসে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করেছেন।’
এতকিছুর পরও বিতর্ক কিন্তু থামেনি। কারণ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা রনির পাল্টা বক্তব্য, ‘ক্যাম্পাসে পোস্টার মেরেছে এসএফআই। সেটা উপাচার্য দেখতে পাননি? আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি রাজনৈতিক বিরোধিতা থেকেই এই কাজ করেছেন কর্তৃপক্ষ।’ উপাচার্য জানান, তাঁর নির্দেশেই রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে ব্যানার খোলা হয়। আবার সামনে নিয়ে আসা হয় আইআইইএসটি’র প্রসঙ্গ। হাওড়া কেন্দ্রের দু’টি পোলিং বুথ হয় এখানে। কিন্তু ক্যাম্পাসে বিজেপির দাপাদাপি নিয়ে নির্বাচন কমিশন কেন কিছু করল না? প্রশ্ন উঠেছে। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই নিয়ে কেউ অভিযোগ জানালে খতিয়ে দেখা হবে।