ব্যারাকপুর থেকে বসিরহাট যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। সুতরাং বিরাট দূরত্ব তেমন নয়। সেখানে আজ, রবিবার ব্যারাকপুরে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসে জনসভা করলেও সন্দেশখালি আন্দোলনের মুখ রেখা পাত্রের নাম একবারও নিলেন না। অথচ বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে রেখা পাত্রকে প্রার্থী করা হয়েছে। এমনকী রেখা পাত্রকে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কথা হয়েছিল দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ। আর পর পর দুটি সন্দেশখালি স্টিং অপারেশন ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন রেখা পাত্রের নাম। রবিবাসরীয় নির্বাচনী সভায় সেই রেখা পাত্রের নাম মুখেও আনলেন না প্রধানমন্ত্রী।
তবে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাননি। তা নিয়ে নানা হুঙ্কার ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই ব্যারাকপুর এবং বসিরহাট প্রায় লাগোয়া লোকসভা কেন্দ্র। অথচ ব্যারাকপুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তোলেন প্রধানমন্ত্রী। শাহজাহান বাহিনীর দৌরাত্ম্য নিয়েও সরব হন। কিন্তু দৃশ্যতই গোটা বক্তব্যে সন্দেশখালি ইস্যু যেন একটু ছুঁয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। সন্দেশখালি পার্ট–১ এবং সন্দেশখালি পার্ট–২ প্রকাশ হওয়ার পর বেকায়দায় পড়েছে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব। তাই ইস্যু তুললেও প্রধানমন্ত্রীর মুখে বসিরহাট বিজেপি প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। সন্দেশখালি পার্ট–২ এই ভিডিয়ো’তে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘নির্যাতনের প্লট সাজাতে ৭২ জন মহিলাকে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল।’ আর পার্ট–১ ভিডিয়ো’তে গঙ্গাধর বলেছিলেন, টাকা মোবাইল দিয়ে সাহায্য করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন: বিজেপি দেশে কত আসন পাবে? বাংলায় তৃণমূলের ফল কেমন হবে? তোলপাড় করা সমীক্ষা কুণালের
আজ ভাটপাড়ার জগদ্দলে নির্বাচনী সভা থেকে নরেন্দ্র মোদী সন্দেশখালির ভিডিয়ো নিয়ে কোনও কথা বলেননি। এই পার্ট–১ এবং পার্ট–২ ভিডিয়ো যাচাই করে দেখেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ডিজিটাল। রাজ্য বিজেপি ওই ভিডিয়োকে ভুয়ো বললেও প্রধানমন্ত্রী কিন্তু নীরবই থাকলেন। ২৭ মিনিটের বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্দেশখালিতে কী হচ্ছে, সেটা সারা দেশ দেখছে। তৃণমূলের পুলিশ ওদের বাঁচিয়েছে। নতুন খেলা শুরু করেছে। ওদের গুণ্ডা সন্দেশখালির বোনেদের ভয় দেখাচ্ছে। কারণ অত্যাচারীর নাম শাহজাহান শেখ। তৃণমূল ওঁকে ক্লিনচিট দিতে চাইছে।’ এই নতুন খেলা বলতে স্টিং অপারেশনের কথা বোঝালেও প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী রেখা পাত্রের নাম নেননি। যা সবাইকে ভাবাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই সন্দেশখালি স্টিং অপারেশনের পার্ট–১ সামনে আসতেই বেসামাল হয়ে পড়েছিল বঙ্গ–বিজেপি। এবার তা আরও এক কাঠি উপরে হয়ে এসেছে পার্ট–২। সেখানে গঙ্গাধর কয়ালের মদের খরচ, ৭২ জন মহিলাকে দু’হাজার টাকা দেওয়া এবং কত পরিমাণ পিস্তল ও কার্তুজ লাগবে সে কথা উঠে এসেছে। তাতেই স্নায়ুর চাপ বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সন্দেশখালি ইস্যুকে সামনে রেখে বিজেপি আন্দোলন গড়ে তুলে এখন বেসামাল হয়ে পড়েছে। এখন সন্দেশখালির ভিডিয়ো সামনে আসা এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগে রাজভবনের বিরুদ্ধে সমালোচনা দানা বেঁধেছে। যা নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই সন্দেশখালির ব্যাপারে কিছুটা রক্ষণাত্মকই পদক্ষেপ করছে বিজেপি।