রাত পোহালেই শনিবার বাংলায় ষষ্ঠ দফার লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব হবে। এবার আটটি আসনে ভোট হবে। দু’দিন আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন, বিজেপি এখানে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করবে। তা রুখে দিয়ে আপনাদের ভোট দিতে হবে। কিন্তু তার পরদিনই নন্দীগ্রামে খুনের ঘটনা ঘটল। ষষ্ঠ দফায় ভোট হবে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি এবং তমলুক আসনে। সুতরাং এই ঘটনার পর বেশ কড়া নিরাপত্তা রাখা উচিত নির্বাচন কমিশনের। এই আটটি আসনে মোট ৯১৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর এবং প্রায় ২৯ হাজার ৫২৪ রাজ্য পুলিশ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, অন্যান্য আসনে ২–৬ হাজার রাজ্য পুলিশ মোতায়েন থাকছে। সেখানে শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় কেন রাজ্য পুলিশ থাকছে মাত্র ৭১৪ জন? তাও এই ঘটনার পর।
কাঁথি এবং তমলুক শুভেন্দুর কাছে প্রেস্টিজ ফাইট। কারণ তিনিই এখানের প্রার্থীর নাম ঠিক করে পাঠিয়ে ছিলেন। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস মজবুত সংগঠন নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আগের মতো আর কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না নেতারা। তাই তাঁরা চান হিংসা ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন হোক। এখনও পর্যন্ত হওয়া প্রত্যেকটা দফার ভোটেই রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। আর তেমন কোনও গোলমাল হয়নি। সঙ্গে রাখা হয়েছিল হাজার হাজার রাজ্য পুলিশ। কিন্তু ষষ্ঠ দফার নির্বাচন কি শান্তিপূর্ণ হবে? উঠছে প্রশ্ন। বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুরের দুই আসনে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, শনিবার আটটি আসনের জন্য মোট ৯১৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ২৯,৪২৮ রাজ্য পুলিশ থাকছে।
আরও পড়ুন: সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী যোগ দিলেন তৃণমূলে, অস্বস্তির মাঝে ভাঙনে চাপে পদ্মশিবির
লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুটি লোকসভা আসনের জন্য এত কম সংখ্যক রাজ্য পুলিশ থাকা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তাহলে কি জায়গা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বিজেপিকে? এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে মাত্র ৭১৪ জন। যেখানে ইতিমধ্যেই একটা খুন হয়ে গিয়েছে। তাহলে কেন এমন সিদ্ধান্ত? কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ উঠেছে। তার পরও কম পুলিশ ফোর্স রাখা হয়েছে। অথচ বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর দুটি আসনের জন্য রাজ্য পুলিশের সংখ্যা ৬৫২১ জন। ঝাড়গ্রাম জেলায় রাজ্য পুলিশ মোতায়েন থাকছে ২৪৩৬ জন। তাহলে তমলুক ও কাঁথির ক্ষেত্রে মাত্র ৭১৪ জন পুলিশ কেন?
ষষ্ঠ দফায় ভোট রয়েছে—তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে ২১৮ কোম্পানি এবং রাজ্য পুলিশ থাকছে ৬,৯০১ জন। পুরুলিয়া জেলায় ১৩৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ৫,৪৬৪ জন রাজ্য পুলিশ থাকবে। তমলুক লোকসভার অন্তর্গত নন্দীগ্রাম বিধানসভার সোনাচূড়ায় এক মহিলা বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেরে বৃহস্পতিবার থেকেই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দফায় দফায় বিক্ষোভ, অবরোধ, ভাঙচুর হয়। জেলা থেকে রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। তারপরও পুলিশের সংখ্যা কম কেন? উঠছে প্রশ্ন।