ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি–সিপিএমকে আক্রমণ করেছেন। ছত্রধর মাহাতোর সাহায্য স্বীকার করেছেন তিনি। ষষ্ঠ দফায় মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন বলে। তবে এবার লোকসভা নির্বাচনে এখানে কুড়মি ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাঁদের সঙ্গে নবান্নে একদা বৈঠক করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের দাবিদাওয়া রাজ্য সরকার মেনে নেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর সেই মর্মে কাজও কিছু করেছিলেন। সেদিক থেকে কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে আসার কথা। এটা নিয়েই মাথাব্যথা হয়েছে বিজেপির। কারণ এই আসনে কুড়মিদের সমর্থনে দু’জন প্রার্থী আছেন। যাঁরা ভোট কাটলে সুবিধা হবে তৃণমূল কংগ্রেসের।
এদিকে ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে কুড়মি সমাজের নির্দল প্রার্থী বরুণ মাহাতো এবং কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সূর্য সিং বেশরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সরে এসেছেন রাজেশ মাহাতোর পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজ। বিজেপির দাবি, এই দুই নির্দল প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেসের ইন্ধনে লড়াই করতে নেমেছেন লোকসভা নির্বাচনে। আর তাই এমন আবহে আশঙ্কা থেকে শিলদায় বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডুর সমর্থনে প্রচারে এসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কুড়মি সমাজের অনেক নেতা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কুড়মি সমাজ ওদের সঙ্গে নেই। কুড়মিরা আমাদের সঙ্গে আছে।’
আরও পড়ুন: ‘আমি কংগ্রেসের ভিতরের গল্পটা আপনাদের বলছি’, বড় তথ্য সামনে আনলেন মোদী
অন্যদিকে শুভেন্দুর দাবির সঙ্গে যে বাস্তবের মিল নেই তা বোঝা যায় কুড়মি সমাজের প্রার্থীদের বক্তব্যে। এমনকী বিরোধী দলনেতাও যথেষ্ট আশঙ্কিত। তাই শিলদার সভায় শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘ভোট কেটে তৃণমূল কংগ্রেসকে সুবিধা করে দিতেই দু’টি কুড়মি সংগঠন দু’জন নির্দল প্রার্থী খাড়া করেছে। আবার সূর্য সিং বেসরা বলেছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান। গরুর গাড়ির হেডলাইট যে দিন লাগবে। সে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হবেন।’ এই কথা মুখে বললেও কুড়মিরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন বা বিজেপির সঙ্গে আছেন এই দাবি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুড়মি ভোট ভাগ হতেই কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত কুড়মিরা দখল করে। এতে সুবিধা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। তাই কুড়মি ভোটকে বিজেপির দিকে টানতে শুভেন্দু বলেছেন, ‘কুড়মি সমাজ তৃণমূলের সঙ্গে নেই। আমার সঙ্গে নেতাদের কথা হয়েছে। ভাইপো পুলিশকে দিয়ে কুড়মি নেতাদের জেল খাটিয়েছে।’
কিন্তু এখানে পা রেখে নন্দীগ্রামের বিধায়ক বুঝতে পেরেছেন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। তাই অলআউট খেলতে শুরু করেন। শুভেন্দুর কথায়, ‘আপনারা কি পচা পুকুরে ডুববেন? তৃণমূল ছেঁদো পুকুর। কালীপদবাবু জিতে আপনি কী করবেন? সংসদে গিয়ে কি হাত–পা নাড়বেন? কালীপদবাবুকে জিজ্ঞাসা করবেন আপনার প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? পিসি কোনওদিন প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। আপনাদের বাড়ি বাড়ি জল এসেছে? এই সরকার কেন্দ্রের ৮ হাজার কোটি টাকা খেয়েছে। তবুও জল পাচ্ছেন না। তৃণমূলের বহু লোক আমাদের হয়ে কাজ করছে। ৪ তারিখের পর তাঁদের নাম প্রকাশ করব।’ এই মন্তব্যের পাল্টা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘ঝাড়গ্রাম জেলায় এটা হাস্যকর। শিলদায় লোক হয়নি বলে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।’