লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়ে ফলাফল প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে ঘাসফুল ঝড় অব্যাহত বাংলায়। বিজেপির জায়গা যে বাংলা নয় তা বারবার প্রমাণ হয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচন, পুরসভা নির্বাচন, পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন প্রমাণ করেছে বাংলার মানুষ দিদির গ্যারেন্টিতেই ভরসা রাখছেন। এখানে মোদীর গ্যারেন্টি বা ম্যাজিক কোনওটিই কাজ করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়–অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগলবন্দিতে বাংলায় বাজিমাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই ফলাফল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপরে ভর করেই বলে মনে করা হচ্ছে। আর তার জেরেই জঙ্গলমহলে বিজেপিকে পিছনে ফেলল তৃণমূল কংগ্রেস।
২০১৯ সালে জঙ্গলমহলে ভাল ফল করে বিজেপি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। এই কারণে ক্ষুব্ধ ছিল মানুষজন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে মানুষের মন ঘুরতে শুরু করে। আর মানুষজন যুক্ত হয় রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের সঙ্গে। তাতে অনেকটা উপকৃত হন জঙ্গলমহলের মানুষজন। আর তাই জঙ্গলমহলের মানুষ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেতা বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর তিনটি আসন এবার হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। মুখ রেখেছে শুধু পুরুলিয়া আসনটি। এখানের কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোট পেতে ব্যাপক চেষ্টা করেন বিজেপির নেতারা। তবে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তা কোনও কাজে আসেনি।
আরও পড়ুন: ‘সতীর্থ কেষ্টদার সঙ্গে দেখা করতে তিহাড়ে যাব’, তারাপীঠে পুজো দিয়ে ইচ্ছাপ্রকাশ শতাব্দীর
এখানে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প ভরিয়ে দিয়েছে তাদের ভোট ভাণ্ডার। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের যুক্তি, ‘জঙ্গলমহলের শান্তি ফিরে এখন উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল–কলেজ, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী সব পেয়েছেন মানুষ। এমনকী ডিসেম্বর মাসে আবাস যোজনা প্রকল্পে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে টাকা দেওয়া হবে। তাই মানুষ দিদির গ্যারেন্টিতেই ভরসা রেখেছেন। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের কাছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বেড়ে এক হাজার টাকা একটা বড় ব্যাপার। এতে তাঁদের জীবনযাত্রাতেও একটা পরিবর্তন এসেছে।’
এখানে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হেরেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছিলেন, নিজের অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দিতে। জঙ্গলমহলের মানুষ তাই করেছে। কারণ বাঁকুড়ার বিজেপি নেতা তথা একদা মন্ত্রী সুভাষ সরকার কোনও কাজ করেননি। তাতে মানুষ ক্ষিপ্ত ছিল। সেখানে রাজ্য সরকারের থেকে পরিষেবা মিলছে। তাই আর বিজেপি নেতাদের সমর্থন করেননি মানুষজন। এখানে আরও একটা বিষয় কাজ করেছে। সেটি হল—ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করার ইস্যু জঙ্গলমহলে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। আতঙ্কে ভোটবাক্স উলটে দিয়েছেন জঙ্গলমহলের মানুষজন। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘মানুষ চাওয়া পাওয়ার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। একটা বিশেষ সম্প্রদায় একেবারেই ভোট দেয়নি বিজেপিকে। সংখ্যালঘু এলাকায় কয়েকটি বুথও আছে যেখানে শূন্য, সাত, আট, দশটি ভোট পেয়েছে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।’